ইতিহাস
চলুন জানি: বিখ্যাত মুসলমান যুদ্ধাস্ত্র বিজ্ঞানী নাজমুদ্দিন হাসান আর রাম্মাহ’র কথা
, ০১ মে, ২০২৫ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) ইতিহাস
নাজমুদ্দিন হাসান আর রাম্মাহ হলেন এমন একজন মুসলমান বিজ্ঞানী যিনি নানাবিধ শক্তিশালী যুদ্ধাস্ত্র তৈরি করে ক্রুসেডার এবং তাতারদের বিরুদ্ধে মুসলমান বাহিনীকে শক্তিশালী করেছিলেন। তিনি ১২২৬ সালে বর্তমান লেবাননের তারাবলিসে জন্মগ্রহণ করেন।
উনার পিতা এবং দাদা যুদ্ধবিদ্যা ও বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র তৈরিতে পারদর্শী ছিলেন। পরবর্তীতে ধারাবাহিকভাবে তিনিও এই বিদ্যায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। উনার নতুন নতুন আবিষ্কারগুলো মুসলমান বাহিনী ব্যবহার করে তৎকালীন সময়ের অনেক শক্তিশালী বাহিনীকেও লজ্জাজনক পরাজয় প্রদান করেছিলেন।
বিস্ফারক অস্ত্র বানানোর পদ্ধতি সম্পর্কে সর্বপ্রথম এই হাসান আর-রাম্মা’ই কলম ধরেন। উনার আবিস্কৃত সমরাস্ত্রগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে বিজয় এনে দেয় মুসলমানদের জন্য।
১২৪৮ সালে নবম লুইয়ের নেতৃত্বে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে মুসলমান বাহিনী সর্বপ্রথম উনার উদ্ভাবিত কামান ব্যবহার হয়। যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী এক ঐতিহাসিক জানায়, কামানের গোলাগুলোর পেছন দিকে বর্শার মতো আগুনের লেজ থাকতো। বাতাস ভেদ করে উড়ে আসতো, মাটিতে পড়ার পর আওয়াজ হতো বজ্রের মতো এবং পুরো রণাঙ্গন আলোকিত হয়ে যেতো। তিনি বলেন, মুসলমানদের গোলা নিক্ষেপের আওয়াজ শুনলে ময়দানে তাবুতে থাকা খ্রিষ্টান শাসক লুইস লাফ দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়াতো এবং ভয়ে কেঁদে ফেলতো। এই যুদ্ধে ক্রুসেডাররা খুব বাজেভাবে পরাজিত হয়। যুদ্ধ শেষে হাসান আর রাম্মাহ নিজ এলাকায় ফিরে যান। গবেষণা এগিয়ে নেন সময়ের সাথে সাথে। ১২৬০ সালে মোঙ্গলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় মিশরের মামলুক সুলতান সাইফুদ্দিন কুতুজ উনাকে ডেকে পাঠান। এতোদিনে তিনি উনার কামানের কার্যকারিতা আরো নিখুঁত করে তোলেন। উনার শক্তিশালী কামান ব্যবহৃত হয় ঐতিহাসিক আইন জালুতের যুদ্ধে, মোঙ্গলদের বিরুদ্ধে।
যুদ্ধে সুলতান সাইফুদ্দিন কুতুব, মুসলমান সিপাহসালার রোকনুদ্দিন বাইবার্স এবং মুসলমান বাহিনীর ঈমানী বল, তাওয়াক্কুল এবং যথাযোগ্য নেতৃত্বের পাশাপাশি হাসান আর রাম্মাহর কামান হয়ে ওঠে কুখ্যাত মোঙ্গল বাহিনীর অসহায়ত্ত্বের কারণ। ‘মোঙ্গলদের কেউ পরাজিত করতে পারবে না’ এই কুসংস্থারের ভিত সেদিন উপড়ে ফেলা হয়।
আইন জালুতের যুদ্ধ শেষে সুলতান কুতুজ এবং বাইবার্স উনাকে সঙ্গে করে কাহেরায় (কায়রো) নিয়ে আসেন এবং সেখানে গবেষণার জন্য একটা জায়গা করে দেন। পরবর্তীতে উনারা কায়সারিয়া, যাফা ইত্যাদি যুদ্ধে রাম্মাহর সহায়তা নেন।
১২৬৮ সালে আনতাকিয়াকে ক্রুসেডারদের থেকে মুক্ত করতে মামলুক সেনাপতি রুকনুদ্দিন বাইবার্স হাসানকে সঙ্গে নেন। এই যুদ্ধে তিনি প্রথম উনার উদ্ভাবিত রকেট ব্যবহার করেন। সে রকেটের নাম দেন “তাইয়ার”। যুদ্ধটি উভয় পক্ষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয় হয়। এর কিছুদিন পর হাসান আরেকটা নতুন চমক নিয়ে হাজির হন। তৈরি করে ফেলেন টর্পেডো। মামলুক সুলতানের পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি শামের (সিরিয়া) সমুদ্র উপকূলে সেটির পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতেন। আমেরিকার ঝসরঃযংড়হরধহ ঘধঃরড়হধষ অরৎ ধহফ ঝঢ়ধপব গঁংবঁস এ হাসান আল রাম্মাহর উদ্ভাবিত টর্পেডোর একটি নমুনা সংরক্ষিত আছে।
সুলতান সাইফুদ্দিন কুতুজ উনার ইন্তেকালের পর সুলতান হন রুকনুদ্দিন বাইবার্স। এরপর ১২৭৭ সালে সুলতান বাইবার্স ইন্তেকাল করলে পরবর্তী সুলতান কালাউন খ্রিষ্টানদের থেকে হিমস, হামা ইত্যাদি মুক্ত করতে হাসান আর রাম্মাহর সহায়তা নেন। ১২৯১ সালে সুলতান কালাউন ইন্তেকাল করলে উনার ছেলে আশরাফ খলিল আক্রা বিজয়ে উনার সহায়তা নেন। ফলে একশত বছর পর “আক্রা” মুসলমানদের হাতে ফিরে আসে। সেই যুদ্ধে তিনি এক ধরনের ছোট মিনজানিক ব্যবহার করেন, যার নাম দেন আল-ছি’রানুস সাওদা, এর ধ্বংসক্ষমতা ছিলো ভয়াবহ রকম। এছাড়াও এই যুদ্ধে একজন সৈন্যের পক্ষে বহনযোগ্য বন্দুক ব্যবহৃত হয়।
১২৯৪ সালে তিনি ইন্তেকাল করেন। উনার ইন্তেকালের পর উনার রেখে যাওয়া গবেষণা অযোগ্য এবং অলসদের হাতে পড়ে। ফলে তা ধীরে ধীরে ইতিহাসের বাকে হারিয়ে যায়। কিছু তথ্য বিধর্মীরাও চুরি করে নিয়ে যায়। তবে উনার লেখা যুদ্ধাস্ত্র বিষয়ক বইগুলো আজও সমরবিজ্ঞানে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। উনার কিতাবের কিছু অংশ প্যারিসে, কিছু অংশ মিশর এবং তুরস্কে রয়েছে।
-মুহম্মদ শাহজালাল।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কেমন ছিলো মোঘল সালতানাতের গোলন্দাজ এবং অশ্বারোহী বাহিনী
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পান্থনিবাস ও সরাইখানা নির্মাণে মুসলমানদের অনবদ্য অবদান
২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৯)
১৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুসলমানদের শিক্ষা-দীক্ষার বিরোধিতায় বিধর্মী-অমুসলিমরা
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাংলার হিন্দু ধনিক-বণিক, বেনিয়া শ্রেণী, ব্যাংকার প্রভৃতির সাথে এক গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মুসলিম
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইউরোপকে যেভাবে সমৃদ্ধ করেছেন আফ্রিকান মুসলমানরা
১২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
গুজরাটের সুলতান মুজাফফর শাহের পরহেজগারিতা এবং ভ্রাতৃত্ববোধ
০২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৭)
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কেমন ছিলেন ইসলামী ইতিহাসের প্রথম আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঐতিহাসিক মুসলিমবাগ ঈদগাহ-ই কি আজকের ঢাকেশ্বরী মন্দির?
২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
১২টি চন্দ্রমাসের নাম এবং নামকরণের সার্থকতা (২)
২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ঐতিহাসিক খেমকারান যুদ্ধ: যেভাবে বাংলাদেশের জাতীয়তাবোধের উদ্ভব
২৫ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)












