ইলমে তাছাওউফ
একজন কামিল মুর্শিদ বা শায়েখ উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ফরয (১)
, ২৯ রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৩ তাসি’, ১৩৯১ শামসী সন , ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ২৭ মাঘ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) ইলমে তাছাউফ

স্মরণযোগ্য যে, অন্তর পরিশুদ্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ইলমে তাছাওউফ অর্জন করতে হলে এবং দায়িমী বা সার্বক্ষণিকভাবে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র যিকিরে মশগুল থাকার জন্য বা হুযূরী ক্বলব অর্জন করতঃ বিলায়েতে আমুল খাছ হাছিল করতে হলে অবশ্যই একজন কামিল মুর্শিদ বা শায়েখ বা পীর ছাহিব ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করতেই হবে। কারণ কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করা ব্যতীত ইলমে তাছাওউফ অর্জন করা কখনই সম্ভব নয়। আর ইলমে তাছাওউফ ব্যতীত অন্তর পরিশুদ্ধ করা কখনই সম্ভব নয় এবং অন্তর পরিশুদ্ধ করা ব্যতীত হুযূরী ক্বল্ব্ হাছিল করা বা বিলায়েতে আমুল খাছ হাছিল করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়।
তাই অনুসরণীয় হযরত ইমাম-মুজতাহিদ ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আলোকে ইজতিহাদ করতঃ রায় বা ফতওয়া দেন যে, ইছলাহ বা পরিশুদ্ধতা লাভ করার মাধ্যমে হুযূরী ক্বল্ব্ হাছিল করতঃ বিলায়েতে আমুল খাছ হাছিল করার জন্য একজন কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করা ফরয। কেননা এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, ইলমে তাছাওউফ অর্জন করার মাধ্যমে অন্তর পরিশুদ্ধ করতঃ হুযূরী ক্বল্ব্ হাছিল করা তথা অন্ততঃপক্ষে বিলায়েতে আমুল খাছ হাছিল করা ফরয।
এ ফরয ততক্ষণ পর্যন্ত আদায় করা সম্ভব হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত একজন কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত না হবে। তাই বাইয়াত গ্রহণ করাও ফরয।
এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরে মাযহারী’ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে যে-
كُلُّ مَا يَتَرَتَّبُ عَلَيْهِ الْاَثَرُ مِنَ الْفُرُوْضِ الْاَعْيَانِ فَهُوَ فَرْضٌ عَيْنٌ
অর্থ: “যে কাজ বা আমল ব্যতীত ফরযসমূহ আদায় করা সম্ভব হয় না, উক্ত ফরযগুলোকে আদায় করার জন্য সে কাজ বা আমল করাও ফরয।”
সম্মানিত হানাফী মাযহাবের মশহূর ফিক্বাহ্’র কিতাব ‘দুররুল মুখতার’ কিতাবের মধ্যে উল্লেখ আছে যে-
مَا لَا يَتِمُّ بِهِ الْفَرْضُ فَهُوَ فَرْضٌ
অর্থ: “যে আমল ব্যতীত কোনো ফরয পূর্ণ হয় না, সে ফরয পূর্ণ করার জন্য ওই আমল করাও ফরয।”
উল্লেখিত উছূলের ভিত্তিতে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, ইলমে তাছাওউফ যেহেতু অর্জন করা ফরয আর তা যেহেতু কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ব্যতীত অর্জন করা সম্ভব নয়, সেহেতু একজন কামিল মুর্শিদ অর্থাৎ যিনি সর্বদা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র যিকিরে মশগুল উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করাও ফরয।
শুধু তাই নয়, কামিল মুর্শিদ ক্বিবলা বা ওলীআল্লাহ উনাদের ছোহবত লাভ করা বা উনাদেরকে অনুসরণ করার নির্দেশ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যেই রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَكُوْنُوْا مَعَ الصَّادِقِيْنَ
অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো এবং ছাদিক্বীন বা সত্যবাদীগণ উনাদের সঙ্গী হও।” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৯)
উপরোক্ত আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ছাদিক্বীন দ্বারা উনাদেরকেই বুঝানো হয়েছে, যাঁরা যাহির-বাতিন, ভিতর-বাহির, আমল-আখলাক, সীরত-ছূরত, ক্বওল-ফে’ল সর্বাবস্থায় সত্যের উপর ক্বায়িম রয়েছেন। অর্থাৎ যাঁরা ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাওউফ উভয় ইলমে তাকমীলে (পূর্ণতায়) পৌঁছেছেন।
এক কথায় যাঁরা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার মত মুবারক অনুযায়ী এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালী, খাতামুন নাবিয়্যীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথ মুবারক অনুযায়ী হয়েছেন এবং সর্বদা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র যিকিরে মশগুল। অর্থাৎ যাঁরা কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনাদেরকে বুঝানো হয়েছে। (চলবে)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৬)
২৬ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৫)
২৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪)
২৩ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (২)
২১ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (১)
২০ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩৬)
০৮ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩৫)
০৭ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩৪)
০৬ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩২)
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রসঙ্গ: ইলমে তাছাউফ উনার দৃষ্টিতে বাইয়াত হওয়া সম্পর্কে
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)