মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ বিষয়ে চূ-চেরা, ক্বীল-ক্বাল এবং অপপ্রচারের দলীলভিত্তিক দাঁতভাঙ্গা জবাব (৪)
, ০৬ই রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ৩১ সামিন, ১৩৯০ শামসী সন, ২৯শে জানুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ১৫ মাঘ, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ
প্রতি সেকেন্ডে কোটি কোটি ঈদ
১. প্রতি দমে দুটি ঈদ ও দুটি ঈদে আকবর হওয়ার দলীল:
বিশ্বখ্যাত মুফাসসির আল্লামা হযরত ইসমাঈল হাক্কী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ ১১২৭ হিজরী শরীফ) তিনি উনার বিশ্বখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরে রূহুল বয়ান’ উনার মধ্যে উল্লেখ করেন-
عاشقان در دمے دو عيد كنند
(বাংলা উচ্চারণ: আশেক্বানে দর দমে দো ঈদ কুনান্দ।)
অর্থ: “আশেক্বীন উনাদের প্রত্যেকটা শ্বাস-প্রশ্বাসেই দুটি ঈদ হয়।” সুবহানাল্লাহ! (রূহুল বয়ান ৬/৪৭১)
অন্যভাবে বলা হয়ে থাকে যে,
عارفان هر دمے دو عید کنند
(বাংলা উচ্চারণ: আরেফানে হর দমে দো ঈদ কুনান্দ।)
অর্থ: “সম্মানিত আরিফগণ অর্থাৎ আল্লাহওয়ালাগণ উনাদের প্রত্যেকটা শ্বাস-প্রশ্বাসেই দুটি ঈদ হয়।” সুবহানাল্লাহ!
মাওলানা জালালুদ্দীন রূমী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
صوفیان در دمے دو عید کنند
(বাংলা উচ্চারণ: ছূফিয়ানে দর দমে দো ঈদ কুনান্দ।)
অর্থ: “সম্মানিত ছুফীগণ উনাদের প্রত্যেকটা শ্বাস-প্রশ্বাসেই দুটি ঈদ হয়।” সুবহানাল্লাহ! (রূহুল বয়ান ২/৪৬৫, দেওয়ানে শামস)
মাওলানা জালালুদ্দীন রূমী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এই বিষয়টা আরো স্পষ্টভাবে বলেন,
سالی دو عید کردن کار عوام باشد
ما صوفیان جان را هر دم دو عید باشد
(বাংলা উচ্চারণ: সালে দো ঈদ করদান কারে আওয়াম বাশদ, মা ছূফিয়ানে জান রা হরদম দো ঈদ বাশদ।)
অর্থ: “বছরে দুই ঈদ করা হচ্ছে সাধারণ লোকদের কাজ। আর সম্মানিত ছূফীগণ উনাদের প্রত্যেকটা শ্বাস-প্রশ্বাসেই দুটি ঈদ হয়।” সুবহানাল্লাহ! (দেওয়ানে শামস)
বিশ্বখ্যাত মুফাসসির আল্লামা হযরত ইসমাঈল হাক্কী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ ১১২৭ হিজরী শরীফ) তিনি উনার বিশ্বখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরে রূহুল বয়ান’ উনার মধ্যে ‘সম্মানিত ও পবিত্র সূরা মায়িদাহ্ শরীফ উনার ১১৪নং সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ’ উনার তাফসীরে বলেন,
كل يوم كان للمسلمين عيدا فى الدنيا فهو عيد لهم فى الجنة يجتمعون فيه على زيارة ربهم ويتجلى لهم فيه فيوم الجمعة فى الجنة يدعى يوم المزيد ويوم الفطر والأضحى يجتمع اهل الجمعة فيهما للزيارة هذا لعوام اهل الجنة واما خواصهم فكل يوم لهم عيد يزورون ربهم كل يوم مرتين بكرة وعشيا والخواص كانت ايام الدنيا كلها لهم أعيادا فصارت ايامهم فى الآخرة كلها أعيادا واما أخص الخواص فكل نفس عيد لهم قال فى التأويلات النجمية رَبَّنا أَنْزِلْ عَلَيْنا مائِدَةً مِنَ السَّماءِ اى مائدة الاسرار والحقائق التي تنزلها من سماء العناية عليها أطعمة الهداية تَكُونُ لَنا يعنى لاهل الحق وارباب الصدق عِيداً نفرح بها لِأَوَّلِنا وَآخِرِنا اى لاول أنفاسنا وآخرها فان ارباب الحقيقة يراقبون الأنفاس أولها وآخرها لتصعد مع الله وتهوى مع الله ففى صعود النفس مع الله يكون عيدا لهم وفى هويه مع الله عيدا لهم كما قال بالفارسية [صوفيان در دمى دو عيد كنند]
অর্থ: “সম্মানিত মুসলমান উনাদের জন্য দুনিয়াতে যে দিনগুলি ঈদ, সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার মধ্যেও সেই দিনগুলি উনাদের জন্য ঈদের দিন হবেন। সুবহানাল্লাহ! কারণ এই সমস্ত দিনে সম্মানিত মুসলমান উনারা উনাদের রব তা‘য়ালা মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দীদার মুবারক উনার উদ্দেশ্যে একত্রিত হবেন এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি এই দিনগুলিতে উনাদের জন্য প্রকাশ পাবেন। সুবহানাল্লাহ! আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জুমু‘আহ্ শরীফ উনার দিন সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার মধ্যে দাওয়াত দেয়া হবে, (এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দিন মুবারক হচ্ছেন-) ইয়াওমুল মাযীদ। সুবহানাল্লাহ! আর সম্মানিত রোযার ঈদ এবং সম্মানিত কুরবানীর ঈদ- এই দুই দিন সম্মানিত জান্নাতবাসী উনাদেরকে পরস্পর সাক্ষাতের জন্য একত্রিত করা হবে। এটা আমভাবে সম্মানিত জন্নাতবাসী সকলের জন্য। আর সম্মানিত জান্নাতবাসী খাছ ব্যক্তি উনাদের প্রত্যেক দিনই ঈদ হবেন। উনারা প্রতি দিন সকাল-সন্ধ্যা দুই বার উনাদের রব তা‘য়ালা মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দীদার মুবারক লাভ করবেন। খাছ ব্যক্তিত্ব উনাদের জন্য দুনিয়াতে উনাদের প্রত্যেক দিনই ঈদ। তাই পরকালেও উনাদের প্রত্যেক দিনই ঈদ হবেন। আর আখাছ্ছুল খাছ ব্যক্তি উনাদের জন্য প্রত্যেকটা শ্বাস-প্রশ্বাসই ঈদ অর্থাৎ প্রতি দমেই ২টি ঈদ। শ্বাস গ্রহণের সময় ১টি ঈদ আর শ্বাস ছাড়ার সময় ১টি ঈদ। (হযরত ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্মানিত শায়েখ, বিশিষ্ট বুযূর্গ, ছূফী, মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ মাহূবব ওলী হযরত শায়েখ ইমাম আহমদ ইবনে উমর ইবনে মুহম্মদ নাজমুদ্দীন কুবরা রহমতুল্লাহি আলাইহি- বিছাল শরীফ ৬১৮ হিজরী শরীফ) তিনি ‘তা’ওইলাতুন নাজমিয়্যাহ্ শরীফ’ উনার মধ্যে বলেন-رَبَّنا أَنْزِلْ عَلَيْنا مائِدَةً مِنَ السَّماءِ ‘আয় বারে এলাহী, মহান আল্লাহ পাক! দয়া করে আপনি আমাদের জন্য আসমান থেকে একটি খাদ্যের খাঞ্চা নাযিল করুন।’ অর্থাৎ মা’রিফাত এবং হাক্বীক্বতসমূহের খাঞ্চা, যা আপনি অনুগ্রহের আসমান থেকে নাযিল করেন, যার মধ্যে রয়েছেন হেদায়াতের খাদ্যসমূহ। সেটা আমাদের জন্য অর্থাৎ আহলে হক্ব এবং আরবাবুছ ছিদ্ক্ব উনাদের জন্য ঈদ হবেন। সেই নিয়ামত মুবারক উনার জন্য আমরা খুশি প্রকাশ করবো। আমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য এবং পরবর্তীদের জন্য অর্থাৎ আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের শুরুতে এবং শেষে অর্থাৎ শ্বাস গ্রহণের সময় এবং শ্বাস ছাড়ার সময় ঈদ হবেন। কেননা নিশ্চয়ই হাক্বীক্বতের অভিভাবকগণ উনাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের শুরু এবং শেষ সবটাই পর্যবেক্ষণ করেন মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে (নিসবত-সম্পর্ক) বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য এবং মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে মুহব্বত স্থাপনের জন্য। কাজেই, উরূজের সময় উনাদের শ্বাস-প্রশ্বাসসমূহ হয় মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে অর্থাৎ উনার মুহব্বতে, ফলে তখন উনাদের জন্য উনাদের প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাসে ঈদ হয় এবং নুযূলের সময়ও উনাদের শ্বাস-প্রশ্বাসসমূহ হয় মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে অর্থাৎ উনার মুহব্বতে, ফলে তখনও উনাদের প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাসে ঈদ হয়। যেমন ফারসীতে বলা হয়- ‘সম্মানিত ছুফীগণ উনাদের প্রত্যেকটা শ্বাস-প্রশ্বাসেই দুটি ঈদ হয়’।” সুবহানাল্লাহ! (রূহুল বয়ান ২/৪৬৫)
(পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকুন।)
-মুহাদ্দিছ মুহম্মদ আল আমীন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম,
১৮ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হিসেবে, উনার মাহবূব, মুরাদ ও সমগ্র কায়িনাতের মালিক হিসেবে সৃষ্টি মুবারক করেছেন (৩)
১৮ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
এক নযরে সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি আলাল আলামীন, আফযালুন নাস ওয়ান নিসা বা’দা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আস সাবি‘আহ্ আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র পরিচিতি মুবারক
১৭ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার ফযীলত
১৭ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে সম্মানিত কুরবানী মুবারক দেয়া প্রত্যেক উম্মতের জন্য ফরযে আইন (৫)
১৬ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হিসেবে, উনার মাহবূব, মুরাদ ও সমগ্র কায়িনাতের মালিক হিসেবে সৃষ্টি মুবারক করেছেন (১)
১৬ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আজ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ৬ই যিলক্বদ শরীফ
১৫ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে সম্মানিত কুরবানী মুবারক দেয়া প্রত্যেক উম্মতের জন্য ফরযে আইন (৪)
১৫ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ‘আমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম’ উনার মহাসম্মানিত ব্যাখ্যা মুবারক
১৪ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুদরতময় এক বিশেষ নূরানী মাহফিল মুবারক উনার মধ্যে সর্বোচ্চ পন্থায় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র খিলাফত মুবারক প্রদান এবং পরিশেষে মহান আল্লাহ পাক কর্তৃক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুদরতী কোল মুবারক-এ করে সারা পৃথিবী, সারা কায়িনাত ঘুরিয়া দেখানো
১৩ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে সম্মানিত কুরবানী মুবারক দেয়া প্রত্যেক উম্মতের জন্য ফরযে আইন (২)
১৩ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদরে প্রত্যেকের সাথে সংশ্লিষ্ট মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সমস্ত আইয়্যামুল্লাহ শরীফ পালন করার ব্যাপারে মহাসম্মানিত ফায়ছালা মুবারক
১২ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)