ঐতিহ্যবাহী মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা এবং ব্রিটিশ বেনিয়া ষড়যন্ত্র
, ২২ শা’বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৫ ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ১৫ মার্চ, ২০২৩ খ্রি:, ২৯ ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) ইতিহাস

১৭৬৫ সালে বাংলায় ৮০ হাজার মক্তব-মাদরাসা ছিল। এই ৮০ হাজার মক্তব-মাদরাসার জন্য বাংলার চার ভাগের এক ভাগ জমি লাখেরাজভাবে বরাদ্দ ছিল। যখন ব্রিটিশরা দেখলো মাদরাসা-মক্তব শিক্ষার কারণে মুসলমানদের কোনোভাবেই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম থেকে সরানো যাচ্ছেনা তখন ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানি এই লাখেরাজ সম্পত্তি আইন, বিধি-বিধান প্রণয়ন এবং জোর-জবরদস্তি করে দেশের বিধর্মী চাটুকার ও প্রজাদের ইজারা দিতে থাকে।
ব্রিটিশদের এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের ফলে মাদরাসাগুলোর পরিচালন আয় কমতে থাকে। বহু মাদরাসা বন্ধ হয়ে যায়। গুটিকয়েক মাদরাসা কোনোভাবে অস্তিত্ব বজায় রাখতে সক্ষম হয়। ১৭৬৫ সালে বাংলায় মাদরাসার সংখ্যা ছিল ৮০ হাজার। ২০০ বছর পর ১৯৬৫ সালে এ সংখ্যা দুই হাজারের নিচে নেমে আসে।
মাদরাসাকেন্দ্রিক ব্রিটিশ ভারতের শিক্ষাব্যবস্থা কতটা শক্তিশালী ছিল তা উইলিয়াম হান্টার তার নিজের লেখা দ্য ইন্ডিয়ান মুসলমানস বইয়ে স্বীকার করেছে। সে লিখেছে, এ দেশটা আমাদের হুকুমতে আসার আগে মুসলমানরা শুধু শাসনের ব্যাপারেই নয়, শিক্ষাক্ষেত্রেও ভারতের শ্রেষ্ঠ জাতি ছিল। ভারতীয় মুসলমানদের এমন একটা শিক্ষাপ্রণালী ছিলো, যেটা আমাদের আমদানি করা প্রণালীর চেয়ে কোনো ক্রমেই কম যোগ্য ছিল না। তার দ্বারা উচ্চস্তরের জ্ঞান বিকাশ ও বুদ্ধিবৃত্তি পরিচ্ছন্ন হতো। সেটা পুরনো ছাঁচের হলেও তার ভিত্তিমূল সুদৃঢ় ছিল এবং সেকালের অন্য সব প্রণালীর চেয়ে নিঃসন্দেহে উৎকৃষ্ট ছিল। এই শিক্ষাব্যবস্থায়ই তারা মানসিক ও আর্থিক প্রাধান্য সহজেই অধিকার করেছিল।’
এদিকে মাদরাসাকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে ইংরেজরা তাদের মতো করে কলকাতা আলিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করে। এ জেড এম শামসুল আলম এ বিষয়ে লিখেছে: ‘ব্রিটিশ গভর্নর ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৮০ সালে ক্যালকাটা মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করে। এই মাদরাসা যে কতটা বৃহৎ একটি ষড়যন্ত্রের অংশ ছিলো তার প্রমাণ পাওয়া যায়; এই মাদরাসা প্রতিষ্ঠার ১৪৭ বছরের মধ্যে ২৫ জন অধ্যক্ষই ছিলো ইংরেজ খ্রিষ্টান।
১৭৮০ সালে মাদরাসা স্থাপিত হওয়ার পর ১৭৯০ পর্যন্ত ১০ বছর ক্যালকাটা আলিয়া মাদরাসার পাঠ্যতালিকায় দারসে নেজামিয়া অনুসরণ করা হয়েছিল। অতঃপর মাদরাসা সিলেবাস থেকে পবিত্র হাদীছ শরীফ এবং তাফসীর বাদ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ১১৮ বছর পর সেগুলো পুনরায় চালু করা হয় এবং সর্বোচ্চ ডিগ্রিকে নাম দেওয়া হয় টাইটেল।
পূর্বে যেখানে মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় ভারতীয় মুসলিম শিক্ষার্থীরা সবদিক দিয়ে শক্তিশালী হচ্ছিলো, সেখানে কলকাতার কথিত মাদরাসা প্রতিষ্ঠার পর মুসলমান ছাত্ররা কথিত মডারেট মুসলিম হতে শুরু করে। মার্জিত আচরণ ভুলে গিয়ে উশৃঙ্খল হতে শুরু করে। বেনিয়াদের কালচার অনুসরণ করতে শুরু করে। চেহারা থেকে দাড়ি উধাও হতে শুরু করে। নাউযুবিল্লাহ!
এক কথায় ব্রিটিশরা বুঝতে পেরেছিলো যে, মুসলমানদের তৎকালীন মজবুত অবস্থার মূলেই ছিলো ঐতিহ্যবাহী মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা অর্থাৎ সম্মানিত দ্বীনি শিক্ষা। এজন্য তারা প্রথমে এই মাদরাসা শিক্ষার উপরই বড় আঘাতটা হানে।
সুত্র:
* দ্য ইন্ডিয়ান মুসলমানস, হান্টার
* মাদরাসা শিক্ষা, এ জেড এম শামসুল আলম
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইংল্যান্ড কত সম্পদ এ অঞ্চল থেকে লুট করেছিলো?
১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কাফির-মুশরিকদের আসল চরিত্র
১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
শাসক আকবরের যে আমল কখনো কোনভাবেই নষ্ট হয়নি এবং হয় না
১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইংরেজদের আতঙ্ক বাংলার বীর মুহম্মদ তকী খাঁ’র বীরত্ব
১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
উত্তর আফ্রিকায় যেভাবে মুসলিম শাসনের ভিত শক্তিশালী হয়েছিলো
১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহাসম্মানিত নূরুল ফাতহ মুবারক এবং কাশ্মিরের হযরতবাল মসজিদ সম্পর্কিত একটি মশহুর ঘটনা
২৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
উসমানীয় সালতানাতের ঐতিহ্যবাহী সিপাহী ইউনিট
১৭ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনার সময়কার একটি ঈমানদীপ্ত ঘটনা
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে ভারতীয় লুটেরা সেনাবাহিনীর নজীরবিহীন লুটপাটের ইতিহাস
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ইতিহাসে স্বর্ণ পরিশোধন ও রফতানি
১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দিল্লির সুলতান হযরত শামসুদ্দীন আলতামাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার গুনাহমুক্ত জীবন
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
তাতার বিরোধী যুদ্ধে হযরত আমীর খসরু দেহলভী চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)