স্থাপত্য-নিদর্শন
ঐতিহ্যবাহী গোর-এ-শহীদ ঈদগাহ ময়দান
, ২৩ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৩ ছানী আ’শার, ১৩৯২ শামসী সন , ২২ মে, ২০২৫ খ্রি:, ৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) স্থাপত্য নিদর্শন
দিনাজপুরের গোর-এ-শহীদ ঈদগাহ ময়দান। শুধু আয়তনে নয়, ইতিহাসেও অনন্য এক ময়দান। ‘আজ পড়বি ঈদের নামাজ রে মন সেই সে ঈদগাহে/যে ময়দানে সব গাজী মুসলিম হয়েছে শহীদ। ’ কাজী নজরুল ইসলামের এই উক্তি ধারণ করে এমন ঈদগাহ বর্তমানে বাংলাদেশে কমই আছে, কারণ বেশিরভাগ ঈদগাহে শহীদ কিংবা গাজীদের স্মৃতি নেই। কিন্তু বাংলাদেশ এবং উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ঈদগাহ গোর-এ-শহীদ (ঘোড়া শহীদ) সত্যিকারভাবেই সূফী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাবনাকে ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে। কেননা, এ গোর-এ-শহীদ ময়দানে যে শায়িত আছেন ত্রয়োদশ শতকের এক আউলিয়ায়ে কিরাম, যিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে এই ময়দানেই শহীদ হন।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠানের গৌরব দীর্ঘকাল ধরে ছিলো কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের। কিন্তু গত কয়েক বছরে শোলাকিয়াকে ছাপিয়ে এ কৃতিত্ব নিজের করে নিয়েছে গোর-এ-শহীদ নামক দিনাজপুরের ঐতিহাসিক ময়দানটি। এ ময়দানের নামকরণ হয়েছে ত্রয়োদশ শতকের বিখ্যাত হযরত শাহ সূফী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নামে।
বঙ্গে পবিত্র দ্বীন ইসলাম আগমনের একদম প্রাথমিক পর্যায়ে হযরত শাহ সূফী রহমতুল্লাহি আলাইহি পবিত্র দ্বীন ইসলাম প্রচার করতে দিনাজপুর অঞ্চলে আগমন করেন।
হযরত শাহ সূফী রহমতুল্লাহি আলাইহি ঘোড়ায় চড়ে বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করতেন এবং মানুষের মাঝে পবিত্র দ্বীন ইসলাম প্রচার করতেন। কিন্তু তৎকালীন সে এলাকার শাসক নিজ স্বার্থের জন্য হুমকি ভেবে হযরত শাহ সূফী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে শহীদ করার উদ্যোগ নেয়।
মূলত সেই এলাকার শাসক ইসলামবিদ্বেষী হওয়ায় সে কোনভাবেই চায়নি যে পবিত্র দ্বীন ইসলাম সেখানে প্রতিষ্ঠিত হোক। সে অঞ্চলে সে শাসকের সৈন্যরা একদিন ঘোড়ার ওপর থাকা অবস্থাতেই এই মহান ছূফীকে শহীদ করে।
হযরত শাহ সূফী রহমতুল্লাহি আলাইহি ঘোড়ার ওপর শহীদ হওয়ার পর থেকেই মূলত তিনি ঘোড়া শহীদ নামে ওই অঞ্চলে পরিচিত হতে থাকেন। জীবিত হযরত শাহ সূফী রহমতউল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে ঘোড়া শহীদ যেন অধিকতর শক্তিশালী হয়ে ওঠেন। উনাকে যে স্থানে শহীদ করা হয়, সে স্থানের একটু পাশেই উনাকে দাফন করা হয়।
কালক্রমে ঘোড়া শহীদের মাজারটি হয়ে উঠে দিনাজপুর অঞ্চলের মুসলমানদের একত্রিত হওয়ার স্থান। আশপাশের মুসলিমরা ঈদ জামাত এবং অন্যান্য দ্বীনি উৎসবে এ মাজার এবং মাজার সংলগ্ন ময়দান প্রাঙ্গণে একত্রিত হতে থাকেন। পাশাপাশি লোকমুখে উচ্চারিত হতে হতে ঘোড়া শহীদ হয়ে যায় গোর-এ-শহীদ। ঘোড়া শহীদ ময়দান অবশ্য কালের বিবর্তনে তার জৌলুস হারিয়ে ফেলে অনেকটুকু। যে ঘোড়া শহীদ ময়দানকে কেন্দ্র করে সুলতানি, মোঘল, ব্রিটিশ আমলে মুসলিমরা বিভিন্ন সময়ে ইছালে ছওয়াবের মাহফিল করতো, একটা সময়ে এসে এগুলো প্রায় বন্ধ যায়।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এরকম অসংখ্য পীর আউলিয়ায়ে কিরাম রহমত্ল্লুাহি আলাইহিম উনাদের স্মৃতি ছড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত সংরক্ষণের অভাবে সেসব স্থান অনেকটাই ইতিহাস থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।
-সম্পাদনায় মুহম্মদ নাঈম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণে মুসলমানদের অবদান
২৩ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মালয়েশিয়ার ঐতিহাসিক মসজিদ “মসজিদ নেগারা”
১৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
যে মসজিদ থেকে গভীর রাতে ভেসে আসতো যিকিরের আওয়াজ
০৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৮)
০৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদ হযরত শাহ মখদুম রুপোশ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাজার শরীফ
০২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বয়নশিল্প নিদর্শনে মুসলমানগণ (৬)
২৬ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বয়নশিল্প নিদর্শনে মুসলমানগণ (৫)
১৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বয়নশিল্প নিদর্শনে মুসলমানগণ (৪)
১২ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বয়নশিল্প নিদর্শনে মুসলমানগণ (৩)
০৫ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বয়নশিল্প নিদর্শনে মুসলমানগণ (২)
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
স্থাপত্যশৈলীর অনন্য স্থাপনা মানিকগঞ্জের ‘ওয়াসি মহল’
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বয়নশিল্প নিদর্শনে মুসলমানগণ (১)
২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)












