স্থাপত্য-নিদর্শন
বাগেরহাটের ঐতিহাসিক বিবি বেগনি মসজিদ
, ২৫ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১০ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ০৮ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ২৪ পৌষ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) স্থাপত্য নিদর্শন
ঐতিহাসিক বিবি বেগনি মসজিদটি বাগেরহাট সদর উপজেলার ষাটগম্বুজ ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্গত মগরা মৌজার ৭৮০ নং দাগে ষাটগম্বুজ মসজিদের পশ্চিমদিকে ঘোড়াদিঘির পশ্চিমপাড়ে অবস্থিত।
১৯৬৪ খৃ: এই মসজিদ মেরামতের জন্য ৫ বছরের একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। চারদিকের দেওয়াল, চারকোনার প্রবেশপথগুলোর ২ পাশে ইট দ্বারা মসজিদের ভেতরের ফাটল মেরামত; গম্বুজের হালকা হওয়া ইট পুনঃস্থাপন; কাটা ইট দ্বারা ধনুক বক্র ছাদ কিনারা নির্মাণ; ছাদে চুনের টেরাস করা; মসজিদের অভ্যন্তরে পিটানো মেঝে তৈরি; মসজিদ এলাকা থেকে আগাছা পরিষ্কার এবং কাঁটাতারের বেড়া স্থাপন করা হয়। আস্ত ইট ও চুন-সুরকির সাহায্যে কাজ করা হয়। পোড়ামাটির নকশা অলংকরণের সংস্কার করা হয়।
১৯৮৫-৮৬ খৃ: এর দিকে এ ঐতিহাসিক মসজিদটি সংস্কার করে কাঠের ফ্রেমে আবদ্ধ পূর্ববর্তী লোহার জাল অপসারণ করে প্রবেশ পথগুলোতে লোহার গ্রিল স্থাপন করা হয়। কাটা ইটের গাঁথুনি ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করা হয়।
নাম থেকেই বোঝা যায় যে, মসজিদটি বিবি বেগনি নামে একজন নারী কর্তৃক নির্মিত, যাঁর পরিচয় সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি। স্থানীয় একটি জনশ্রুতি মতে, তিনি ছিলেন হযরত খান জাহান আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আহলিয়াদের মধ্যে একজন।
বিবি বেগনি মসজিদটি ইটের তৈরি। এর চার কোণে চারটি মিনার রয়েছে। মসজিদের বাইরে মিনারসহ প্রতি দিকের দৈর্ঘ্য ১৬.১৫ মিটার ও ভেতরে ১০.০৫৮ মিটার এবং দেয়ালগুলি ৩.০৪৮ মিটার পুরু। পূর্ব দেয়ালে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে একটি করে খিলান আকারের প্রবেশপথ রয়েছে। পূর্ব দিকের মধ্যবর্তী প্রবেশপথটি পাশেরগুলি থেকে সামান্য একটু বড় এবং উচ্চতা ও প্রস্থে উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালের দরজাগুলির সমান। কিবলা দেয়ালের ভেতর দিকে রয়েছে অর্ধবৃত্তাকার খিলানযুক্ত তিনটি মিহরাব। মাঝখানেরটি অন্য দুটির চেয়ে আকারে বড় এবং দেয়ালের বহির্ভাগে আয়তাকারে বর্ধিত। এ মিহরাব অবয়ব স্থানীয় অন্যান্য মসজিদ থেকে ভিন্নতর। উভয় পার্শ্বের কোণদ্বয়ের উপর একটি করে বৃত্তাকার চূড়ার অবস্থান এর নির্মাণশৈলীতে আংশিক ব্যত্যয় ঘটিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ইংরেজি অক্ষরের ‘ইউ’ কে উল্টো করলে যেরকম ধনুকাকৃতির হয় সেই ধরনের কাঠামোকেই সাধারণত স্থাপত্য পরিভাষায় খিলান বলা হয়। খিলান এক ধরনের বাঁকা কাঠামো যা একটি উঁচু স্থান প্রসারিত করে এবং উঁচু গম্বুজের আকৃতির স্থানটি এটির উপরে ভার থাকে বা নাও থাকতে পারে। খিলান গুম্বুজের মত দেখতে হলেও, গম্বুজকে ছাদ গঠনের একটি অবিচ্ছিন্ন খিলান হিসাবে গণ্য করা হয়।
মসজিদের তিনটি প্রবেশপথ রয়েছে। মধ্যের প্রবেশপথটি বৃহৎ এবং এটি একটি আয়তাকার ফ্রেমের মধ্যে আবদ্ধ। এ ফ্রেমের মধ্যে আগে পোড়ামাটির অলংকরণ ছিল।
মসজিদের সম্মুখদিকের বহির্ভাগে কোনো অলংকরণ নেই। এদিকে একটি প্রবেশপথ আছে। এ প্রবেশপথের আয়তাকার ফ্রেমের মধ্যে পোড়ামাটির নকশা আছে।
মসজিদের অভ্যন্তর ভাগটি বর্গাকার এবং এর ওপর একটি গম্বুজ আছে। মিহরাবগুলোর অভ্যন্তরে শিকল ঘণ্টার প্রতিকৃতি এবং পোড়ামাটির অন্যান্য অলংকরণ আছে। গুম্বুজের ভেতরের চারটি কোণাই খানিয়া দিঘি মসজিদ ও সোনারগাঁওর গোয়ালদি মসজিদের অনুরূপ। প্রতি দেওয়ালে দুটি করে মোট আটটি সংযুক্ত স্তম্ভ আছে।
কিবলা দেওয়ালে তিনটি অর্ধবৃত্তাকার মিহরাব আছে। মূল মিহরাব অংশটি মধ্য বরাবর পশ্চিম দিকে অবস্থিত এবং এই মিহরাবটি অপেক্ষাকৃত বৃহৎ। এই মিহরাবের নিচ থেকে উপরের অংশের দুই দিকে দুটি সংযুক্ত বৃত্তাকার ক্ষুদ্র স্তম্ভ দেখা যায়। এগুলোর গায়ে পোড়ামাটির অলংকরণ দেখা যায়। দুই দিকের মিহরাব দুটি অপেক্ষা মধ্যের মিহরাবটিতে পোড়ামাটির অলংকরণ প্রচুর পরিমাণে দেখা যায়।
মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ প্রাচীরে দুটি করে মোট চারটি ক্ষুদ্র কুলুঙ্গি আছে। কুলুঙ্গি মূলত মূল ভবন থেকে কিছুটা বেড়িয়ে থাকা বদ্ধ জানালার মতো দেখতে। প্রধান মিহরাবের ২ দিকে একটি করে অত্যন্ত ক্ষুদ্র দুটি কুলঙ্গি রয়েছে ধারণা করা হয়, এগুলোর মধ্যে বাতি জ্বালানো হতো। ভেতরের প্রাচীরে বিভিন্ন স্থানে চুনের আস্তর দেখা যায়। সূত্র: বাংলাপিডিয়া ও ইন্টারনেট।
-মুহম্মদ নাঈম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
অনন্য স্থাপত্যের নজির বাংলাদেশে: মসজিদে নববী শরীফ উনার হুবহু নকশায় রাজারবাগ শরীফে সুন্নতী জামে মসজিদ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়েছিল সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’দাদ শরীফ মহাসম্মানিত ১২ই শরীফে
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
অনন্য নিদর্শন সভ্যতার স্বর্ণযুগে গ্রন্থবাঁধাই (৩)
০১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুসলিম স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন খাগড়াছড়ির সবচেয়ে পুরনো ঐতিহাসিক শাহী জামে মসজিদ
১৭ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
অনন্য নিদর্শন সভ্যতার স্বর্ণযুগে গ্রন্থবাঁধাই (২)
১৩ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম নিদর্শন ঐতিহাসিক চন্দনপুরা তাজ মসজিদ (২)
১১ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম নিদর্শন ঐতিহাসিক চন্দনপুরা তাজ মসজিদ (১)
১০ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছাহাবী সাইয়্যিদুনা হযরত আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মসজিদ (৫)
০৫ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছাহাবী সাইয়্যিদুনা হযরত আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মসজিদ (৪)
২৯ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বাবা আদম শহীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাজার শরীফ ও মসজিদ
২৭ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইউরোপে মুসলিম সভ্যতার অন্যন্য এক নিদর্শন “বিবি-হায়েবাত মসজিদ”
২৪ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র মসজিদে কুবা শরীফ
২৩ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছাহাবী সাইয়্যিদুনা হযরত আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মসজিদ (৩)
১২ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)