স্থাপত্য-নিদর্শন
মুসলমানদের শিল্পকলার এক অনন্য নিদর্শন ইসলামী মৃৎপাত্র (৫)
, ২৭ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২৪ ছানী, ১৩৯৩ শামসী সন , ২৩ জুলাই, ২০২৫ খ্রি:, ০৯ শ্রাবণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) স্থাপত্য নিদর্শন
সামাররা মৃৎপাত্রের অলঙ্করণ টিন এনামেলের ওপর একক বা একাধিক লাস্টার রং প্রয়োগে পরিশোভিত হয়েছে। এসবে হলদে অথবা সবুজ-সোনালী ও পিঙ্গল একক লাস্টার রং ব্যবহার করা হয়েছে। বহুমাত্রিক রঙের অলঙ্করণসমৃদ্ধ মৃৎপাত্র সামাররার উৎকৃষ্ট ও মনোরম মৃবস্তু হিসেবে বিবেচিত হয়। সাধারণত মৃৎপাত্রের বিভিন্ন প্রকরণের লাস্টারে যে রং ব্যবহৃত হয়ে থাকে তাহলো স্বর্ণ রং, জলপাই-সবুজ, হালকা সবুজ ও রক্তিম পিঙ্গল। আব্বাসীয় অলঙ্করণের বৈশিষ্ট্য হিসেবে এই অলঙ্করণ অন্তর্ভুক্ত করেছে পুষ্প-নকশা, এরাবেক্স মটিফ।
আর মটিফ ও মধ্যবর্তী খালি স্থানসমূহ পূরণ করা হয়েছে এমন মোজাইক প্যাটার্নে যা রেখাসদৃশ, হীরকাকার বুটিদার কাপড়, স্ক্রোল ও বিন্দু দ্বারা সৃষ্ট রেখাবৃত্তের ন্যায় মনে হয়। তিউনিসিয়ার কায়রোয়ানের সিদি উকবার মসজিদের মিহরাবে ব্যবহৃত ঔজ্জ্বল্য টাইল অলঙ্করণের সাথে তুলনীয় সামাররার অত্যুজ্জ্বল মৃৎপাত্রাদি। সিদি উকবার মসজিদের মিহরাবের ফ্রেম তৈরি করতে যে একশত ঊনচল্লিশটি বৃত্তাকার টাইল ব্যবহার করা হয়েছিলো তা এটির কাষ্ঠ মিম্বারের সাথে বাগদাদ হতে আনা হয়েছিলো বলে সমকালীন আরবী সাহিত্য উৎস হতে জানা যায়।
সামাররা মৃৎপাত্র হতে কায়রোয়ান টাইল সময়ের দিক হতে পূর্বেকার এবং তা বাগদাদ মৃৎশিল্পীদের সূচিকর্ম হিসেবে বিবেচনা করা যায়। উন্নত শ্রেণির সামাররা ঔজ্জ্বল্য মৃৎপাত্রাদিকেও নান্দনিকতার দিক হতে অতিক্রম করেছে চুনি পাথরের ঔজ্জ্বল্যে হলদে, সবুজ, সোনালী ও পিঙ্গল প্রভৃতি রঙে রঞ্জিত এক প্রকারের অতি উন্নতমানের সামাররা মৃৎপাত্র। অতি মূল্যবান ও নন্দনগ্রাহ্য রঙের ব্যবহার কেবলমাত্র সামাররা মৃৎপাত্রাদিতে সীমিত থাকেনি, বরং তার ব্যাপ্তি সামাররা প্রাসাদ অলঙ্করণের ক্ষেত্র পর্যন্ত প্রসারিত।
প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ্য যে, বহুমাত্রিক ঔজ্জ্বল্য রঙের আব্বাসীয় মৃৎপাত্রাদি ইরান ও মিশরে পরিদৃষ্ট হয়। মেসোপটেমিয়া বিশেষ করে বাগদাদ নবম শতাব্দীর এরূপ কারুকার্যখচিত ও নান্দনিক মৃৎপাত্রের উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্র ছিলো। ইরানে পশ্চিমাঞ্চলের মৃৎপাত্রের কেন্দ্রসমূহে মেসেপটেমীয় টাইপের বহু রঙের ঔজ্জ্বল্য মৃন্ময়পাত্রের উৎপাদন সীমিত ছিলো। মিশরে বিশেষ করে ফুসতাত, বাহনাসা ও অন্যান্য স্থানসমূহে বহুমাত্রিক রঙের যে ঔজ্জ্বল্য মৃৎপাত্র পরিলক্ষিত হয়, তা মেসোপটেমিয়া হতে আমদানি করা হয়েছে বলে অনুমিত হয়। উপরোক্ত প্রকরণ ছাড়াও অতিশয় গ্লেজ-বিশিষ্ট এবং গ্লেজ ব্যতিত বিভিন্ন রকমের মৃৎপাত্রাদি আব্বাসীয় শাসনপর্বের দশম ও একাদশ শতাব্দীতে ইরান ও মেসোপটেমিয়ার বিভিন্ন কেন্দ্র হতে উৎপাদিত হয়ে সর্বস্তরের জনগণের প্রয়োজন মিটাতো এবং দেশের অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির মাত্রা যোগ করতো। (অসমাপ্ত)
-মুহম্মদ নাইম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণে মুসলমানদের অবদান
২৩ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মালয়েশিয়ার ঐতিহাসিক মসজিদ “মসজিদ নেগারা”
১৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
যে মসজিদ থেকে গভীর রাতে ভেসে আসতো যিকিরের আওয়াজ
০৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৮)
০৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদ হযরত শাহ মখদুম রুপোশ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাজার শরীফ
০২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বয়নশিল্প নিদর্শনে মুসলমানগণ (৬)
২৬ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বয়নশিল্প নিদর্শনে মুসলমানগণ (৫)
১৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বয়নশিল্প নিদর্শনে মুসলমানগণ (৪)
১২ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বয়নশিল্প নিদর্শনে মুসলমানগণ (৩)
০৫ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বয়নশিল্প নিদর্শনে মুসলমানগণ (২)
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
স্থাপত্যশৈলীর অনন্য স্থাপনা মানিকগঞ্জের ‘ওয়াসি মহল’
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বয়নশিল্প নিদর্শনে মুসলমানগণ (১)
২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)












