পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে
রোযা অবস্থায়- ইনজেকশন, ইনহেলার, স্যালাইন ও টিকা নেয়া অবশ্যই রোযার ভঙ্গের কারণ (৭)
, ১৫ মার্চ, ২০২৪ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ سَعِيْدٍ الْـخُدْرِيِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيْضَةٌ عَلٰى كُلِّ مُسْلِمٍ.
অর্থ : “হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, প্রত্যেক মুসলমান নর-নারী উনাদের জন্য পবিত্র ইল্ম অর্জন করা ফরয। ” (শুয়া’বুল ঈমান বায়হাক্বী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১৫৪৭, মাওজুমায়ে ইবনে আরাবী : হাদীছ শরীফ নং ৩০৪, ফাওয়ায়েদ শরীফ লি আবূ ক্বসিম : হাদীছ শরীফ ৫২)
অতএব, সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত সম্পর্কিত সকল বিষয়ের প্রয়োজনীয় ইল্ম অর্জন করা যেমন ফরয তদ্রুপ রোযা অবস্থায় ইনজেকশন নিলে রোযা ভঙ্গ হবে কিনা এ সম্পর্কিত ইল্ম অর্জন করাও ফরয। সুতরাং যারা না জেনে রোযা অবস্থায় ইনজেকশন নিবে, তারা এ সম্পর্কিত ইল্ম অর্জন না করার কারণে ফরয তরকের গুণাহে গুণাহ্গার হবে। নাঊযুবিল্লাহ!
মূলতঃ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা উনাদের ফিক্বাহর কিতাবসমূহে রোযা ভঙ্গ হওয়া না হওয়ার কারণসমূহ বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছেন। তবে সম্প্রতি যে বিষয়টি নিয়ে মুসলিম উম্মাহ্ বেশী সমস্যার সম্মুখিন, তা হলো, রোযা অবস্থায় “ইনজেকশন গ্রহণ করা”।
পূর্ববর্তী ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের সময় যেহেতু ইনজেকশনের ব্যবহার ছিলনা, তাই উনারা ইনজেকশন সম্পর্কে কোন আলোচনা করেননি। তবে রোযা ভঙ্গ হওয়া না হওয়ার কারণ বা উছূলগুলো কিতাবসমূহে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করে গিয়েছেন। কাজেই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে যে, ইনজেকশন নিলে রোযা ভঙ্গ হবে কি হবেনা। ইতিপূর্বে কেউ কেউ ফতওয়া দিয়েছে যে, “ইনজেকশন নিলে রোযা ভঙ্গ হয়না”। যেমন থানবীর ইমদাদুল ফতওয়ার ২য় খ- ১৫৪নং পৃষ্ঠায়, ২১৯নং সুওয়ালের জাওয়াবে বলা হয়েছে যে, “ইনজেকশন নিলে রোযা ভঙ্গ হয়না ”। নাঊযুবিল্লাহ!
অনেকে ইনজেকশন সম্পর্কে এ ফতওয়াকেই দলীল হিসাবে পেশ করে থাকে এবং এটাকেই ইনজেকশন সম্পর্কে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত বা ফায়সালা মনে করে থাকে। আর এর উপর ভিত্তি করে বর্তমানে অনেকে ফতওয়া দিচ্ছে যে, রোযা অবস্থায় ইনজেকশন নিলে রোযা ভঙ্গ হয়না। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ!
স্মর্তব্য, ইমদাদুল ফতওয়ার বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে ফতওয়া দেওয়ার পূর্বে উচিৎ ছিল ইমদাদুল ফতওয়ার বক্তব্যকে ভালরূপে তাহ্ক্বীক্ব করা। বিনা তাহ্ক্বীক্বে ফতওয়া দেওয়ার পরিণামও খুব ভয়াবহ।
কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ اُفْتِيَ بِغَيْرِ عِلْمٍ كَانَ اِثْـمُهٗ عَلٰى مَنْ اَفْتَاهُ.
অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তিকে ইল্ম ব্যতীত ফতওয়া দেয়া হয়েছে, অতঃপর সে তদানুযায়ী কাজ করেছে, তার গুণাহ্ যে তাকে ফতওয়া দিয়েছে, তার উপরই পড়বে। ” নাঊযুবিল্লাহ! (আবূ দাঊদ শরীফ : কিতাবুল ইলম্ : বাবুত তাওয়াক্বী ফীল ফুতইয়া : হাদীছ শরীফ নং ৩৬৫৭)
অতএব, কেউ যদি কারো ফতওয়ার উপর ভিত্তি করে রোযা অবস্থায় ইনজেকশন নেয় (আর যেহেতু ইনজেকশন নিলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যায়) তবে রোযা ভঙ্গের গুণাহ্ উক্ত ফতওয়া প্রদানকারীর উপর বর্তাবে। সুতরাং ফতওয়াদানের ব্যাপারে আমাদের সাবধান থাকতে হবে। অর্থাৎ বিনা তাহ্ক্বীক্বে ফতওয়া দান হতে বিরত থাকতে হবে। এ প্রসঙ্গে ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ওয়াকেয়াটি আমাদের জন্যে এক অমূল্য নছীহত, যদি আমরা বুঝি। তাহলো-
হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি, যিনি মালেকী মাযহাবের ইমাম। উনার সীরাতগ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে, হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রথম যেদিন ফতওয়ার মসনদে বসলেন মুফতী হিসেবে, ফতওয়া দেওয়ার জন্য সেদিনই উনার কাছে ৪০টি মাসয়ালা বা সুওয়াল আসলো। তিনি ১৮টির জাওয়াব দিয়েছেন এবং বাকী ২২টির জাওয়াবে বলেছেন, لَااَدْرِىْ অর্থাৎ ‘আমি জানি না’ যখন জাওয়াব শেষ হয়ে গেলো এবং সুওয়ালকারীগণ চলে গেলো, তখন উনার নিকটবর্তী যে সকল বড় বড় আলিম বসেছিলেন উনারা বললেন, “হে হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি! আপনি কি সত্যই ওই ২২টি মাসয়ালার জাওয়াব জানেন না? তখন হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, “হ্যাঁ, আমার জানা আছে, তবে ১৮টি মাসয়ালায় আমার পূর্ণ তাহ্কীক আছে, তাই জাওয়াব দিয়েছি, আর বাকী ২২টি মাসয়ালায় পূর্ণ তাহ্কীক নেই, হতে পারে বর্তমানে ২২টি মাসয়ালা সম্বন্ধে আমার যে ফয়সালা জানা আছে পূর্ণ তাহ্কীকের পরে তার ব্যতিক্রমও হতে পারে। এই লোকগুলো অনেক দূর থেকে প্রায় ৬ মাসের রাস্তা অতিক্রম করে আমার কাছে এসেছে মাসয়ালা জানার জন্য। এখন যদি আমি বিনা তাহ্কীকে তার জাওয়াব দিয়ে দেই যা পূর্ণ শুদ্ধ নয়, তবে তার ভিত্তিতে তারা আমল শুরু করবে, আর পরে যখন আমার পূর্ণ তাহ্কীক হবে এবং তা যদি বর্তমান ফয়সালার ব্যতিক্রম ফয়সালা হয়, তাহলে তাদেরকে কে এই মাসয়ালা সম্পর্কে বিশুদ্ধ বা পূর্ণ তাহ্কীক সম্বলিত ফতওয়াটি জানাবে? যেহেতু আমি তাদের বিস্তারিত পরিচয় বা ঠিকানা জানি না।
আর এজন্য হয়ত আমাকে মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে কঠিন জওয়াবদিহির সম্মুখিন হতে হবে এবং সাথে সাথে পাকড়াও হতে হবে।
কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
فَاسْاَلُوْآ اَهْلَ الذِّكْرِ اِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ.
অর্থ : “যদি তোমরা না জান, তাহলে যারা জানেন ও অভিজ্ঞ, তাদেরকে জিজ্ঞেস করে নাও। ” (পবিত্র সূরা নাহল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৩ ও পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পবিত্র কুরবানী ও কুরবানীদাতার ফযীলত (২)
২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ছাহিবু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, হাবীবুল্লাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওয়াজ শরীফ (৮)
২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬)
২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
জীবানু অস্ত্র ও সাম্রাজ্যবাদীদের জাতি নিধনের ষড়যন্ত্র (২)
২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ত্বাহারাতের ইস্তিব্রা ও ইস্তিন্ক্বার আহকাম
২৬ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছাহিবু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, হাবীবুল্লাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওয়াজ শরীফ (৭)
২৬ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সম্মানিত হাম্বলী মাযহাব উনার প্রতিষ্ঠাতা ও ইমাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (৩)
২৬ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আত তাক্বউইমুশ শামসী”একটি নতুন সৌর সন (২)
২৬ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাদেরকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (৬)
২৫ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ছাহিবু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, হাবীবুল্লাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওয়াজ শরীফ (৫)
২৫ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
হক্কানী-রব্বানী আলিম তথা ওলীআল্লাহ উনাদের সাথে তায়াল্লুক বা সম্পর্ক রাখা পরকালে নাযাত লাভের অন্যতম উছীলা
২৫ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
হযরত কা’ব বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার একটি ঈমানদীপ্ত পরীক্ষা
২৫ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)