বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত উওয়াইস বিন ‘আমির আল-ক্বারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৬)
জীবনী মুবারক
, ২৬ ছফর শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৪ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ২৯ ভাদ্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
হযরত হারাম বিন হায়্যান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে সাক্ষাত:
অতঃপর হযরত হারাম বিন হায়্যান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাক্ষাত পেয়েছিলেন। (কোন কোন কিতাবে উনার নাম হযরত হারাম বিন জাবান রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখা হয়েছে তা ঠিক নয়। আরবীতে হারাম বিন হায়্যান এইভাবে লিখা হয়:
هرم بن حيان হযরত হারাম বিন হায়্যান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একজন প্রথম তব্কার তাবেঈ, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার ছোহবত মুবারকপ্রাপ্ত মুহাদ্দিছ এবং উচ্চ স্তরের ‘আবিদ, যিনি বছরার অধিবাসী ছিলেন। (তাবাকাত)
তিনি বলেন, যখন আমি হযরত উওয়াইস রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কথা শুনলাম, তখন উনাকে দেখার আকাঙ্খা আমার প্রবল হলো। আমি কূফায় এসে উনার অনুসন্ধান করতে লাগলাম। হঠাৎ একদিন উনাকে ফোরাত নদীতে ওযূ করতে ও কাপড় ধৌত করতে দেখলাম। পূর্বে উনার যেসব লক্ষণের কথা শুনেছিলাম, সে অনুসারে উনাকে চিনে সালাম দিলাম। তিনি সালামের জাওয়াব দিয়ে আমার দিকে চাইলেন। আমি উনার সাথে মোছাফাহা করতে চাইলে তিনি হাত বাড়িয়ে দিলেন না। আমি বললাম, হযরত উওয়াইস রহমতুল্লাহি আলাইহি! মহান আল্লাহ পাক আপনার প্রতি রহম করুন ও আপনাকে ক্ষমা করুন। হযরত উওয়াইস রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রতি আমার বিশেষ শ্রদ্ধা ও মুহব্বতের দরুণ উনার দীনতা দেখে আমি কেঁদে ফেললাম। হযরত উওয়াইস রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও কেঁদে বললেন, হে হারাম বিন হায়্যান! মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার হায়াত দারাজ করুন। আপনি কি জন্য এখানে এসেছেন এবং কে আপনাকে আমার সন্ধান দিয়েছে? আমি বললাম, আপনি আমার ও আমার পিতার নাম কি করে জানলেন? তিনি বললেন: نَبَّانِىَ الْعَلِيْمُ الْخَبِيْرُ (যাঁর জ্ঞানের অগোচর কিছুই নেই, তিনি আমাকে আপনার সন্ধান জানিয়েছেন)। আমার রূহ আপনার রূহকে চিনেছে, কেননা মু’মিনগণের রূহ মহান পরওয়ারদিগার উনার সাথে সংযুক্ত থাকে। এরপর আমি বললাম, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে কিছু বলুন। তিনি উত্তরে বললেন, আমি উনাকে প্রত্যক্ষভাবে দেখিনি, উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ অন্যদের কাছে শুনেছি মাত্র। আমি বক্তা, মুফতি অথবা মুহাদ্দিছ হতে চাই না। আমার অন্য কাজ আছে, সুতরাং আমি এ ব্যাপারে লিপ্ত হতে পারি না। তা শুনে আমি বললাম, তাহলে একটু পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠ করুন, আমি শুনি। উত্তরে তিনি
أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ
পড়ে কাঁদতে লাগলেন। তারপর বললেন, খলিক, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إلَّا لِيَعْبُدُوْنِ- وَ مَا خَلَقْنَا السَّمَاءَ وَ الْإَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا لَاعِبِيْنَ- وَمَا خَلَقْنَاهُمَا إلَّا بِالْحَقِّ وَلَكِنَّ أكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ-
অর্থ: আমি জীন ও মানব জাতিকে শুধু আমার ইবাদত করার জন্যই সৃষ্টি করেছি। আমি আসমান ও যমীন এতদুভয়ের মধ্যে যা কিছু আছে সে সবকে খেলার বস্তু হিসাবে তৈরী করিনি। এই উভয়টিকে সত্য ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিনি। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।
তারপর তিনি এত জোরে চিৎকার করেন যে, আমি ভাবলাম যে, তিনি বেহুঁশ হয়ে গেছেন। কিন্তু তিনি বললেন, ওহে ইবনে হায়্যান! কিসে আপনাকে এখানে নিয়ে এসেছে? আমি বললাম, আপনার বন্ধুত্ব ও ছোহবতের শান্তি আমাকে এখানে টেনে এনেছে। তিনি বললেন, যে মহান আল্লাহ পাক উনাকে চিনেছে, সে উনাকে ছাড়া অন্য কারো সাথে বন্ধুত্ব করে আরাম পেয়েছে বলে আমি জানি না। যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনাকে সত্যিকারভাবে চিনেছে সে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ছাড়া অন্যের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে কখনও সুখী হতে পারে না। প্রসঙ্গক্রমে আমি বললাম, আমাকে কিছু উপদেশ প্রদান করুন। তিনি বললেন, যখন নিদ্রা যাবেন, তখন মৃত্যুকে শিয়রে রাখবেন। আর জাগ্রত অবস্থায় মৃত্যুকে চোখের সামনে রাখবেন। কোন গুনাহকে ছোট বলে মনে করবেন না, বরং বড় বলে জানবেন। গুনাহকে ছোট মনে করাও বড় গুনাহ। যদি আপনি কোন গুনাহকে ছোট বলে মনে করেন, তবে আপনি যেন মহান আল্লাহ পাক উনাকে মিথ্যা বলে প্রতিপন্ন করলেন।
“আচ্ছা, আমি কোথায় বাস করব” জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, শাম দেশে (সিরিয়া)। আবার প্রশ্ন করলাম, সেখানে কীভাবে জীবিকা অর্জন করব? তিনি আফসোস করে বললেন, যে হৃদয়ে সন্দেহ এত প্রবল, উপদেশে তার কোন ফল হবে না। বললাম, আরো কিছু উপদেশ প্রদান করুন। তিনি বললেন, হে ইবনে হায়্যান! আপনার পিতার মৃত্যু হয়েছে, অচিরেই আপনারও মৃত্যু হবে। অতঃপর হয়ত বেহেশতে যাবেন, নতুবা দোযখে যাবেন। হযরত আবুল বাশার আদম আলাইহিস সালাম, হযরত উম্মুল বাশার হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনারা দুনিয়া ছেড়ে গিয়েছেন। অতঃপর হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম, হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনারাও দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন, এমনকি শ্রেষ্ঠতম রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও দুনিয়া ছেড়ে গিয়েছেন। আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি দুনিয়া ছেড়ে গিয়েছেন। আমার ভ্রাতা, আমার বন্ধু, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনিও শাহাদত বরণ করেছেন। এই বলে তিনি হায় উমর, হায় উমর বলে চিৎকার দিয়ে উঠলেন। আমি বললাম, আপনার উপর মহান আল্লাহ পাক রহম করুন, আমি জানি, তিনি তো ইন্তিকাল করেননি। তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে উনার মৃত্যু সংবাদ জানিয়েছেন। এরপর বললেন, এখন আপনি ও আমি মৃতদের দলভুক্ত। অতঃপর তিনি গোপনভাবে দোয়া করলেন। (হিলইয়াতুল আওলিয়া, সিয়ারু আলামিন নুবালা, তাজকিরাতুল আওলিয়া)
হযরত উওয়াইস রহমতুল্লাহি আলাইহি তারপর নামায পড়ে দোয়া করে নছীহতস্বরূপ বললেন, আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র কুরআন শরীফ ও আওলিয়াগণের পথ অনুসরণ করবেন। এক মুহূর্তের জন্যও মৃত্যুর কথা বিস্মৃত হবেন না। যখন আপনি নিজ মাযহাবের কাছে যাবেন তখন তাদেরকে এই উপদেশই দিবেন। হে হায়্যানের পুত্র! আপনিও আমাকে দোয়া করবেন, আমিও আপনার জন্য দোয়া করব। খাঁটি মুসলমানের যা কর্তব্য, তার বিপরীত কিছু করবেন না। কারণ তেমন কিছু করলে পথভ্রষ্ট হওয়ার ও জাহান্নামে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এখন আপনি এ পথে যান, আর আমি এ পথে যাই। বর্ণনাকারী বলেন, আমি উনার সাথে কিছুদূর যেতে চাইলে নিজেও কাঁদলেন এবং আমাকেও কাঁদালেন। উনার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলাম। কাঁদতে কাঁদতে তিনি অদৃশ্য হয়ে গেলেন। (তাযকিরাতুল আওলিয়া) (চলবে)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হাযির-নাযির শান মুবারক (১)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আল্লাহওয়ালী মহিলা উনাদের তিনটি বৈশিষ্ট্য-
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












