স্থাপত্য-নিদর্শন
বাগেরহাটের রণবিজয়পুরে ঐতিহাসিক এক গম্বুজ মসজিদ
, ১৪ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৯ সাবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ১৩ পৌষ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) স্থাপত্য নিদর্শন

রণবিজয়পুর মসজিদ বাংলাদেশের এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদের মধ্যে স্থাপত্যর দিক থেকে সর্ববৃহৎ মসজিদ। বাগেরহাট-ষাটগম্বুজ সড়কে এই ঐতিহাসিক মসজিদটির অবস্থান। মসজিদটি বাংলাদেশের সবচেয়ে সংরক্ষিত একটি মসজিদ এবং স্থাপত্য শৈলীর বিচারে এটি খানজাহান আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সময়ে নির্মিত বলে মনে করা হয়।
মসজিদটি যথাযথভাবে পোড়ানো ইটের তৈরি। এর বড় এককক্ষ বিশিষ্ট বর্গাকার কক্ষটি (ভেতরের দিকে প্রতিবাহু ১০.৮২ মিটার) ইটের তৈরি একটি বড় অর্ধবৃত্তাকার একটি গম্বুজের নিচে মসজিদটি অবস্থিত। মসজিদের দেওয়ালগুলি স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি মোটা (২.৭৪ মিটার) এবং দেওয়ালগুলিতে তিনটি দ্বি-কেন্দ্রিক সূচ্যগ্র খিলানপথ রয়েছে। ক্বিবলা দেওয়াল ব্যতীত প্রতি পার্শ্বেই তিনটি করে প্রবেশপথ আছে। প্রতি পার্শ্বের মধ্যের খিলানপথ ঐতিহ্যগতভাবে পার্শ্বের পথ হতে বড়। পূর্বদিকের তিনটি প্রবেশদ্বার বরাবর পশ্চিমে ক্বিবলা দেওয়ালে তিনটি অর্ধবৃত্তাকার মিহরাব রয়েছে।
মূল মিহরাবটি পার্শ্ববর্তী মিহরাবদ্বয় অপেক্ষা একটু বড়। মূল মিহরাবটির বাইরের দিকে দেয়াল থেকে কিছুটা বাহিরে থাকায় মিহরাবের বাহিরের অংশ দেয়ালের বাহিরে থেকেই দেখা যায়, যা ইমারতের বক্রাকৃতির কার্নিস অতিক্রম করে উপরে উঠে গেছে, কিন্তু ছাঁদের উপরে ওঠেনি। মসজিদের বাইরের চার কোণার গুরুত্ববহনকারী মিনারগুলি খানজাহান আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নির্মিত মসজিদের রীতির মতোই গোলাকার। এগুলির নিম্নাংশ কিছুটা কারুকার্য করা। কিন্তু উপরের অংশ একেবারেই সাদামাটা।
পোড়ামাটির ফলকে অলঙ্কৃত মসজিদটির অধিকাংশ অলঙ্করণই সময়ের পরিক্রমায় প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। এগুলি বর্তমানে প্রবেশপথ, মিহরাব, কার্নিস এবং কোণার বুরুজগুলিতে দেখা যায়। বিভিন্ন ধরনের অলঙ্করণের মধ্যে গোলাপ নকশা, জালি নকশা, প্যাঁচানো নকশা, হীরকাকার নকশা ও ঝুলন্ত নকশাসমূহ উল্লেখযোগ্য।
মসজিদটির প্রতœতাত্ত্বিক গুরুত্ব বিবেচনা করে ১৯৬১ খৃ: এটিকে সংরক্ষিত নির্মাণ হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং এর ফলে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর ব্যাপকভাবে এটির সংস্কার করা হয়। স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্যের বিচারে এটি এই বঙ্গের একটি কৌতূহলোদ্দীপক নিদর্শন। রণবিজয়পুর মসজিদের কাঠামোগত দৃঢ়তা, বিশালতা এবং এর বিভিন্ন অংশের মধ্যে সুসামঞ্জস্যতা জান্নাতপুরের (বর্তমান গৌড়ের) দাখিল দরওয়াজার সাথে তুলনীয়। অনেকবার এর মেরামত ও সংস্কার করা হলেও মসজিদের আদি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান রয়েছে এবং এটি খানজাহান আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার স্থাপত্য রীতির স্থাপত্যের নিদর্শনের একটি সুন্দর উদাহরণ।
এ ঐতিহাসিক মসজিদটির একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো এর গম্বুজের বাইরের দিক। বর্তমানে এটি মসৃণভাবে পলেস্তারা (চুন সুরকি সিমেন্ট ইত্যাদি মিশ্রণের প্রলেপ) করা। কিন্তু পূর্বে এটি নির্দিষ্ট ব্যবধানে কোণাকারে বসানো ইটের কয়েকটি সারি দ্বারা অলঙ্কৃত ছিল। এটি বাংলার স্থাপত্যে একটি অসাধারণ অলঙ্করণ কৌশল যা সম্ভবত বুখারার ইসমাঈল সামানি এর মাজার হতে গ্রহণ করা হয়েছে। সূত্র: বাংলাপিডিয়া ও ইন্টারনেট।
-মুহম্মদ নাঈম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ঐতিহাসিক রোয়াইলবাড়ি দুর্গ (৩)
১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (১০)
১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ঐতিহাসিক রোয়াইলবাড়ি দুর্গ (২)
১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ঐতিহাসিক রোয়াইলবাড়ি দুর্গ (১)
০৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
শীতে প্রোটিনের অভাবে হতে পারে যে ক্ষতি
৩১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
‘অদৃশ্য আদেশে’ থেকেই সংস্কার হয়েছিল যে ঐতিহাসিক মসজিদের
২৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
অনিন্দ্য সুন্দর স্থাপনা তুর্কমেনিস্তানের এরতুগরুল গাজি মসজিদ
২২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
৭৫৫ বছরের মসজিদ চালু করলো মিশর
২১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
১৫০ বছরের পুরনো ইতিহাস নূরানীবাদ (নরসিংদীর) আটকান্দি মসজিদ
১৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হেলমান্দে মুসলিম আগমন ও ক্ষমতার পালাবদল
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলিম স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন: স্পেনের কুরতুবা বা কর্ডোবা মসজিদ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যার এক মাথা বাংলাদেশে অপর মাথা ত্রিপুরার আগরতলায়!
০২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)