পবিত্র মসজিদে জুমুয়াহ
, ২১ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) স্থাপত্য নিদর্শন
চিত্র-: পবিত্র মসজিদে জুমুয়ার ঐতিহাসিক ছবি
আল জুমুয়া মসজিদ (আরবি: مسجد الجمعة), এছাড়াও মসজিদটি বনী সেলিম মসজিদ, আল গুবাইব মসজিদ বা আতিকাহ মসজিদ হিসাবে পরিচিত, মসজিদটি পবিত্র মদীনা শরীফ শহরে অবস্থিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবায়ে ক্বিরাম রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম উনারা পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে পবিত্র মদিনা শরীফে হিজরত মুবারকের সময় প্রথমবারের মত এই স্থানে পবিত্র জুমার নামাজ আদায় করেছিলেন।
মসজিদের অবস্থানঃ
মসজিদটি পবিত্র মদিনা শরীফ শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমে, ওয়াদি রানুনার নিকটে, মসজিদে কুবা থেকে ৯০০ মিটার উত্তরে এবং পবিত্র মসজিদে নববী থেকে ৬ কিমি দূরত্বে অবস্থিত।
ইতিহাসঃ
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে ক্বিরাম রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম উনারা পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে পবিত্র মদীনা শরীফ পর্যন্ত হিজরত মুবারকের পথে, হিজরী ১ম বর্ষের পবিত্র শাহরুল আযম, রবীউল আউয়াল শরীফ মাসের ১২ তারিখ, সোমবার, চার দিনের জন্য কুবা অঞ্চলে কাফেলা থামিয়েছিলেন। জুমুয়াবার সকালে উনারা পুনরায় পবিত্র মদিনা শরীফ উনার পথে যাত্রা শুরু করেন এবং ওয়াদি রানুনা অঞ্চলে কাফেলা থামিয়ে সেখানে জুময়ার নামাজ আদায় করেছিলেন। এ অঞ্চলটিকে আজও 'জুমুয়া' বলে উল্লেখ করা হয়।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদিনা শরীফ গমনের অধ্যায়ে বলা হয়েছে যে, যখন তিনি মহান আল্লাহ্ পাক উনার নির্দেশ মুবারকে জুমুয়াবার কুবা থেকে পবিত্র মদীনাতুল মুনাওয়ারা শরীফের দিকে রওয়ানা হন, তখন সালিম ইবনে আওফের গোত্রের নিকট পোঁছলে জুময়ার নামাযের সময় হয়। সেখানে তিনি জুমুয়ার নামায আদায় করেন। পবিত্র মদীনা শরীফ এলাকায় এটিই ছিল উনার প্রথম জুমুয়ার নামায। এই মসজিদের সন্নিকটে একটি উপত্যাকা আছে। এই উপত্যকার পশ্চিম প্রান্তে সালিম ইবনে আওফ গোত্রের বাড়ি ছিল। যার নিদর্শন এখানো বিদ্যমান। সেখানে বিশিষ্ট সাহাবী হযরত ইতবান রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনার বাড়ি ছিল।
এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত বর্ণনা পবিত্র বুখারী শরীফে বর্ণিত আছে। তিনি একবার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র দরবার শরীফে এসে আরজু মুবারক করেন, ইয়া রাসূল্লাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ! ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার দৃষ্টিশক্তি ক্ষীন হয়ে গেছে। এ কারণে আমি বৃষ্টি হওয়ার সময় মসজিদে গিয়ে নামাযের জামায়াতে শরিক হতে পারি না। যদি আপনি আমার ঘরে তাশরীফ মুবারক এনে নামায আদায় করেন, আমি সে স্থানেই নামায পড়বো। এটাও বর্ণিত রয়েছে, বনী সালামের মধ্যে দুটো মসজিদ ছিল। উভয়ের মধ্যে মসজিদে জুমা ছোট ছিল। সম্ভবত বড় মসজিদ ওটাই ছিল যেখানে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নামায পড়ার কথা এই হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে।
চিত্র-:পবিত্র মসজিদে জুমুয়া
মসজিদের ভিত্তিঃ
মসজিদটি সর্বপ্রথম পাথরের শিলা দ্বারা নির্মিত হয়েছিল, পরে পুরাতন হয়ে বিভিন্ন স্থানে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় পরবর্তিতে সংস্কার করা হয়। সংস্কারের পূর্বে মসজিদটির দৈর্ঘ্য ছিল ৮ মিটার, প্রস্থে সাড়ে চার মিটার এবং লম্বায় ৫.৫ মিটার। মসজিদের একমাত্র গম্বুজটি ছিল লাল ইট দ্বারা নির্মিত। পূর্ব অংশের সাথে ৮ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৬ মিটার প্রস্থ সহ একটি উঠান ছিল। ১৯৮৮ খৃ: মসজিদটি পুর্ণনির্মান কর হয়, যেখানে ইমাম এবং মুয়াজ্জিন থাকার জন্য একটি বাসভবন, একটি গ্রন্থাগার, তাহফিজ আল কুরআন নামে একটি মাদ্রাসা, একটি হাম্মামখানা নির্মাণ করা হয়। ৬৫০ জন হজযাত্রীর ধারণক্ষমতা সম্পন্ন একটি প্রধান গম্বুজ এবং চারটি ছোট গম্বুজ নিয়ে নির্মিত মসজিদটি ১৯৯১ খৃ: জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
সংস্কারের সময়রেখাঃ
দ্বিতীয় সংস্কারটি ওমর বিন আব্দুল আজিজ রহমতুল্লাহি আলাইহি করেছিলেন।
তৃতীয় সংস্কারটি আব্বাসীয় শাসনামলে ৭৩৪ খৃ: থেকে ৭৪৮ খৃ: মধ্যে পরিচালিত হয়েছিল।
চতুর্থ সংস্কারটি চৌদ্দ শতকের সময় সায়ামসুদ্দিন কাওয়ান পরিচালনা করেছিলেন।
উসমানীয় সাম্রাজ্যের আমলে সংস্কারের নেতৃত্বে ছিলেন সুলতান বায়েজিদ ।
উনিশ শতকের মাঝামাঝি সংস্কারের নেতৃত্বে ছিলেন সাইয়্যিদ হাসান আসি-সিয়ারবাটলি ।
এ মসজিদের পুরাতন ইমারত নষ্ট হওয়ার পর ৯০০ হিজরীতে কোন একজন মসজিদটি পুন:নির্মাণ করেন। এ মসজিদের ছাদ ও দেয়াল ছিল এবং মসজিদের কিবলা ছিল সিরিয়ার দিকে, মসজিদটি দৈর্ঘ্য বিশ গজ, আর পূর্ব ও পশ্চিমে প্রস্থ ছিল ষোল গজ। (আস-সামহুদী, ওয়াফাউল ওয়াফা বি-আখবারি দারিল মুস্তাফা)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
তাজ-উল-মসজিদ ভারতের সর্ববৃহৎ মসজিদ
২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইসলামী স্থাপত্য দূর্গ “কসর আল-খারানা”
০১ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নওগাঁয় ২০০ বছরের পুরোনো মসজিদের সন্ধান
০৩ মার্চ, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
খুলনার ঐতিহাসিক মসজিদকুড় মসজিদ (২)
১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খুলনার ঐতিহাসিক মসজিদকুড় মসজিদ (১)
১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সীতাকুন্ডের পৌঁনে পাঁচশো বছরের ঐতিহাসিক হাম্মাদিয়া মসজিদ
২৩ জানুয়ারি, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
বাগেরহাটের ঐতিহাসিক বিবি বেগনি মসজিদ
০৮ জানুয়ারি, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ঐতিহ্যবাহী সিংদহ আউলিয়া জামে মসজিদ
০৩ জানুয়ারি, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
বাগেরহাটের রণবিজয়পুরে ঐতিহাসিক এক গম্বুজ মসজিদ
২৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বাগেরহাটের ঐতিহাসিক নয়-গম্বুজ মসজিদ
২০ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
বাগেরহাটের ঐতিহাসিক চুনাখোলা মসজিদ
১২ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
৫০০ বছরের ঐতিহ্য স্থাপত্যর এক অনন্য নিদর্শন রাজশাহীর বাঘা শাহী মসজিদ
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)