ইতিহাস
বাংলাদেশে দ্বীন ইসলাম উনার আগমন ও মুসলিম শাসনের ইতিহাস (২)
, ২১ ছফর শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৯ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ২৭ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ১২ ভাদ্র , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) ইতিহাস
মালিক ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির বাংলা বিজয়ের পর থেকেই মূলত এ অঞ্চলে মুসলিম শাসনের ভিত্তি মজবুত হয়েছিলো। তার মাধ্যমে বাংলা বিজয়ের পর থেকে ক্রমাগত অব্যাহত গতিতে ভারতের পশ্চিমাঞ্চল, আফগানিস্তান, ইরান, আরব ও তুরস্ক থেকে অসংখ্য মুসলমান বাংলায় আগমন করতে থাকেন। অধিকাংশই এসেছিলেন সৈনিক হিসাবে, অবশিষ্টাংশ ব্যবসা-বাণিজ্য, দ্বীন ইসলাম প্রচার উনার উদ্দেশ্যে। এভাবে বাংলায় মুসলমানদের সংখ্যা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকলো।
বখতিয়ার খিলজি তিনি ছিলেন তুর্কিস্তানের খালজ বংশের। তাই তার বংশ পরিচয়ের জন্য তার নামের শেষে খালজী বা খিলজী শব্দ যুক্ত করা হয়। তার পূর্ব পুরুষদের আবাসভূমি ছিল সীস্তানের পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত গরমশিরে। বখতিয়ার খিলজী যুবক বয়সে নিজ জন্মভূমি ত্যাগ করে গজনী অতঃপর ভারতের বাদাউনে আগমন করেন। প্রথমাবস্থায় গজনী ও দিল্লীর সামরিক বাহিনীতে অনেক চেষ্টার পরও তিনি নিয়োগ পাননি। কিন্তু উনার মধ্যে যে অসীম সাহসিকতা ও দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনার যোগ্যতা ছিল তা বুঝতে পেরে বাদাউনের সিপাহসালার উনাকে সেনাবাহিনীতে নিযুক্ত করেন। এখান থেকেই মূলত উনার সৈনিক জীবনের সূচনা হয়। তরাইনের যুদ্ধের পর উনার চাচা মুহম্মদ ই মাহমুদ নাগাওরীর শাসনকর্তা আলী নাগাওরীর নিকট থেকে কষমন্ডী অধিকার লাভ করেন। উনার মৃত্যুর পর তা বখতিয়ার খিলজী তিনি লাভ করেন। কিছুকাল পর তিনি অযোধ্যার মালিক মুয়াজ্জম হিসামউদ্দীনের নিকট গমন করেন। এ সময় তিনি অশ্ব ও অস্ত্র-শস্ত্রাদি সংগ্রহ করেছিলেন বলে মালিক হিসামউদ্দীন তাকে দুটি গ্রাম প্রদান করেছিলেন। এই গ্রামগুলো থেকেই পরবর্তীতে তিনি বিহারের দিকে অগ্রসর হয়ে বিভিন্ন জায়গায় থাকা অত্যাচারী জমিদারদের পরাজিত করে প্রচুর মালে গণিমত হাছিল করেন। সেই অস্ত্র দিয়ে তিনি অত্যন্ত সুকৌশলী একটি সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন। উনার বীরত্বের খ্যাতিও খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ঘোর, গজনী, খোরাসান প্রভৃতি অঞ্চলে বার বার বিদ্রোহ, যুদ্ধবিগ্রহ থাকার কারণে সে সময় বহুসংখ্যক অধিবাসী দেশত্যাগ করে হিন্দুস্তানে আগমন করেন। বখতিয়ার খিলজি উনার সুখ্যাতি শ্রবণ করে তারা দলে দলে উনার সেনাবাহিনীতে যোগদান করতে থাকেন। ফলে প্রবল প্রতাপশালী হয়ে ওঠেন ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী।
বিহারের দিকে অগ্রসর হয়ে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী অত্যাচারী জমিদারদের পরাজিত করার পর অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠেন। উনার নামডাক বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। তৎকালীন দিল্লীর সুলতান কুতুবুদ্দীন আইবেক বখতিয়ার খিলজী রহমতুল্লাহি আলাইহির অসীম বীরত্বের কথা জানতে পেরে উনার সম্মানের জন্য ‘খিলাত’ প্রেরণ করেন এবং এতে করে উনার শক্তি ও সাহস বহুগুণে বেড়ে যায়। এরপর তিনি সমগ্র বিহার প্রদেশে আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হন। অতঃপর তিনি বাংলার দিকে অগ্রসর হন এবং ১২০৩ সালে বাংলার রাঢ় ও বরিন্দ অঞ্চল বিজয় করেন।
বাংলা আক্রমণকালে এর শাসক ছিলো লক্ষèন সেন। তার রাজধানী ছিলো নদীয়া।
বিখ্যাত ঐতিহাসিক গ্রন্থ ‘তাবাকাতে নাসিরী’ এর মধ্যে উল্লেখ রয়েছে, লক্ষèন সেনের এক গণক ভবিষ্যদ্বানী করলে বলে যে, এ দেশ অচিরেই তুর্কি মুসলমানদের হস্তগত হবে। দেশ আক্রান্ত হলে বাংলার শাসককে বশ্যতা স্বীকার করতে হবে। অন্যথায় প্রচুর রক্তপাত ও লাঞ্চনার সম্মুখীন হতে হবে। তখন লক্ষণ সেন জিজ্ঞাসা করে, সেই মুসলিম অভিযানকারীর কোনো চিহ্ন বর্ণনা আছে কিনা, যা দেখে উনাকে যথাসময়ে চিনতে পারা যায়? তখন তারা বললো, সেই তুর্কি সিপাহসালার সোজা দন্ডায়মান হলে উনার হাত হাটু পর্যন্ত লম্বা হবে। তখন লক্ষন সেন এ ব্যাপারে অনুসন্ধানের জন্য লোক প্রেরণ করলো। তারা অনুসন্ধানের পর জানালো, বাংলার দিকে এগিয়ে আসতে থাকা মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি রহমতুল্লাহি আলাইহির মধ্যে উক্ত সব চিহ্নই বিদ্যমান। তখন লক্ষন সেন ভয় পেয়ে গেলো এবং পলায়নের জন্য চিন্তা করতে থাকলো। এদিকে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি একদিন হঠাৎই নদীয়া আক্রমণ করে বসলেন। তিনি সোজা পথে আক্রমন না করে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে নদীয়ার দিকে আসতে থাকলেন। তিনি এত দ্রুত নদীয়া শহরের গেটে পৌঁছলেন যে উনার সাথে মাত্র ১৭ জন সৈন্য আসতে পেরেছিলেন।
শহর প্রবেশ করার সময় এত কম মানুষ দেখে উনাদের শহরের প্রহরীরা ঘোড়ার ব্যবসায়ী মনে করে বাধা দেয়নি। পরবর্তীতে যখন তিনি শহরে প্রবেশ করে এর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিলেন এবং উনার মূল বাহিনীও এসে পড়লো ততক্ষণে পুরো শহর বিজয় হয়ে গেছে এবং লক্ষণ সেন তার প্রাসাদের পেছনের দরজা দিয়ে পলায়ন করে এবং পাশ্ববর্তী বিক্রমপুরে আত্মগোপন করে। এভাবেই বিনা রক্তপাতে নদীয়া বিজয় করেন বাংলাবিজয়ী ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী রহমতুল্লাহি আলাইহি। (অসমাপ্ত)
-মুহম্মদ শাহ জালাল।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪০)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কেমন ছিলো মোঘল সালতানাতের গোলন্দাজ এবং অশ্বারোহী বাহিনী
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পান্থনিবাস ও সরাইখানা নির্মাণে মুসলমানদের অনবদ্য অবদান
২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৯)
১৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুসলমানদের শিক্ষা-দীক্ষার বিরোধিতায় বিধর্মী-অমুসলিমরা
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাংলার হিন্দু ধনিক-বণিক, বেনিয়া শ্রেণী, ব্যাংকার প্রভৃতির সাথে এক গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মুসলিম
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইউরোপকে যেভাবে সমৃদ্ধ করেছেন আফ্রিকান মুসলমানরা
১২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
গুজরাটের সুলতান মুজাফফর শাহের পরহেজগারিতা এবং ভ্রাতৃত্ববোধ
০২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৭)
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কেমন ছিলেন ইসলামী ইতিহাসের প্রথম আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঐতিহাসিক মুসলিমবাগ ঈদগাহ-ই কি আজকের ঢাকেশ্বরী মন্দির?
২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
১২টি চন্দ্রমাসের নাম এবং নামকরণের সার্থকতা (২)
২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












