স্থাপত্য-নিদর্শন
বন্দরের ঐতিহাসিক নিদর্শন বাবা সালেহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাজার শরীফ
, ০২ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০২ ছানী আ’শার, ১৩৯২ শামসী সন , ০১ মে, ২০২৫ খ্রি:, ১৮ বৈশাখ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) স্থাপত্য নিদর্শন

ঢাকার সোনারগাঁয়ে পবিত্র দ্বীন ইসলাম প্রচার করার জন্য যারা এসেছিলেন উনাদের মধ্যে হযরত হাজী বাবা সালেহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নাম উল্লেখযোগ্য। বাবা সালেহ রহমতুল্লাহি আলাইহি বাংলায় স্বাধীন সুলতানদের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি সুলতান জালালউদ্দিন ফতেহ শাহের শাসনামল থেকে আলাউদ্দিন হোসেন শাহের শাসনকাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময় সোনারগাঁও অঞ্চলে ছিলেন। কোন কোন বর্ণনা অনুযায়ী তিনি প্রশাসনিক একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন।
১৪৮২ খৃষ্টাব্দে তিনি বন্দরে শীতলক্ষ্যা নদীর বামতীরে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। ১৫০৪ খৃষ্টাব্দে তিনি আমীননগরে আরও একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। মসজিদের মিহরাবগুলো কালো পাথরের এবং মসজিদের সম্মুখের দেয়ালে পোড়ামাটির চিত্রফলক ছিলো। পরবর্তীকালে সংস্কারের ফলে এগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেছে। মসজিদের কার্ণিশ বক্রাকারে গঠিত। মসজিদের গায়ে যে শিলালিপি ছিলো, তা থেকে জানা যায় যে সুলতান নাসিরউদ্দীন মাহমুদের পুত্র সুলতান জামালউদ্দীন ফতেহ শাহের সময়ে ১৪৮২ খৃষ্টাব্দে বাবা সালেহ কর্তৃক এ মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো।
মসজিদটি বন্দর শাহী মসজিদ নামেও পরিচিত। বন্দর শাহী মসজিদ বা বাবা সালেহ রহমতুল্লাহি আলাইহি মসজিদ থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দক্ষিণে আরো একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। পুরাতন মসজিদের গায়ে যে শিলালিপি ছিলো তা থেকে জানা যায় যে, সুলতান হোসেন শাহের সময়কালে হাজী বাবা সালেহ কর্তৃক ১৫০৪ খৃষ্টাব্দে (৯১১ হিজরী) এ মসজিদ নির্মাণ করা হয়। এ শিলালিপির হাজী বাবা সালেহ ও পূর্বে বর্ণিত বন্দর শাহী মসজিদের শিলালিপির বাবা সালেহ এক ও অভিন্ন ব্যক্তি বলে প্রতীয়মান হয়। প্রথম মসজিদটি সম্ভবত তিনি হজ্জ করার পূর্বে নির্মাণ করেছিলেন। ২৪ বছর পর যখন তিনি পরবর্তী মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। তখন তিনি হজ্জ পালন করে এসেছিলেন।
হাজী বাবা সালেহ রহমতুল্লাহি আলাইহি মসজিদের পূর্ব দিকে একটি মাজার শরীফ দেখতে পাওয়া যায়। এ মাজার শরীফটি হাজী বাবা সালেহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাজার শরীফ। মাজার শরীফটির পুরনো ভবনটির চিত্র মুহম্মদ এনামুল হকের, পূর্ব পাকিস্তানের ইসলাম গ্রন্থে রয়েছে।
মাজার শরীফটি বর্গাকৃতির এক গম্বুজ বিশিষ্ট; এর পূর্ব ও পশ্চিম দিকে একটি করে খিলানকৃত প্রবেশপথ ছিলো। বর্তমানে পুরনো মাজার শরীফের স্থানে নতুন করে ভবন তৈরি করা হয়েছে। মাজার শরীফের পুরনো ভবনে আরবী ভাষার রীতিতে শিলালিপিতে উৎকীর্ণ করা ছিলো, ‘এটি হাজী বাবা সালেহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাজার শরীফ’। তিনি পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাসে ইন্তেকাল করেন। মাজার ভবনটি হাজী বাবা সালেহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইন্তেকালের পূর্বে নির্মাণ করেছিলেন বলে ধারণা করা হয় এবং মৃত্যুর তারিখটি সম্ভবত পরে উৎকীর্ণ করা হয়েছে।
মসজিদের শিলালিপির সাক্ষ্যমতে, বাবা সালেহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উপাধি ছিলো- আল-মালিক, আল-মুয়াজ্জম, আল-মুকাররম। তিনি একজন অত্যন্ত দ্বীনপরায়ণ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি হারামাইন শরীফ উনার খাদিমও ছিলেন। তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত নূরুদ দারাজাত মুবারক (কদম মুবারক) উনার ছাঁপ বা চিহ্ন মুবারক প্রত্যক্ষ করেছেন। ’
বাবা সালেহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নামেই বন্দর থানার বর্তমান সালেহনগর এলাকার নামকরণ হয়েছে। বাবা সালেহ মসজিদ সন্নিহিত উত্তর-পূর্ব দিকে উনাকে দাফন করা হয়। উনার ইন্তেকালের বছরই উনার মাজার শরীফের উপর গম্বুজ নির্মিত হয়।
তথ্য নির্দেশ ও টীকা:
আ কা মো যাকারিয়া, প্রাগুক্ত, ৪১ পৃষ্ঠা
মুহম্মদ এনামুল হক, পূর্ব পাকিস্তানে ইসলাম, বাংলাপিডিয়া।
-মুহম্মদ নাঈম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
চট্টগ্রামে ঐতিহাসিক বদর আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরগাহ (২)
১৪ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
চট্টগ্রামে ঐতিহাসিক বদর আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরগাহ (১)
০৭ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
২০০ বছরের প্রাণ ৪০০ মণ আম!
০১ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আরবের লিপিশিল্প: আরবি লিপিশিল্পে ব্যবহৃত উপকরণ, কলাকৌশল ও বৈশিষ্ট্য
২১ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মুঘল আমলের নিরাপত্তা নিদর্শন হাজীগঞ্জ দুর্গ
০৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রাচীন মসজিদের অজানা ইতিহাস
০৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
তাজ-উল-মসজিদ ভারতের সর্ববৃহৎ মসজিদ
২৯ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
টাইম ম্যাগাজিনের তালিকায় আশুলিয়ার জেবুন নেসা মসজিদ
২১ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
বাগেরহাটের ঐতিহাসিক চুনাখোলা মসজিদ
১৯ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (১৪)
১৪ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ঐতিহাসিক বানিয়াবাসী মসজিদ (৩)
১২ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ঐতিহাসিক বানিয়াবাসী মসজিদ (২)
০৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)