ইতিহাস
উসমানীয় সালতানাতে যেভাবে পবিত্র কুরবানী উনার ঈদ বিশেষভাবে উদযাপন করা হতো
, ০৮ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৬ আউওয়াল, ১৩৯৩ শামসী সন , ০৫ জুন, ২০২৫ খ্রি:, ২৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) ইতিহাস
আর মাত্র কিছুদিন পরেই বিশ্বব্যাপী পালিত হবে পবিত্র কুরবানীর ঈদ। মুসলমানরা এই দিনে পশু কুরবানী করবেন মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক অর্জনের জন্য। পাশাপাশি, সম্মানিত শরীয়ত উনার রীতিনীতি পালনের মাধ্যমে এই দিনে মুসলমানগণ খুশি প্রকাশ করে থাকেন। পূর্বের মুসলমান শাসনগুলোতেও পবিত্র কুরবানীর ঈদ বিশেষ রীতিনীতির সাথে পালিত হতো। বিশেষ করে পবিত্র এই দিবস উনার সাথে ঐতিহ্যবাহী উসমানীয় সালতানাতের বিশেষ কিছু তাহযীব জড়িত রয়েছে।
তুরস্কে পবিত্র কুরবানীর ঈদ ‘কুরবান বাইরাম’ নামে পরিচিত। উসমানীয়রা পবিত্র কুরবানীর ঈদ অত্যন্ত জাকজমক এবং ভাবগাম্ভীর্যের সাথে পালন করতেন। উসমানীয় দরবারে পবিত্র কুরবানী উপলক্ষ্যে বিশেষ সাজসজ্জা করা হতো। উসমানীয় সুলতানগণ পবিত্র কুরবানী উপলক্ষ্যে দরিদ্র জনগনের মধ্যে উপহার সামগ্রী বিতরন করতেন। এদিন, সুলতান সরাসরি সাধারণ জনগনের সাথে দেখা করতেন এবং তাদের সুবিধা-অসুবিধার বিষয়গুলো সমাধানের চেষ্টা করতেন। গ্রাম শহরগুলোতে খুশির আমেজ বিরাজ করতো।
উসমানীয় সালতানাতে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দিবসসমূহ পালনের রীতি থাকলেও কনস্ট্যান্টিনোপল বিজয়ী সুলতান মুহম্মদ আল ফাতিহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এই দিবসসমূহ পালন করা বাধ্যতামূলক করার জন্য আইন প্রনয়ন ও তার বাস্তবায়ন করেন। তিনি উক্ত দিবসসমূহ পালনের জন্য রাজকোষ থেকে বরাদ্দ অনুমোদনের রীতিও চালু করেন।
পবিত্র কুরবানীর ঈদের দিন উসমানীয় সুলতান ঈদের নামাযের উদ্দেশ্যে সাধারণ মানুষ এবং প্রশাসনীয় সকল কর্মকর্তাকে নিয়ে হাজিয়া সোফিয়া কিংবা নীল মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হতেন। সাধারণ মানুষ এ সময় সুলতানের সাথে কুশল বিনিময় করতেন, সালাম বিনিময় করতেন। এভাবে পুরো বহর মসজিদ পর্যন্ত পৌঁছে যেতো। মসজিদে সাধারণ মুসলমানদের সাথে মিলে নামাজ এবং মুয়ানাকা করতেন সুলতান ও পাশাগণ। নামায শেষে পবিত্র কুরবানী উনার উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত হাজার হাজার মেষ-দুম্বা মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কুরবানী করা হতো এবং তা সাধারণ মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেয়া হতো। হাজার হাজার কুরবানীর মধ্যে প্রথমেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ হতে কুরবানী দেয়া হতো। এরপর পর্যায়ক্রমে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং ওলীআল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের নাম মুবারকে কুরবানী দেয়া হতো। এ দিনে উসমানীয়দের তৈরী করা মাদরাসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ উপহার সামগ্রী এবং অর্থ পাঠানো হতো। পবিত্র কুরবানী উপলক্ষ্যে বিশেষ ছুটি ঘোষণা করা হতো।
পবিত্র কুরবানীর দিন উসমানীয় প্রশাসনের সামরিক কর্মকর্তা এবং বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে বোনাস প্রদান করা হতো। প্রত্যেক সাধারণ সৈন্যদের বোনাসের পাশাপাশি গোশত, রুটি, উন্নতমানের হালুয়া ইত্যাদি খাওয়ানো হতো। হাজার হাজার সৈন্য এবং পাশাদের একত্রিত করে মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে মুনাজাতের আয়োজন করা হতো। বিশেষভাবে পবিত্র দরুদ শরীফ এবং মিলাদ শরীফ পাঠ করা হতো।
পবিত্র কুরবানী উনার দিনে কারাবন্দীদের জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হতো। পরিবার পরিজনদের সাথে দীর্ঘ সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হতো। যেসব বন্দী তাদের সাজার দুই তৃতীয়াংশ সাজা ভোগ করে ফেলেছে তাদের ক্ষমা করে খালাস প্রদান করা হতো। এসকল কার্যক্রমই হতো উসমানীয় সুলতানের নির্দেশে এবং তত্ত্বাবধানে।
-মুহম্মদ শাহ জালাল।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কেমন ছিলো মোঘল সালতানাতের গোলন্দাজ এবং অশ্বারোহী বাহিনী
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পান্থনিবাস ও সরাইখানা নির্মাণে মুসলমানদের অনবদ্য অবদান
২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৯)
১৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুসলমানদের শিক্ষা-দীক্ষার বিরোধিতায় বিধর্মী-অমুসলিমরা
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাংলার হিন্দু ধনিক-বণিক, বেনিয়া শ্রেণী, ব্যাংকার প্রভৃতির সাথে এক গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মুসলিম
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইউরোপকে যেভাবে সমৃদ্ধ করেছেন আফ্রিকান মুসলমানরা
১২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
গুজরাটের সুলতান মুজাফফর শাহের পরহেজগারিতা এবং ভ্রাতৃত্ববোধ
০২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৭)
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কেমন ছিলেন ইসলামী ইতিহাসের প্রথম আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঐতিহাসিক মুসলিমবাগ ঈদগাহ-ই কি আজকের ঢাকেশ্বরী মন্দির?
২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
১২টি চন্দ্রমাসের নাম এবং নামকরণের সার্থকতা (২)
২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ঐতিহাসিক খেমকারান যুদ্ধ: যেভাবে বাংলাদেশের জাতীয়তাবোধের উদ্ভব
২৫ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)












