তাতারস্তানে দ্বীন ইসলাম এবং মুসলমানদের স্বর্ণালী ইতিহাস
এডমিন, ১৬ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০৫ ছালিছ, ১৩৯১ শামসী সন , ০৪ আগস্ট, ২০২৩ খ্রি:, ২০ শ্রাবণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) ইতিহাস

ভলগাপারে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার আগমন ঘটে হিজরী ৩য় শতক মোতাবেক ঈসায়ী নবম শতকে। তবে এর আগেই অত্র অঞ্চলের কাজার শাসকদের সঙ্গে মুসলিম বাহিনীর যুদ্ধ হয়। উমাইয়া শাসক হিশাম ইবনে আবদুল মালিক এবং আব্বাসীয় শাসক হারুনুর রশিদ বেশ কয়েকটি যুদ্ধে কাজারদের পরাজিত করেন। এ সময়েই কাজার, ভলগা বুলগেরিয়াসহ ভলগা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার আগমন ঘটে।
একজন কাজার শাসক সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন এবং তার সঙ্গে বিপুলসংখ্যক মানুষও মুসলমান হয়। অবশ্য অত্র অঞ্চলের বুলগাররা কাজারদের আগেই দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। ভলগা বুলগেরিয়ার শাসক আলমাস, যিনি ৮৯৫ থেকে ৯২৫ পর্যন্ত শাসন করেন এবং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করে জাফর ইবনে আবদুল্লাহ নাম গ্রহন করেন তিনি বাগদাদে আব্বাসীয় শাসক মুকতাদির বিল্লাহর কাছে তাঁর প্রতিনিধি পাঠিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় সহযোগিতা কামনা করেন। মুকতাদির বিল্লাহ তাঁর আহ্বানে সাড়া দেন এবং প্রখ্যাত ফকিহ (আইনজ্ঞ) আহমদ ইবনে ফাদলানকে প্রধান করে একটি প্রতিনিধি দল প্রেরণ করেন। ইবনে ফাদলান ও তাঁর প্রতিনিধিদলের হাতে শাসক পরিবার ও দেশটির সাধারণ জনগণ দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। আব্বাসীয় শাসক মুকতাদির বিল্লাহর সঙ্গে বুলগার শাসক পরিবারের সদস্যরা পবিত্র হজ্জ্ব পালন করেন।
ঐতিহাসিকরা বলেন, ভলগা বুলগেরিয়া শাসক আলমাস (জাফর) মুকতাদিরের কাছে মূলত তিনটি বিষয়ে সহায়তা চেয়েছিলেন। তা হলো বিচার ও প্রশাসন, চিকিৎসা ও ওষুধ, দ্বীন ইসলাম উনার শিক্ষা দান। মুকতাদির তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে যে প্রতিনিধিদল প্রেরণ করেন, তাতে উল্লিখিত তিনটি বিষয় ছাড়াও সমর, কৃষি, অর্থনীতি, নির্মাণ ও শিল্পকলায় পারদর্শীদের প্রেরণ করেন। যারা বুলগারের উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখেন। ঐতিহাসিক লিখেন, আব্বাসীয় শাসকের সহায়তায় ভলগা বুলগার রাষ্ট্র, যা পূর্ব থেকেই তার ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে কৃষি ও অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ ছিল তার সব কিছুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বনির্ভর হয়।
১৩ শতকের পর বুলগার ও কাজান মুসলিমরা ক্রমেই শক্তিহীন হয়ে পড়ে। ক্রমাগত রুশ আগ্রাসনের মুখে ভলগা বুলগেরিয়ার দ্রুত পতন হলেও আরো প্রায় দুই শতাব্দীকাল টিকে থাকে কাজাররা। ১৫৫২ সালে কাজার মুসলমানদের স্বাধীনতা হরণ করে রুশরা।
সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার পর ভলগাপারের মুসলিমরা স্বাধীনতার জন্য নতুন সংগ্রাম শুরু করে। সোভিয়েত সরকার মুসলিমদের আন্দোলন দমনের নানামুখী নির্যাতনমূলক চেষ্টায় লিপ্ত হয়। এ সময় বহু মুসলিম শহীদ ও দেশান্তরের শিকার হয় এবং মুসলমানদের রেখে যাওয়া ভূমিগুলোতে অমুসলিমদের পুনর্বাসন করা হয়। মুসলমানের অবিরাম সংগ্রামের মুখে শেষ পর্যন্ত তারা স্বায়ত্তশাসন প্রদানে সম্মত হয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে ১৯৯৪ সালে তাতারস্তানের মুসলিমরা স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দেয়। কিন্তু তাতার নেতারা ১৯৯৪ সালে সম্পাদিত এক চুক্তির অধীনে রুশ ফেডারেশনে যোগ করে।
বর্তমান তাতারস্তানের আয়তন ৬৮ হাজার বর্গ কিলোমিটার। রাজধানী শহর কাজান। জনসংখ্যার ৫৩.৮% মুসলিম (প্রকৃতপক্ষে এ সংখ্যা আরো অনেক বেশি)।