পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফ উনার ফাযায়িল-ফযীলত (৫)
পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার পবিত্রতা রক্ষা করা সকলের জন্যেই ফরয
, ২৫ শাবান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৮ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ০৭ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ২৩ ফাল্গুন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পবিত্র রমাদ্বান মাস উনার প্রথম দশদিন রহমতের, দ্বিতীয় দশদিন মাগফিরাতের ও শেষ দশদিন নাযাতের। পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার বুযূর্গী সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে,
مَنْ اكْرَم شهر الله رمضان اكرمه الله تعالـى بالـجنة
অর্থ : যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার মাস পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনাকে সম্মান করলো মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে সম্মানিত জান্নাত দিয়ে সম্মানিত করবেন। সুবহানাল্লাহ!
কিতাবে উল্লেখ আছে যে, একজন বুযূর্গ ব্যক্তি একবার স্বপ্নে দেখেন- এক ইহুদী মহিলা সম্মানিত জান্নাতে বিচরণ করছেন, খুব আরাম-আয়েশে আছেন। বুযূর্গ ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে মহিলা! আপনি তো ইহুদী ছিলেন, আপনি কি করে সম্মানিত জান্নাতে গেলেন? সম্মানিত দ্বীন ইসলাম আসার পর সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ না করে যে সকল বিধর্মী মারা যাবে তারা তো সম্মানিত জান্নাতে যেতে পারবে না বরং তারা চির জাহান্নামী হবে। ’
জবাবে ইহুদী মহিলা বললেন, ‘হে বুযূর্গ ব্যক্তি! মহান আল্লাহ পাক তিনি একটি আমলের ওসীলায় আমাকে ঈমান দান করেছেন ও ইন্তিকালের পর সম্মানিত জান্নাত নছীব করেছেন। ’ বুযূর্গ ব্যক্তি বললেন, ‘কোন আমলের ওসীলায় আপনি নাজাত পেলেন?’ ইহুদী মহিলা বললেন, ‘আমার ইন্তিকালের পূর্বে যে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ ছিলো সেই পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে দিনের বেলায় আমি আমার ছোট সন্তানকে নিয়ে কিছু খাদ্য খরিদ করার জন্য বাজারে যাই। তখন আমার ছোট সন্তানকে কিছু রুটি বিস্কুট কিনে দেই। সে সন্তান রুটি-বিস্কুট পেয়ে সাথে সাথে খেতে শুরু করে। যেহেতু সে অবুঝ শিশু। তখন আমি তাকে একটি আঘাত করে বলি, হে বালক! এটা মুসলমানদের পবিত্র মাস। এ মাসে প্রকাশ্যে কিছু খেতে হয় না। এ মাসকে সম্মান করা উচিত। ’ এ কথা বলে আমি তার হাত থেকে রুটি-বিস্কুট নিয়ে নেই। ইহুদী মহিলা বললেন, এভাবে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনাকে তা’যীম করার ওসীলায় মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে সম্মানিত ঈমান দান করেন এবং সম্মানিত ঈমানের সাথে ইন্তিকাল দান করে সম্মানিত জান্নাত নসীব করেন। ’ সুবহানাল্লাহ!
এখন ফিকিরের বিষয় যে, একজন অমুসলিম পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনাকে তা’যীম-তাকরীম বা ইজ্জত-সম্মান করার কারণে যদি তার সম্মানিত ঈমান ও সম্মানিত জান্নাত নছীব হয়, তবে যদি কোন মুসলমান পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনাকে তা’যীম-তাকরীম বা ইজ্জত-সম্মান করে, সকল স্কুল-কলেজ, মাদরাসা, বিশ্ববিদ্যালয় অর্থাৎ সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখে, তবে সে কতটুকু ফযীলত লাভ করবে তা সত্যিই চিন্তা-ফিকিরের বিষয়।
অথচ আজকাল মুসলমান উনারাই পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার গুরুত্ব, সম্মান ও পবিত্রতা বুঝে না ও মানে না। তারা পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার মধ্যে প্রকাশ্যে খানাপিনা করে, বেপর্দা চলে, গান-বাজনা, সিনেমা-নাটক, নোবেল, খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। অথচ এ সমস্ত হারাম কাজ থেকে বিরত থাকা সকল মুসলমান উনাদের জন্য ফরয-ওয়াজিব।
এখন দেখা যায়- পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার মধ্যেও স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি খোলা রাখা হয়। এবং নানা পরীক্ষা, কোচিং ইত্যাদির নামে ছাত্র-ছাত্রীদের এমন ব্যস্ত রাখা হয় যার ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা অধিকাংশই রোযা রাখে না। অথচ তারা মুসলমান। পবিত্র রোযা তাদের দ্বীনের প্রধান ভিত্তি ও ফরয আমল।
ইহুদী-নাছারারা জানে কী করে মুসলমান উনাদের শক্তিহীন ও দুর্বল করতে হয়। তারা জানে, মুসলমান উনারা যখন মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত যুক্ত থাকেন তখন তাদের পরাস্ত করা দুনিয়ার কোন শক্তির পক্ষে সম্ভব নয়। তাই ইহুদী নাছারারা এমন ষড়যন্ত্র করছে যাতে করে মুসলমান উনাদের রহমতশূন্য করা যায়। নাঊযুবিল্লাহ!
কাজেই ইহুদী, মুশরিক, নাছারারা ছবি ও বেপর্দার পাশাপাশি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার মধ্যেও মুসলমান উনাদের নানা ছূতা-নাতায় ব্যস্ত রেখে তাদেরকে রহমতশূন্য করে রাখে। স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আরো বেশি পরীক্ষা, কোচিং, পড়া-লেখার চাপ ইত্যাদি দেয়া হয়। অনেক সময় ঈদের পর পরই বিশেষ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়। তাতে করে সে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে গিয়েও রোযা রাখে না। অর্থাৎ মুসলমান শিক্ষার্থীদেরকে রোযা থেকে বিরত রাখাই তাদের উদ্দেশ্য। নাঊযুবিল্লাহ!
কাজেই, বাংলাদেশ সরকারের জন্য দায়িত্ব-কর্তব্য হবে, প্রতি বছর পবিত্র রমাদ্বান মাস উনার পূর্ব থেকেই ছুটি ঘোষণা করা এবং এ সিদ্ধান্ত দায়িমীভাবে বলবৎ রাখা।
এছাড়া, পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার সম্মানার্থে ও পবিত্রতা রক্ষার্থে সব দেশের সরকারের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে- গান-বাজনা, বেপর্দা, ছবি, টিভি চ্যানেল, সিনেমা, নাটক, নোবেল, খেলাধুলা, সর্বপ্রকার অশ্লীল বিলবোর্ড ইত্যাদিসহ সর্বপ্রকার হারাম থেকে মুসলমান উনাদেরকে বিরত রাখা। এর পাশাপাশি স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখা। যাতে করে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার সাহরী, পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, পবিত্র যিকির-ফিকির, পবিত্র তাসবীহ-তাহলীল, পবিত্র ইফতারী, পবিত্র তারাবীহ নামায ইত্যাদি যথাযথভাবে ইতমিনানের সাথে পালন করে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার ফযীলত তথা রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত পরিপূর্ণ হাছিল করতে পারে। যদি প্রত্যেক সরকার এরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং মুসলমান উনারা পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার হক্ব আদায় করে পরিপূর্ণ রহমত অর্জন করতে পারে তবে দুনিয়ার সব শক্তিই মুসলমান উনাদের কাছে পদানত থাকবে। ইনশাআল্লাহ!
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
খরচ করার ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক উনার ফায়সালা
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৫)
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা (১)
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম, যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বিজাতীয় বিধর্মী তথা ইহুদী-নাছারাদেরকে অনুসরণ করা ইসলামী শরীয়তে হারাম-নাজায়িয
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র ‘ছলাতুল জুমুয়াহ’ উনার পূর্বে ৪ রাকায়াত সুন্নত নামায অর্থাৎ পবিত্র ‘ক্বাবলাল জুমুয়াহ’ নামায নিয়ে বাতিলপন্থিদের বিভ্রান্ত্রিকর ও মিথ্যা বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জাওয়াব (৬)
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ইলিম অর্জন করার পর সে অনুযায়ী যে আমল করে না, তার তিনটি অবস্থার যে কোনো একটি হবেই-
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৪)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঢিলা-কুলুখের বিধান
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বেপর্দা হওয়া শয়তানের ওয়াসওয়াসাকে সহজ করার মাধ্যম
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)












