বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত উওয়াইস বিন ‘আমির আল-ক্বারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৭)
জীবনী মুবারক
, ২৭ ছফর শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৫ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ৩০ ভাদ্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
উনার জীবনের অন্যান্য ঘটনা:
তাযকিরাতুল আওলিয়া কিতাবে উল্লেখ আছে, এক বর্ণনাকারী বলেন, আমি একদিন হযরত উওয়াইস রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে সাক্ষাত লাভের আশায় উনার খিদমতে হাযির হয়ে দেখলাম, তিনি ফজরের নামায পড়ছেন। নামায শেষে তছবীহ পড়তে লাগলেন ও যোহরের সময় পর্যন্ত তা পড়লেন। যোহরের নামাযের পর থেকে আছর পর্যন্ত তছবীহ পাঠ করে সে নামাযও শেষ করলেন। এভাবে তিনি তিনদিন পর্যন্ত কিছুই খেলেন না এবং শয়নও করলেন না। চতুর্থ রাত্রিতে দেখলাম, তিনি সামান্য কিছু সময় ঘুমালেন। ঘুম ভাঙ্গার পর মুনাজাত করতে লাগলেন, আয় বারে ইলাহী! তৃপ্তির ঘুম এবং পেট পুরে খাওয়ার ত্রুটি থেকে আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। এই বাক্য শুনে আমি অবাক হয়ে ফিরে আসলাম।
* বর্ণিত আছে যে, তিনি রাত্রে শয়ন করতেন না এবং বলতেন, এ রাত রুকুর জন্য, এ রাত সিজদার জন্য, এ রাত দাঁড়িয়ে থাকার জন্য- এভাবে তিনি প্রতিটি রাত জেগে কাটিয়ে দিতেন। মানুষ উনাকে জিজ্ঞেস করত হযরত উওয়াইস রহমতুল্লাহি আলাইহি! কেমন আছেন? উত্তরে তিনি বলতেন, রাত্রে সিজদায় গিয়েسُبْحَانَ رَبِّىَ الْأَعْلَى (ছুবহানা রব্বিয়াল আ’লা) বলতে না বলতেই প্রভাত হয়ে যায়। আমি ফেরেশতাদের মত ইবাদত করতে চাই, কিন্তু পারছি না।
* একদিন হযরত উওয়াইস রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞেস করা হলো, নামাযে একাগ্রতা কিরূপ? প্রতি উত্তরে তিনি বললেন, নামাযে রত থাকা অবস্থায় নামাযীকে তীর মারলেও যদি বোধ না হয়, তাহলে সে একমনে নামায পড়ছে মনে করতে হবে। এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, কেমন আছেন? উত্তরে তিনি বললেন, আচ্ছা বলুন তো, তার অবস্থা আবার কেমন- যে সকাল বেলা উঠে জানতে পারে না যে, মৃত্যু সন্ধ্যা পর্যন্ত তাকে অবকাশ দিবে কিনা? লোকটি আবার বলল, তবুও বলুন কি অবস্থা? তিনি উত্তরে বললেন, তিনি পথের সম্বলহীন এবং উনার পথও সুদীর্ঘ।
* একদিন হযরত উওয়াইস রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জানানো হলো, কাছেই এক ব্যক্তি ত্রিশ বছর যাবত কবরে বসে গলায় কাফন ঝুলিয়ে কান্নাকাটি করে দিন যাপন করছে। তিনি বললেন, আমাকে সে স্থানে নিয়ে চলুন, আমি তাকে দেখব। তারা হযরত উওয়াইস রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে লোকটির নিকট নিয়ে গেলে তিনি দেখেন যে, লোকটি জীর্ণ-শীর্ণ ও বিবর্ণ হয়ে গেছে এবং কাঁদতে কাঁদতে পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছে। তখন তিনি বললেন-
يَا فُلَانٌ شَغَلَكَ الْقَبْرُ عَنِ اللهِ
(হে অমুক ব্যক্তি! কবর ও কাফন আপনাকে মহান আল্লাহ পাক উনার থেকে সরিয়ে দিয়েছে)। অথচ আপনি এ দু’টিতে মত্ত হয়ে আছেন। এ দু’টিই আপনার গন্তব্য পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। হযরত উওয়াইস রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কথায় লোকটি নিজের ভুল বুঝতে পেরে চিৎকার দিয়ে উঠেন এবং সেই কবরেই উনার ইনতিকাল হয়ে যায়।
* কোন এক সময় হযরত উওয়াইস রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনদিন অনাহারে ছিলেন। চতুর্থ দিন খাদ্যের সন্ধানে বের হয়ে পথে একটি দীনার দেখতে পেলেন। কেউ তা হারিয়েছে ভেবে তিনি তা নিলেন না। অগত্যা শাক-লতা আহার করবেন বলে ঠিক করলেন। ঠিক সে সময় একটি ছাগল একটি গরম রুটি মুখে করে এনে উনার সামনে রেখে দিল। ছাগলটি উনাকে সেটি গ্রহণ করতে ইঙ্গিত করে বলল, আপনি যে মহান আল্লাহ পাক উনার বান্দা, আমি উনারই বান্দা। হযরত উওয়াইস রহমতুল্লাহি আলাইহি রুটিখানা গ্রহণ করা মাত্রই ছাগলটি অদৃশ্য হয়ে গেল।
* হযরত উওয়াইস রহমতুল্লাহি আলাইহি এক ব্যক্তিকে নছীহত করে বললেন, আপনি যদি আসমান ও যমীন পরিমাণ ইবাদত করেন, কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর ঈমান না আনেন, তাহলে তা কবুল হবে না। লোকটি জানতে চাইলেন আচ্ছা, কিভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার উপর ঈমান আনব? তিনি বললেন, আপনার যা আছে তাতেই আপনি তুষ্ট এবং নিশ্চিন্ত থাকবেন, যেন অন্য কোন বস্তুর প্রতি আপনি আকৃষ্ট না হন। (তাযকিরাতুল আওলিয়া)
* বর্ণিত আছে যে, যখন সন্ধ্যা হতো, হযরত উওয়াইস রহমতুল্লাহি আলাইহি বলতেন, এই রাত রুকুর জন্য, অতঃপর সকাল হওয়া পর্যন্ত রুকুতে অবস্থান করতেন। অপর সন্ধ্যায় বলতেন, এই রাত সিজদার জন্য, অতঃপর সারা রাত সকাল পর্যন্ত সিজদায় অবস্থান করতেন। প্রত্যেক সন্ধ্যায় উনার নিকট প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাদ্য ও পানীয় যা থাকত, তা তিনি দান করে দিতেন। অতঃপর বলতেন, আয় মহান আল্লাহ পাক! কেউ যদি ক্ষুধার যন্ত্রণায় মারা যায়, তাহলে আমাকে পাকড়াও করবেন না, কেউ যদি বস্ত্রহীন হয়ে মারা যায়, তাহলে আমাকে পাকড়াও করবেন না। (সিয়ারু আলামিন নুবালা)
বিছাল শরীফ:
হযরত আছবাগ বিন নুবাতাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি, যিনি একজন তাবেঈ এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার ছাত্রদের একজন ছিলেন, তিনি বর্ণনা করেন, আমি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার সাথে ছিফফীনের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। যুদ্ধের প্রাক্কালে তিনি ঘোষণা করলেন, মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হয়ে কে কে আমার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবে? অতঃপর ৯৯ জন লোক উনার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম বললেন, ‘একশত’ পরিপূর্ণ করার লোকটি কে? অতঃপর পশমী বস্ত্র পরিহিত, মস্তক-মুন্ডিত এক ব্যক্তি উপস্থিত হয়ে বাইয়াত গ্রহণ করলেন। লোকেরা বললেন, এই ব্যক্তি হচ্ছেন হযরত উওয়াইস আল-ক্বারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি। অতঃপর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে তিনি যুদ্ধ করতে লাগলেন এবং অবশেষে শহীদ হয়ে গেলেন। (সিয়ারু আলামিন নুবালা) (চলবে)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইলিম অর্জন করার পর সে অনুযায়ী যে আমল করে না, তার তিনটি অবস্থার যে কোনো একটি হবেই-
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৪)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঢিলা-কুলুখের বিধান
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বেপর্দা হওয়া শয়তানের ওয়াসওয়াসাকে সহজ করার মাধ্যম
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় খরচ করলে তা দ্বিগুণ-বহুগুনে বৃদ্ধি করে ফিরিয়ে দেয়া হয়
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (১)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)












