ঐতিহাসিক স্থান ও যিয়ারতগাহসমূহ:
, ২০ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২০ ছানী আ’শার, ১৩৯২ শামসী সন , ১৯ মে, ২০২৫ খ্রি:, ৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) ইতিহাস
১৮৩১ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে বালাকোটে শুধু একটি জিয়ারতগাহ ছিলো। উক্ত জিয়ারতগাহ হচ্ছে, বালা পীরের মাজার। বালা পীরের মাজার কুনহার নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত। ইহা বালাকোট হতে দেখা যায়। বালাকোটের যুদ্ধের পর সেখানে কয়েকটি ঐতিহাসিক স্থান ও কয়েকটি জিয়ারতগাহ রয়েছে। নিম্নে তা বর্ণনা করা হলো-
(১) মসজিদেই বালা- বা মসজিদেই কেল্লা:
উক্ত মসজিদ মূল বালাকোটের দক্ষিণাংশে অবস্থিত। যুদ্ধের পূর্বে উক্ত মসজিদে হযরত শাহ ইসমাঈল শহীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং অন্যান্য মুজাহিদ ছলাত আদায় করতেন। যুদ্ধের দিন হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উক্ত মসজিদ হতেই বের হয়ে শিখদের উপর হামলা চালিয়েছিলেন।
(২) মসজিদ-ই যেরীন:
শিখদের উপর হামলা চালানোর সময়ে হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মসজিদ-ই বালা হতে বের হয়ে অল্প সময়ের জন্য উক্ত মসজিদেও অবস্থান করেছিলেন।
(৩) মসজিদ-ই বালা এর নিম্নে অবস্থিত দালান:
উক্ত দালানের অস্তিত্ব আর বর্তমানে নেই। তবে স্থানীয় লোকদের নিকট হতে এর স্থানটি জানা যায়।
(৪) ওয়াসিল খানের হাবেলী:
উক্ত হাবেলী মসজিদ-ই বালার নিকটেই অবস্থিত ছিলো। এর পূর্বের অবস্থা আর বর্তমানে নাই। তবে এর স্থানটি সকলের নিকট জ্ঞাত রয়েছে। বালাকোটে অবস্থানকালে হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উক্ত হাবেলীতেই অবস্থান করতেন।
(৫) রণক্ষেত্র:
মূল রণক্ষেত্রটি বালাকোট জনপদ হতে সাত বানে নামীয় ঝরনা বরাবর হয়ে উত্তর ও পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত এবং সেখান হতে মেট্টী কোট ঝরনা ও মেট্টী কোট টিলার পাদদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত। বালাকোটের উত্তর ও পূর্ব দিকেও বেশ কয়েকটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিলো। সর্বাধিক তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিলো মেট্টী কোট টিলার নিকটে ও ঝরনার মধ্যে।
(৬) শহীদগণ উনাদের মাজারসমূহ:
বিভিন্ন স্থান শহীদগণ উনাদের মাজার বলে নির্দেশিত হয়ে থাকে। তবে শহীদ উনাদের বৃহত্তম কবরস্থান মেট্টী কোট টিলার নিকটে ঝরনার মোড়ে অবস্থিত।
(৭) হযরত শাহ ইসমাঈল শহীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার শাহাদাত লাভের স্থান:
স্থানীয় বর্ণনা হতে জানা যায় যে, হযরত শাহ ইসমাঈল শহীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যুদ্ধ করতে করতে পিছন দিকে সরতেছিলেন। উনার জিহাদের সঙ্গী আরবাব বাহরাম খানও উনার সঙ্গে ছিলেন। উনারা উভয়ে সাত বানে ও বারণা ঝরনাদ্বয় পার হয়ে বালাকোটের উত্তর-পূর্ব দিকে কিছু দূরে পৌঁছার পর শহীদ হন। উনাদের উভয়কেই সেই স্থানের নিকটেই দাফন করা হয়েছিলো। আরবাব বাহরাম খানের ভ্রাতুষ্পুত্র ও জামাতা মুহম্মদ খান বালাকোটের বিয়োগান্তক ঘটনার ছয় মাস পর নিজ পিতা ও শশুরের লাশ কবর হতে বের করে নিয়ে যান। তখনকার উচ্চাংশ ও নিম্নাংশের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত কবরস্থানে উনার কবর বিখ্যাত ও পরিচিত হয়ে রয়েছে।
হযরত শাহ ইসমাঈল শহীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কবর বালাকোটের পূর্বোক্ত স্থানেই রয়ে গেছে। ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে, উনার কবরের জন্য সেখানে পাকা চিহ্ন দিয়ে দেয়া হয়েছে। সম্ভবত ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে এর চতুষ্পার্শ্বে একটি ক্ষুদ্র বেষ্টনী নির্মাণ করে দেয়া হয়। স্থানটি কৃষিজমির মধ্যে এখনও চিহ্নিত ও পরিচিত হয়ে রয়েছে। জিয়ারতের জন্য যেতে হলে ঝরনা অতিক্রম করে সামান্য পথ পায়ে হেঁটে সেখানে পৌঁছতে হয়। (অসমাপ্ত)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কেমন ছিলো মোঘল সালতানাতের গোলন্দাজ এবং অশ্বারোহী বাহিনী
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পান্থনিবাস ও সরাইখানা নির্মাণে মুসলমানদের অনবদ্য অবদান
২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৯)
১৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুসলমানদের শিক্ষা-দীক্ষার বিরোধিতায় বিধর্মী-অমুসলিমরা
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাংলার হিন্দু ধনিক-বণিক, বেনিয়া শ্রেণী, ব্যাংকার প্রভৃতির সাথে এক গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মুসলিম
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইউরোপকে যেভাবে সমৃদ্ধ করেছেন আফ্রিকান মুসলমানরা
১২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
গুজরাটের সুলতান মুজাফফর শাহের পরহেজগারিতা এবং ভ্রাতৃত্ববোধ
০২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৭)
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কেমন ছিলেন ইসলামী ইতিহাসের প্রথম আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঐতিহাসিক মুসলিমবাগ ঈদগাহ-ই কি আজকের ঢাকেশ্বরী মন্দির?
২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
১২টি চন্দ্রমাসের নাম এবং নামকরণের সার্থকতা (২)
২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ঐতিহাসিক খেমকারান যুদ্ধ: যেভাবে বাংলাদেশের জাতীয়তাবোধের উদ্ভব
২৫ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)












