নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে অবমাননাকারীদের যুগে যুগে ভয়াবহ পরিণতি (২২)
, ০৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ
ইহুদী নেতা কা’ব বিন আশরাফ:
অতঃপর তৃতীয় হিজরী শরীফ উনার পবিত্র ১৪ই রবীউল আউওয়াল শরীফে এক জ্যোৎস্নারাতে কা’ব বিন আশরাফকে হত্যা করার উক্ত দলটি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র দরবার শরীফে এসে উপস্থিত হন। তিনি উনাদেরকে ‘বাকি আল-গারকাদ’ নামক স্থান পর্যন্ত এগিয়ে দেন। এরপর উনাদেরকে নছীহত মুবারক করে বলেন, আপনারা মহান আল্লাহ পাক উনার নামে চলুন। এবং তিনি দোয়া করেন, আয় আল্লাহ পাক! আপনি উনাদেরকে সাহায্য করুন। আমীন!
এরপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হুজরা শরীফে ফিরে আসেন এবং পবিত্র নামায আদায় করে উনাদের কামিয়াবীর জন্য দোয়া মুবারক করেন।
হযরত মাসলামাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার দলটি কা’ব বিন আশরাফের দুর্গের নিচে এসে উপস্থিত হন। তাকে ডাক দেন হযরত আবূ নাইলাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি। ডাক শুনে কা’ব বিন আশরাফ নিচে নেমে আসার জন্য প্রস্তুত হয়। তখন তার নব বিবাহিতা স্ত্রী তাকে বলে- এই অসময়ে তুমি কোথায় যাচ্ছো? আমি এমন একটি আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি, যা থেকে রক্ত ফোঁটা ফোঁটা হয়ে ঝরে পড়ছে। সে বললো, চিন্তা করো না, উনারা হচ্ছেন আমার বন্ধু হযরত মুহম্মদ বিন মাসলামাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং আমার দুধভাই হযরত আবূ নাইলাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। কোনো সম্মানিত ব্যক্তিকে বর্শার আঘাতের দিকে ডাকা হলেও সে সাড়া প্রদান করে। একথা বলেই সে নিচে নেমে আসতে শুরু করে; এমতাবস্থায় তার দেহ ও মাথা থেকে সুগন্ধ ছড়াচ্ছিলো।
হযরত মুহম্মদ ইবনে মাসলামাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং উনার সাথীদের সাথে দেখা করতে নিচে নেমে এলো কা’ব বিন আশরাফ। তিনি পূর্বেই উনার সাথীদেরকে বলে রেখেছিলেন, সে এলে আমি তার মাথা ধরে চুলের ঘ্রাণ শুঁকবো। আপনারা যখন দেখবেন, আমি তার মাথাকে আয়ত্ত্বে নিয়ে এসেছি, সাথে সাথে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বেন। কা’ব বিন আশরাফ উনাদের সাথে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বললো। এরপর হযরত আবূ নাইলাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, হে ইবনে আশরাফ! শিব আল-আযুজ-এ হেঁটে গিয়ে, সেখানে কথা-বার্তা বলে রাতটা কাটিয়ে দিলে কেমন হয়? সে সম্মতি প্রকাশ করে বললো চলুন।
সকলেই শিব আল-আযুজের দিকে হাঁটতে লাগলেন। রাস্তায় হযরত আবূ নাইলাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আজকের রাতের মতো এরকম সুগন্ধ আমি আর দেখিনি! কথাটা শুনতেই কা’ব বিন আশরাফ আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠলো। সে বললো, আমার ঘরে আরবের সবচেয়ে সুগন্ধময়ী নারী রয়েছে! হযরত আবূ নাইলাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমি কি এর ঘ্রাণ নিতে পারি? সে বললো- হ্যাঁ, নিতে পারেন। তিনি উনার হাত কা’বের চুলের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলেন। নিজে ঘ্রাণ শুঁকলেন এবং উনার সাথীদেরকেও শুঁকালেন।
এরপর আরও কিছুপথ হাঁটলেন। তিনি আবার বললেন- আমি কি আবার শুঁকতে পারি? সে বললো- অবশ্যই। হযরত আবূ নাইলাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আবার তার মাথার চুলের ঘ্রাণ শুঁকলেন। এভাবে তিনি তাকে বাগে নিয়ে আসার ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হলেন।
সবাই আরও কিছুদূর হাঁটলেন। হযরত আবূ নাইলাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পুনরায় বললেন, আমি কি আবারও ঘ্রাণ শুঁকতে পারি? কা’ব বললো, হ্যাঁ। হযরত আবূ নাইলাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মালউনটার মাথার চুলে হাত ঢুকিয়ে দিলেন। যখন তার মাথাটা কবজা করে ফেললেন তখন তিনি উনার সাথীদের উদ্দেশ্য করে বললেন, এই দুশমনে রসূলকে শেষ করে দিন। সাথে সাথে সকলের তলোয়ার একসাথে তার উপর আঘাত হানলো। কিন্তু তেমন কিছু হলো না। এবার সক্রিয় হলেন দলপতি হযরত মুহম্মদ ইবনে মাসলামাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। তিনি জ্যাবের ভিতর থেকে খঞ্জর বের করে, সজোরে তার তলপেটে আঘাত করলেন! এরপর খঞ্জরের উপর পুরো শরীরের ভার ছেড়ে দিলেন। খঞ্জরটি আমূল বিদ্ধ হয়ে গেলো। দুশমনে রসূল জমীনে লুটিয়ে পড়লো। সে এমন জোরে চিৎকার করে উঠলো যে, আশেপাশের সবাইকে ভড়কে দিলো! প্রতিটি দুর্গে বাতি জ্বলে উঠলো।
উনারা সাথে সাথেই মহান আল্লাহ পাক এবং উনার মহাসম্মানিত রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের দুশমন কা’ব বিন আশরাফের ধড় থেকে মস্তক বিচ্ছিন্ন করে নিলেন। এরপর সেটা নিয়ে ফেরার পথ ধরলেন। হামলার সময় হযরত হারিছ ইবনে আউস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জিসিম মুবারকে একজন সঙ্গীর তরবারির অগ্রভাগের সামান্য আঘাত লেগে যায়। ক্ষত থেকে অঝোর ধারায় রক্ত ঝরতে থাকে। ফিরতি পথে ‘হাররাতুল আরিজ’ নামক স্থানে পৌঁছার পর উনারা লক্ষ্য করলেন, হযরত হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনাদের সাথে নেই! তখন উনারা সেখানেই অপেক্ষা করতে লাগলেন। কিছুক্ষণ পর হযরত হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এসে পৌঁছলেন। উনাকেসহ ‘বাকি আল-গারকাদ’ নামক জায়গায় পৌঁছার পর উনারা সকলে মিলে উচ্চ আওয়াজে তাকবীর ধ্বনি দিলেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই তাকবীর ধ্বনি শুনতে পেলেন। তিনি নিশ্চিত হলেন যে, উনাদের অভিযান সফল হয়েছে। তিনিও ‘আল্লাহু আকবার’ বলে তাকবীর ধ্বনি দিয়ে উঠলেন এবং বললেন, এই চেহারাগুলো সফল হোক। উনারা সকলেই অত্যন্ত খুশি হয়ে গেলেন। (অসমাপ্ত)
-হাফিয মুহম্মদ ইমামুল হুদা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৭)
০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় জীবনী মুবারক আল হাদিয়্যাতুল ইলাহিয়্যাহ ফী সীরাতি হাবীব ওয়া মাহবূবিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (পর্ব- ৯১)
০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত সম্বোধন মুবারক করার বিষয়ে কতিপয় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লফ্য বা পরিভাষা মুবারক
০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে অবমাননাকারীদের যুগে যুগে ভয়াবহ পরিণতি (২৬)
০৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৬)
০৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় জীবনী মুবারক আল হাদিয়্যাতুল ইলাহিয়্যাহ ফী সীরাতি হাবীব ওয়া মাহবূবিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (পর্ব- ৯০)
০৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত সম্বোধন মুবারক করার বিষয়ে কতিপয় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লফ্য বা পরিভাষা মুবারক
০৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সম্মানার্থে মেহমানদারী করার মাধ্যমে সম্মানিত শাফায়াত মুবারক লাভ
০৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উনার দলীল সমৃদ্ধ মশহূর কিতাব-“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাব নিয়ে ভয়াবহ ষড়যন্ত্র (১)
০৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৫)
০৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় জীবনী মুবারক আল হাদিয়্যাতুল ইলাহিয়্যাহ ফী সীরাতি হাবীব ওয়া মাহবূবিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (পর্ব- ৮৯)
০৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বতামুন নাবিয়্যীন, নূরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত সম্বোধন মুবারক করার বিষয়ে কতিপয় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লফ্য বা পরিভাষা মুবারক
০৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












