ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৫)
, ১৯ই রবিউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১৩ খমীছ, ১৩৯৩ শামসী সন , ১২ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রি:, ২৮ আশ্বিন, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) ইতিহাস
শয়তান যে মানুষকে নেক সুরতে ধোঁকা দেয়, এ বিষয়টি ভালভাবে অনুধাবন করেছিল শয়তানের অনুচর ইহুদী এবং খ্রিষ্টানরা। মুসলমানদের সোনালী যুগ এসেছিল শুধু ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণের ফলে। শয়তানের চর ইহুদী খ্রিষ্টানরা বুঝতে পেরেছিল মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য, সংঘাত সৃষ্টি করতে পারলেই ইসলামের জাগরণ এবং বিশ্বশক্তি হিসেবে মুসলমানদের উত্থান ঠেকানো যাবে। আর তা করতে হবে ইসলামের মধ্যে ইসলামের নামে নতুন মতবাদ প্রবেশ করিয়ে। শুরু হয় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা; যার মূলে থাকে খ্রিষ্টীয় ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ। জন্ম হয় ওহাবী মতবাদের। ওহাবী মতবাদ সৃষ্টির মূলে থাকে একজন ব্রিটিশ গুপ্তচর হেমপার। মিশর, ইরাক, ইরান, হেজাজ ও তুরস্কে তার গোয়েন্দা তৎপরতা চালায় মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য “Confession of British Spy and British enmity against Islam” গ্রন্থ হচ্ছে হেমপারের স্বীকারোক্তি মূলক রচনা। যা মূল গ্রন্থ থেকে ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ প্রকাশ করা হবে। ইনশাআল্লাহ!
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
১৫। সাইয়্যিদগণ হলেন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বংশধর, এ বিশ্বাসের প্রতি লোকজনকে সন্দেহ প্রবণ করবে। যারা কালো ও সবুজ পাগড়ী পরিধান করেন এবং সাইয়্যিদ নন তাদের সঙ্গে সাইয়্যিদগণকে একাকার করে ফেলতে হবে। এতে লোকজন সাইয়্যিদগণ সম্পর্কে হতবুদ্ধি হয়ে পড়বে এবং পরিশেষে সাইয়্যিদগণের সম্পর্কে আস্থা হারাবে। সাইয়্যিদগণের ধর্মীয় কর্তৃত্ব নষ্ট করতে হবে এবং মাথা থেকে পাগড়ী খুলে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে নুবুওয়াতি আখলাক্ব নষ্ট হয় এবং ধর্মীয় কর্তৃত্বের বিষয়গুলো কখনও সম্মান না পায়।
(বিখ্যাত আলিম সাইয়্যিদ আবদ-উল-হাকিম আরওয়াসি রহমতুল্লাহি আলাইহি ইস্তাম্বুল থাকতে আসহাব-ই-কিরাম নামে যে কিতাব রচনা করেন তাতে লিখেছেন, হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম এবং উনার মুবারক আওলাদগণ দুনিয়ার শেষ দিন পর্যন্ত আহলে বাইত শরীফ হিসেবে বিবেচিত হবেন। উনাদের মুহব্বত করা সবার জন্য ফরয। আহলে বাইতকে মুহব্বত, অন্তর দিয়ে কিংবা দৈহিকভাবে এবং সম্পদের মাধ্যমে সাহায্য করা, সম্মান প্রদর্শন করা এবং উনাদের অধিকারের প্রতি নজর রাখা হলে যে কেহ ঈমানের সাথে ইন্তেকাল করতে পারবে। সিরিয়ার হামা শহরে সাইয়্যিদগণের জন্য আইনী আদালতের ব্যবস্থা ছিলো। মিশরের আব্বাসীয়া খিলাফতের সময় হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনার বংশধরগণকে শরীফ বলা হতো। উনারা সাদা পোশাক পরিধান করবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়। আর হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার বংশধরগণকে বলা হতো সাইয়্যিদ। উনারা সবুজ পোশাক পরিধান করতেন। এ সম্মানিত দুই পরিবারের যে সকল শিশু জন্মগ্রহণ করতেন উনাদেরকে দু’জন স্বাক্ষী এবং একজন বিচারকের সামনে নিবন্ধনকৃত করা হতো। কিন্তু সুলতান আব্দুল মজিদ খান রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর শাসন আমলে ব্রিটিশদের দালাল রশিদ পাশা তার ব্রিটিশপ্রভুদের ইঙ্গিতে এই আইনী আদালত বাতিল করে।
ফতওয়া-ই-হাদিসিয়ায় বলা হয়েছে, ইসলামের প্রথম যুগে আহলে বাইতের যে কোন বংশধরদের শরীফ নামে অভিহিত করা হতো। যেমন- শরীফ-ই আব্বাসী, শরীফ-ই জয়নালী ইত্যাদি। ফাতেমী শাসকরা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনাদের বংশধরগণকে শরীফ নামে অভিহিত করতেন। মিশরের তুর্কী শাসকের একজন আশরাফ শাবান বিন হুসাইন নির্দেশ দেন সাইয়্যিদগণ সবুজ পোশাক পরিধান করবেন যাতে উনাদের শরীফদের থেকে আলাদাভাবে চেনা যায়। এ প্রথা ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করে, যদিও ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে এর কোন মূল্য নেই। )
১৬। কারবালার ঘটনাকে স্মরণ করে লোকেরা যেখানে শোক প্রকাশ করে সেসব ধ্বংস করে দিতে হবে। বলতে হবে, তা হচ্ছে বিদয়াত এবং পরিত্যাজ্য। সেখানে মানুষের যাতায়াত বন্ধ করে দিতে হবে এবং ইসলাম প্রচারকদের সংখ্যা কমিয়ে আনতে হবে। ইসলামপ্রচারক এবং শোক প্রকাশের স্থানগুলোর মালিকদের উপর কর আরোপ করতে হবে।
১৭। স্বাধীনতার কথা বলতে গিয়ে সকল মুসলমানগণকে বোঝাবে যে প্রত্যেক মানুষই স্বাধীন। সে যা খুশি তাই করতে পারে। আমর বিল মারুফ এবং নাহি আনিল মুনকার ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী ফরয নয়। উপরন্তু, তাদের মধ্যে এই বিশ্বাস প্রবেশ করিয়ে দিবে যে, খ্রিষ্টানরা তাদের নিজেদের বিশ্বাস নিয়ে থাকবে, আর ইহুদীরা তাদের নিয়ম মেনে চলবে কেউ কারো হৃদয়ে আঘাত করবে না। আমর বিল মা’রুফ এবং নাহি আনিল মুনকার হচ্ছে খলীফাদের কাজ।
১৮। মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধের জন্য জন্ম নিয়ন্ত্রণ এবং বহু বিবাহ নিষিদ্ধ করতে হবে। বিয়ে শাদীও থাকবে নিয়ন্ত্রিত। বলতে হবে, একজন আরবী কোন ইরানী বিয়ে করতে পারে না, একজন ইরানী পারবে না আরবীকে বিয়ে করতে। একইভাবে একজন তুর্কী পারবে না ইরানীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে।
১৯। ইসলাম ধর্ম প্রচার এবং মানুষের ইসলাম কবুল করা বন্ধে সর্বাত্মক চেষ্টা নিবে। এ ব্যাপারে প্রচারণা চালাবে যে, ইসলাম শুধু আরব দেশে সীমাবদ্ধ থাকার মতই একটি বিশেষ ধর্ম। প্রমাণ হিসেবে কুরআন শরীফের এই আয়াত শরীফের উদ্ধৃতি দিবে, “কেবল তোমাদের এবং তোমাদের মত লোকজনের জন্যই শুধু যিকির। ”
ভাষান্তর : আবুল বাশার।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কেমন ছিলো মোঘল সালতানাতের গোলন্দাজ এবং অশ্বারোহী বাহিনী
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পান্থনিবাস ও সরাইখানা নির্মাণে মুসলমানদের অনবদ্য অবদান
২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৯)
১৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুসলমানদের শিক্ষা-দীক্ষার বিরোধিতায় বিধর্মী-অমুসলিমরা
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাংলার হিন্দু ধনিক-বণিক, বেনিয়া শ্রেণী, ব্যাংকার প্রভৃতির সাথে এক গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মুসলিম
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইউরোপকে যেভাবে সমৃদ্ধ করেছেন আফ্রিকান মুসলমানরা
১২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
গুজরাটের সুলতান মুজাফফর শাহের পরহেজগারিতা এবং ভ্রাতৃত্ববোধ
০২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৭)
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কেমন ছিলেন ইসলামী ইতিহাসের প্রথম আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঐতিহাসিক মুসলিমবাগ ঈদগাহ-ই কি আজকের ঢাকেশ্বরী মন্দির?
২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
১২টি চন্দ্রমাসের নাম এবং নামকরণের সার্থকতা (২)
২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ঐতিহাসিক খেমকারান যুদ্ধ: যেভাবে বাংলাদেশের জাতীয়তাবোধের উদ্ভব
২৫ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)












