বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত উওয়াইস বিন ‘আমির আল-ক্বারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩)
জীবনী মুবারক
, ২৩ ছফর শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১১ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ২৬ ভাদ্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাদের সাথে সাক্ষাত:
পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাদেরকে লক্ষ্য করে ইরশাদ মুবারক করেন, আপনারা উভয়ে উওয়ায়েস ক্বারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাক্ষাত পাবেন। যখন আপনারা উনার সাক্ষাত পাবেন, তখন আপনারা উনাকে বলবেন তিনি যেন আপনাদের উভয়ের জন্য খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট মাগফিরাতের দোয়া করেন।
অতঃপর উনারা উভয়ে একাদিক্রমে ১০ বছর পর্যন্ত হযরত উওয়ায়েস ক্বারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অন্বেষণ করতে থাকেন। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে উনার সাক্ষাত পাননি। অতঃপর যে বছর সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি শাহাদাত বরণ করেন, সেই বছরের শেষ ভাগে একবার সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফে আবু কুবায়েস পাহাড়ে উঠে উচ্চ আওয়াজে ঘোষণা করেন, হে ইয়ামানের অধিবাসী হাজীগণ! আপনাদের মধ্যে মুরাদ গোত্রের উওয়ায়েস নামে কোন লোক আছেন কি?
অতঃপর লম্বা দাঁড়ি বিশিষ্ট এক বৃদ্ধ লোক দাঁড়িয়ে বললেন, আমরা জানি না, আপনি উওয়ায়েস বলতে কাকে বুঝাচ্ছেন? তবে আমার এক ভ্রাতুষ্পুত্র আছেন, যাঁর নাম উওয়ায়েস। তিনি কোন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি নন, অর্থ সম্পদ শূণ্য, উনার কথা আপনার নিকট উল্লেখ করা আমরা সমীচীন মনে করি না। তিনি আমাদের উট চরান, আমাদের মধ্যে অত্যন্ত অভাবগ্রস্ত লোক। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি এই লোক থেকে উনার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলেন, যেন তিনি এ বিষয়ে শুনতে আগ্রহী নন।
অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার সে ভ্রাতুষ্পুত্র কোথায়? লোকটি বললেন, তিনি আরাফাতের ময়দানে উট চরাচ্ছেন। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম ও সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনারা তাড়াতাড়ি বাহনে চড়ে আরাফাতের দিকে রওয়ানা হলেন। সেখানে গিয়ে দেখতে পেলেন, হযরত উওয়ায়েস ক্বারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি একটি গাছের নিকট দাঁড়িয়ে নামায পড়ছেন। আর উনার চার দিকে উনার উটসমূহ চরছে। অতঃপর উনারা দুইজন উনাদের বাহনসমূহ বেঁধে হযরত উওয়ায়েস ক্বারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দিকে অগ্রসর হলেন। উনারা উভয়ে উনাকে সালাম দিলেন। হযরত উওয়ায়েস ক্বারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নামায সংক্ষিপ্ত করে সালামের জবাব দিলেন, আপনাদের উপরও সালাম, মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক।
উনারা উভয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার পরিচয় কি? তিনি উত্তর দিলেন, আমি একজন উট চালক, এবং কওমের আশ্রিত। উনারা বললেন, আমরা আপনাকে উট চরানো বা আশ্রিত হওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করছি না। আপনার নাম কি বলুন? তিনি উত্তর দিলেন, আমার নাম আবদুল্লাহ, অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার বান্দা। উনারা বললেন, আমরা জানি আসমান যমিনে যা কিছু আছে সবই মহান আল্লাহ পাক উনার আব্দ বা গোলাম। আপনার মাতা আপনার কি নাম রেখেছিলেন, তা-ই বলুন? তিনি বললেন, আপনারা আমার নিকট কি চান? উনারা বললেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের নিকট উওয়ায়েস আল-ক্বারানী উনার বর্ণনা দিয়েছেন। তা থেকে আমরা আপনাকে চিনতে পেরেছি। তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেছেন, আপনার বাম কাঁধের নিচে একটি শ্বেত দাগ রয়েছে। এখন আপনি ইহা আমাদেরকে দেখান। যদি এই দাগ থাকে তবে আপনিই উওয়ায়েস।
যখন তিনি উনার কাঁধ দেখালেন, উনারা উক্ত শ্বেত দাগ দেখতে পেলেন। উনারা উভয়ে তাড়াতাড়ি উহাতে চুম্বন দিলেন এবং বললেন, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনিই উওয়ায়েস ক্বারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি। উনারা বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে ক্ষমা করুন, আপনি আমাদের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তিনি বললেন, আমি তো কোন আদম সন্তানের জন্য খাছভাবে দোয়া করি না। বরং পানিতে স্থলে সর্বত্র সকল মুসলমান ও ঈমানদার নর-নারীর জন্য দোয়া করে থাকি।
আমাকে খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক আপনাদের নিকট প্রকাশ করে দিয়েছেন। তবে এখন বলুন, আপনারা কে? সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উত্তর দিলেন, ইনি আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম, আর আমি আলী ইবনে আবী তালিব আলাইহিস সালাম। ইহা শুনে হযরত উওয়ায়েস ক্বারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বললেন, আছ সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু, হে আমীরুল মু’মিনীন! আর আপনাকেও হে হযরত ইমামুল আউওয়াল আলাইহিস সালাম! খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদেরকে এই উম্মতের পক্ষ থেকে উত্তম বিনিময় দান করুন। উনারা বললেন, এবং আপনাকেও খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক তিনি উত্তম বিনিময় দান করুন। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আপনি এ স্থানে অবস্থান করুন, আমি পবিত্র মক্কা শরীফে গিয়ে আপনার খরচের জন্য কিছু নিয়ে আসছি। আর আমার এই কাপড়খানা আপনার নিকট রেখে যাচ্ছি, আমার ও আপনার মধ্যে ওয়াদার সাক্ষ্য হিসাবে। তিনি বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! আমার ও আপনার মধ্যে কোন ওয়াদার প্রয়োজন নেই। আমার মনে হয় না, আজকে দিনের পর আমাকে আবার পাবেন। খরচা দিয়ে আমার কি হবে? কাপড় দিয়েই বা আমার কি হবে? আপনি কি দেখছেন না, আমার একটি পশমি ইযার (লুঙ্গী) ও একটি পশমি চাদর রয়েছে। এগুলো ছিঁড়ে যাওয়া পর্যন্ত আমি বেঁচে থাকব, তা আপনি কি নিশ্চিতভাবে বলতে পারেন? আপনি কি বলতে পারেন, আমার এই পুরাতন সেন্ডেল জোড়া অকেজো হওয়া পর্যন্ত আমি বেঁচে থাকব? আমি পশু চরিয়ে পারিশ্রমিক হিসাবে ৪ দিরহাম পেয়েছি, আপনি কি বলতে পারেন ইহা খেয়ে শেষ করা পর্যন্ত আমি অবকাশ পাব? হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনার এবং আমার সম্মুখে রয়েছে একটি বিস্তীর্ণ সংকটপূর্ণ উপত্যকা যা হালকা বোঝা না হলে কোন পথিক অতিক্রম করতে পারবে না। তিনি আরো বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনি এ পথ ধরুন, আর আমি এই পথ ধরি। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফের পথ ধরলেন। আর হযরত উওয়ায়েস ক্বারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার উটগুলি হাঁকিয়ে নিয়ে চললেন এবং উটের মালিককে উটগুলি সোপর্দ করে নিজে এ কাজ থেকে অব্যাহতি নিলেন। অতঃপর তিনি বিছাল শরীফ পর্যন্ত খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল থাকলেন। (হিলইয়াতুল আওলিয়া) (চলবে)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হাযির-নাযির শান মুবারক (১)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আল্লাহওয়ালী মহিলা উনাদের তিনটি বৈশিষ্ট্য-
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












