বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত উওয়াইস বিন ‘আমির আল-ক্বারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৫)
জীবনী মুবারক
, ২৫ ছফর শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৩ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ২৮ ভাদ্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি হযরত উওয়াইস রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সব কথা শুনে চুপ করে রইলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, হে উওয়াইস রহমতুল্লাহি আলাইহি! আপনি কেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে সাক্ষাত করেননি? উত্তরে তিনি বললেন, আপনারা তো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখেছেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি হাঁ বললে, হযরত উওয়াইস রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, সম্ভবতঃ আপনারা উনার জুব্বা মুবারকও দেখেছেন।
এরপর তিনি বললেন, আপনারা কি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বতকারী? উনারা উত্তরে হাঁ বললে, হযরত উওয়াইস রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, যদি আপনারা উনার প্রকৃত মুহব্বতকারী হতেন, তাহলে শত্রুরা যেদিন উনার মহাপবিত্র নূরুল্লাহ বা দাঁত মুবারক শহীদ করে, সেদিন কেন আপনারা নিজেদের দাঁত ভেঙ্গে ফেললেন না? অতঃপর তিনি নিজ দাঁতগুলো উনাদেরকে দেখালেন। উনার সব কয়টি দাঁতই ভাঙ্গা ছিল। তিনি বললেন, আমি চর্মচক্ষে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে না দেখেই নিজের দাঁতগুলি ভেঙ্গে ফেলেছি। কেননা, আমি যখন একটি দাঁত ভাঙ্গলাম, মনে সন্দেহ হলো, হয়তবা উনার অন্য দাঁত মুবারক শহীদ হয়েছে। এভাবে একে একে সমস্ত দাঁতই ভেঙ্গে ফেললাম। এ কথা শুনে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম ও সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাদের শরীর কেঁপে উঠল। উনারা বুঝতে পারলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি হযরত উওয়াইস রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুহব্বত বেমেছাল। তখন উনারা পরস্পর বলাবলি করতে লাগলেন, ইনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখেননি, অথচ উনার প্রতি কত গভীর মুহব্বত। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আমার জন্য আপনি দোয়া করুন। হযরত উওয়াইস রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, আমি প্রত্যেক নামাযে তাশাহ্হুদে এই দোয়াই করে থাকি, আয় বারে ইলাহী! মু’মিন নর-নারীকে ক্ষমা করুন! হে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম! যদি কেউ ঈমান নিয়ে কবরে যেতে পারেন, তখন দোয়া উনাকে তালাশ করবে। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আমাকে আরো নছীহত করুন। হযরত উওয়াইস রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, হে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম! আপনি কি মহান আল্লাহ পাক উনাকে চিনেছেন? তিনি বললেন, হাঁ, নিশ্চয়ই চিনেছি। হযরত উওয়াইস রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, যদি উনাকে ব্যতীত অন্য কাউকে না চিনেন, তবে সেটাই উত্তম। হযরত উওয়াইস রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি কি আপনাকে জানেন? তিনি বললেন, হাঁ, জানেন। হযরত উওয়ায়েস রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, যদি তিনি ব্যতীত অন্য কেউ আপনাকে না জানেন, তাতেও আপনার কোন ক্ষতি নেই। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, একটু অপেক্ষা করুন, আমি আপনার জন্য কিছু নিয়ে আসি। হযরত উওয়াইস রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজের হাত পকেটে প্রবেশ করিয়ে দু’টি পয়সা বের করে বললেন, ইহা আমি উট চরিয়ে উপার্জন করেছি। যদি আপনি এটা নিশ্চিত করে বলতে পারেন যে, এটা খরচ না করা পর্যন্ত আমি জীবিত থাকব, তাহলে আমি আরো গ্রহণ করতে পারি। অতঃপর হযরত উওয়াইস রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, অনেক কষ্ট পেয়েছেন। এখন ফিরে যেতে পারেন। ক্বিয়ামত খুব নিকটে, সেখানেই আপনার সাথে আবার দেখা হবে। আমি এখন ক্বিয়ামতের পাথেয় সংগ্রহে ব্যস্ত -- এই বলে হযরত উওয়ায়েস রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদেরকে বিদায় দেন। (তাযকিরাতুল আওলিয়া)
বিভিন্ন বর্ণনা থেকে বুঝা যায়, হযরত উওয়াইস রহমতুল্লাহি আলাইহি এক সময় ইয়ামেন থেকে কূফায় আসেন। এখানে তিনি নিজের অবস্থা গোপন রাখতে চেষ্টা করতেন। অপরিচিত ভীনদেশী লোক হওয়ায় এবং উনার দরিদ্রতা ও অসহায়তার কারণে লোকেরা উনাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যভাবে আচরণ করত। পাগল মনে করে ছেলেরা উনাকে কষ্ট দিত। কিন্তু এসব তিনি নীরবে সহ্য করতেন। কোন অবস্থাতেই নিজকে প্রকাশ করতেন না। একবার এইরূপ ঠাট্টা-বিদ্রুপকারী একটি লোক সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার মুখে হযরত উওয়াইস রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাদীছ শরীফ এবং মর্যাদা মর্তবার কথা শুনে কূফায় এসে লোকদের নিকট বর্ণনা করার পর উনার ব্যাপারে তাদের ধারণা পরিস্কার হয়। অতঃপর যখন উনার খ্যাতি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে, তিনি সাধারণ লোক থেকে আত্ম-গোপন করেন। কতিপয় ব্যক্তি যাঁরা উনার একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন এবং উনাকে মুহব্বত করতেন, উনাদের সাথে উনার সাক্ষাত হয়। উনাদের মধ্যে কয়েক ব্যক্তির সাক্ষাতকার বর্ণনা করা হলো। (চলবে)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ছহিবে নিসাব প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য পবিত্র কুরবানী দেয়া ওয়াজিব (১)
২৮ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২৮ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৮ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কাফিরদের রচিত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার মুসলমানদের জন্য নয় (২)
২৮ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র মীলাদ শরীফ বিষয়ে প্রথম দিকে যারা কিতাব রচনা করেছেন উনাদের মধ্যে অন্যতম হলেন হাফিয হযরত আবুল খত্ত্বাব ইবনে দাহিয়্যাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি। যিনি ছিলেন পবিত্র হাদীছ শাস্ত্রের অন্যতম গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব
২৮ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
নিজ থেকে হালালকে হারাম ও হারামকে হালাল বানানো নিষেধ
২৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দেশের কৃষি খাতে বিরাজমান সংকট ও উত্তরণের পথে আঞ্জুমানে আল ফাল্লাহ্ অর্থাৎ বাংলাদেশ কৃষক আঞ্জুমান নীতি আদর্শ বর্জিত পাল্টাপাল্টির অসুস্থ রাজনীতি পরিহার করুন, কৃষি খাতকে রক্ষা করুন।
২৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
শরীয়ত বিরোধী কাজ দেখলেই বাধা দেয়া ঈমানের আলামত
২৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
উলামায়ে সূ’ ধর্ম ব্যবসায়ীদের পরিচিতি ও হাক্বীক্বত (৬)
২৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)