ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (২৮)
, ০৭ ছফর শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ০৩ ছালিছ, ১৩৯৩ শামসী সন , ০২ আগস্ট, ২০২৫ খ্রি:, ১৯ শ্রাবণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) ইতিহাস
শয়তান যে মানুষকে নেক সুরতে ধোঁকা দেয়, এ বিষয়টি ভালভাবে অনুধাবন করেছিল শয়তানের অনুচর ইহুদী এবং খ্রিষ্টানরা। মুসলমানদের সোনালী যুগ এসেছিল শুধু ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণের ফলে। শয়তানের চর ইহুদী খ্রিষ্টানরা বুঝতে পেরেছিল মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য, সংঘাত সৃষ্টি করতে পারলেই ইসলামের জাগরণ এবং বিশ্বশক্তি হিসেবে মুসলমানদের উত্থান ঠেকানো যাবে। আর তা করতে হবে ইসলামের মধ্যে ইসলামের নামে নতুন মতবাদ প্রবেশ করিয়ে। শুরু হয় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা; যার মূলে থাকে খ্রিষ্টীয় ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ। জন্ম হয় ওহাবী মতবাদের। ওহাবী মতবাদ সৃষ্টির মূলে থাকে একজন ব্রিটিশ গুপ্তচর হেমপার। মিশর, ইরাক, ইরান, হেজাজ ও তুরস্কে তার গোয়েন্দা তৎপরতা চালায় মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য “ÒConfession of British Spy and British enmity against Islam” গ্রন্থ হচ্ছে হেমপারের স্বীকারোক্তি মূলক রচনা। যা মূল গ্রন্থ থেকে ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ প্রকাশ করা হবে। ইনশাআল্লাহ!
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
বইটিতে নিম্নবর্ণিত শক্তির উৎসসমূহকে মর্যাদাশূণ্য এবং দূর্বল করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
১৫। মুসলমানরা জামায়াতে নামায আদায় করে যা তাদেরকে পাঁচবার একত্র করে।
১৬। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রওজা শরীফ, হযরত আলী আলাইহিস সালাম উনার মাযার শরীফ এবং অন্যান্য বুযূর্গ ব্যক্তিদের মাযার শরীফকে পবিত্র মনে করে, ফলে সে সব স্থানে তারা জমায়েত হয়।
১৭। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বংশধরগণ যারা সাইয়্যিদ এবং শরীফ নামে পরিচিত তারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্মৃতি ধরে আছেন এবং মুসলমানদের চোখে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্মৃতিকে উজ্জ্বল রেখেছেন।
১৮। মুসলমানরা যখন কোন মাহফিলে একত্রিত হন, ওয়ায়েজগণ মুসলমানদের ঈমান দৃঢ় করেন এবং ভাল কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করেন।
১৯। আমর বিল মারূফ (সৎ কাজের আদেশ) এবং নাহি আনিল মুনকার (অসৎ কাজের নিষেধ) পালন করা ফরজ।
২০। মুসলমানদের সংখ্যাধিক্য বাড়াবার জন্য একের অধিক বিবাহ করা সুন্নাহ (শর্ত সাপেক্ষে)।
২১। একজন মানুষকে হিদায়েতের পথে নিয়ে আসা সমস্ত পৃথিবী পাওয়ার চেয়ে উত্তম।
২২। সকল মুসলমানদের জানা আছে যে, কেউ যদি কোন কল্যাণকর পথ দেখায় তবে সেই পথ অনুসরন করে যারা সওয়াব অর্জন করবে, সেই ব্যক্তিত্ব সেই সওয়াবের ভাগী হবেন।
২৩। মুসলমানগণ কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফকে গভীর শ্রদ্ধা সহকারে ধারণ ও অনুসরণ করে। তারা বিশ্বাস করে এই দুই উৎসের অনুসরণই বেহেশত পাবার পথ।
বইটিতে মুসলমানদের উক্ত বিশ্বস্ত অবস্থানগুলোকে আরো পঙ্গু এবং ব্যাপকভাবে দুর্বল করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে এবং সেটা সফল করার জন্য বইটিতে পথ দেখানো হয়েছে-
১। বিবাদমান গোত্রসমূহের মধ্যে শত্রুতা বাড়াবে। অবিশ্বাসকে জোরদার করবে এবং বিভিন্ন সাহিত্য প্রকাশনার মাধ্যমে মতবিরোধকে জাগিয়ে তুলবে।
২। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষালাভ এবং প্রকাশনায় বাধা দেবে। যেখানে সম্ভব সাহিত্য তথা বইপত্র জ্বালিয়ে দেবে। মুসলিম ছেলে মেয়েরা যাতে অজ্ঞ থেকে যায় সে জন্যে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষের নিন্দাবাদ করবে যাতে মুসলিম অভিভাবকগণ তাদের সন্তানদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে না পাঠায়।
৩-৪। তাদেরকে বেহেশতের কথা বলবে এবং বোঝাবে পৃথিবীর জন্য কাজকর্ম করার প্রয়োজন নেই। তাছাউফের নামে বিভ্রান্তির পরিধিকে বিস্তৃত করবে। তাদেরকে বৈরাগ্য সম্পর্কিত বইপত্র পড়তে দিয়ে বিশেষত হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এহইয়াউ উলূমিদ্দীন, মাওলানা রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মসনবী শরীফ, মহিউদ্দিন ইবনুল আরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বইপত্র পুড়ানোর নামে তাদের মধ্যে একধরনের অসচেতনতাবোধ জাগিয়ে তুলবে। নাউযুবিল্লাহ!
(অনুবাদক বলেন, গুপ্তচর হেমপারকে পড়তে দেয়া বইটিতে মূলতঃ সূক্ষ্মভাবে তাছাউফের বিরুদ্ধে বলার চেষ্টা করা হয়েছে এবং মানুষকে প্রকৃত তাছাউফের শিক্ষা থেকে দূরে রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে মুসলমানদেরকে ওলীআল্লাহদের ছোহবত থেকে দূরে রাখার জন্যই তাদের এ বক্তব্য। কারণ ওলীআল্লাহদের ছোহবত ইখতিয়ার না করলে কারো পক্ষে হাক্বীক্বীভাবে মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের উভয়ের মুহব্বত ও মারিফাত এবং তায়াল্লুক ও নিসবত হাছিল করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়।
উল্লেখ্য, ইসলাম কখনই শুধু বেহেশ্তের আশায় বসে থেকে কাজকর্ম করতে নিষেধ করেনি। বরং হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেক পুরুষের জন্য হালাল উপার্জন করা ফরয। ” কুরআন মজীদে আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন ইরশাদ মুবারক করেন, “অতঃপর হালাল রুজির সন্ধানে তোমরা যমীনে ছড়িয়ে পড়ো। ”
মূলতঃ হেমপারের বইটিতে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে, ইসলাম হয়তো কাজকর্ম করার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে এবং বৈরাগ্যকে পছন্দ করে কিন্তু বাস্তবে তা নয়। আবার সূক্ষ্মভাবে বৈরাগ্য সম্পর্কিত বই এর নাম বলতে গিয়ে হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এহইয়াউ উলূমিদ্দীন, মাওলানা রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মসনবী শরীফ, মুহিউদ্দীন ইবনুল আরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বইগুলোর নাম উল্লেখ করেছে।
অথচ বলা হয়ে থাকে, আল্লাহ পাক না করুন, যদি কোন কারণে পৃথিবীতে কুরআন মজীদ এবং হাদীছ শরীফের শিক্ষা না থাকে এবং শুধু এহইয়াউ উলূমিদ্দীন কিতাবখানা থাকে তবে মানুষ শুধু এহইয়াউ উলূমিদ্দীন পড়ে আবার পরিপূর্ণ দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন। আর এহইয়াউ উলূমিদ্দীন, মসনবী শরীফে তাছাউফের যে শিক্ষার কথা বলা হয়েছে, সেই শিক্ষা মূলতঃ মানুষের চরিত্রকে সুন্দরভাবে গঠন করে, উন্নত করে, নির্মল করে। মানুষের সব অসৎ স্বভাবগুলো দূর হয়ে যায় এবং সব সুন্দর, সৎ স্বভাবগুলো অর্জিত হয়।
ভাষান্তর : আবুল বাশার।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কেমন ছিলো মোঘল সালতানাতের গোলন্দাজ এবং অশ্বারোহী বাহিনী
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পান্থনিবাস ও সরাইখানা নির্মাণে মুসলমানদের অনবদ্য অবদান
২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৯)
১৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুসলমানদের শিক্ষা-দীক্ষার বিরোধিতায় বিধর্মী-অমুসলিমরা
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাংলার হিন্দু ধনিক-বণিক, বেনিয়া শ্রেণী, ব্যাংকার প্রভৃতির সাথে এক গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মুসলিম
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইউরোপকে যেভাবে সমৃদ্ধ করেছেন আফ্রিকান মুসলমানরা
১২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
গুজরাটের সুলতান মুজাফফর শাহের পরহেজগারিতা এবং ভ্রাতৃত্ববোধ
০২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৭)
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কেমন ছিলেন ইসলামী ইতিহাসের প্রথম আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঐতিহাসিক মুসলিমবাগ ঈদগাহ-ই কি আজকের ঢাকেশ্বরী মন্দির?
২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
১২টি চন্দ্রমাসের নাম এবং নামকরণের সার্থকতা (২)
২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ঐতিহাসিক খেমকারান যুদ্ধ: যেভাবে বাংলাদেশের জাতীয়তাবোধের উদ্ভব
২৫ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)












