পবিত্র আযানের জন্য ২২ জন মুসলমানের শহীদ হওয়ার ঈমানদীপ্ত ঘটনা
এডমিন, ৩০ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২০ ছানী, ১৩৯১ শামসী সন , ১৯ জুলাই, ২০২৩ খ্রি:, ০৪ শ্রাবণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) ইতিহাস

কিন্তু তৎকালিন ‘ইয়ং মুসলিমস এসোসিয়েশন’ দলের নেতা মীর হুসাইন বখশ জুমুয়াহ ও ঈদের নামাযের খুতবা বন্ধের সরকারি নির্দেশের প্রতিবাদে আন্দোলনের ডাক দিলেন। সারা কাশ্মীরের হাজারো মুসলমান তার ডাকে সাড়া দিয়ে মাঠে নেমে আসেন। মুসলমানরা দ্বীনি কাজের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে ফেলার জন্য এডিশনাল ম্যাজিস্ট্রেটের বরাবর রণবীর পেনাল কোডের ২৯৬ নং ধারা অনুযায়ী মামলা করেন। কিন্তু বিধর্মী ম্যাজিস্ট্রেট “খুতবা জুমুয়ার নামাযের অংশ নয়” এই কথা বলে মামলা খারিজ করে দেয়।
মুসলমানরা এই রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা-সমাবেশ করতে থাকে। অপরদিকে হরি সিংয়ের প্রশাসনের ছত্রছায়ায় উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা মুসলমানদের সমাবেশে হামলা চালাতে থাকে। এরই মাঝে ২০ শে জুন শ্রীনগরের হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় কিছু উগ্র হিন্দু যুবক পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ অবমাননা করার চেষ্টা করে। নাউযুবিল্লাহ! শ্রীনগরের এ ঘটনার পর কাশ্মীরি মুসলমানদের আন্দোলন আরো তীব্র হতে থাকে।
পরবর্তীতে এক প্রতিবাদ সভায় আব্দুল কাদির নামক এক যুবক পবিত্র কুরআন শরীফ অবমাননার বিরুদ্ধে ঈমানদীপ্ত এক ভাষন দেন। যাতে এই আন্দোলন আরো তীব্র আকার ধারণ করে। ফলে
সভা শেষে রণবীর পেনাল কোডের ১২৪ এবং ১৫৩ ধারায় রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
তার গ্রেফতারের সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে মুসলমানরা ঘর ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসে। পেশোয়ার পর্যন্ত যাতায়াত ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে। শ্রীনগরের সেশন জজ আদালতে জুলাইয়ের ৪, ৬, ৭ এবং ৯ তারিখ তার মামলার শুনানি চলাকালীন কয়েক হাজার মুসলমান আদালত প্রাঙ্গনে দাঁড়িয়ে থাকতেন। ১৩ই জুলাই, রোববার আব্দুল কাদির খানের মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল শ্রীনগর জেল ভবনে। সকাল থেকেই কয়েক হাজার কাশ্মীরি মুসলমান তার মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে।
বেলা ১টার কিছুক্ষণ আগে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপারসহ বাকী কর্মকর্তারা জেলগেটে আসলে ‘দ্বীন ইসলাম জিন্দাবাদ’ স্লোগানে জেলগেট মুখরিত করে তোলেন উপস্থিত কাশ্মীরিরা। ম্যাজিস্ট্রেট বিচার কার্য পরিচালনার জন্য জেল ভবনে ঢোকার পর শান্তিপূর্ণভাবে পবিত্র যোহরের নামায আদায় করার জন্য কাতারে দাঁড়ান মুসলমানরা। আযান দেয়ার জন্য সামনে এগিয়ে আসেন আব্দুল খালিক শোরা। তার মুখ থেকে “আল্লাহু আকবার” আওয়াজের সাথে সাথেই হিন্দু গভর্নর তুরলোকের নির্দেশে পুলিশ গুলি চালায় তার উপর। লুটিয়ে পড়েন তিনি। এগিয়ে আসেন আকবর দার। আযানের পরের লাইন উচ্চারণের সাথে সাথে আবারো পুলিশের গুলি। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনিও। এভাবে উসমান মিসদার, আমীর উদ্দিন মাকায়ী, মুহম্মদ সুলতান খান একে একে ২২ কাশ্মীরি মুসলিম যুবক এগিয়ে আসেন আযান শেষ করতে। প্রত্যেককেই গুলি করে শহীদ করে দেয় ডোগরা পুলিশ। এরপর আযান শেষ হতেই পুলিশের ওপর ইট আর পাথর দিয়ে পাল্টা আঘাত করেন কাশ্মীরিরা। প্রায় ঘন্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষ শেষ হলে শহীদদের লাশ উদ্ধার করা হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার হন প্রায় অর্ধশত। মুসলমানদের অব্যাহত আন্দোলন এবং এতজন মুসলমানের শাহাদাতের ঘটনার ধাক্কা সামাল দিতে সরকার শেষ পর্যন্ত খুতবার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় এবং পবিত্র কুরআন শরীফ অবমাননাকারীদের বিচারের প্রতিশ্রুতি দেয়। এরপর থেকে প্রতিবছর ৩১ জুলাই ২২ শহীদ দিবস হিসেবে পালন করেন কাশ্মিরী মুসলমানরা।