পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে
রোযা অবস্থায়- ইনজেকশন, ইনহেলার, স্যালাইন ও টিকা নেয়া অবশ্যই রোযার ভঙ্গের কারণ (১৭)
, ২৬ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৭ হাদী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ০৬ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রি:, ২৪ চৈত্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
![রোযা অবস্থায়- ইনজেকশন, ইনহেলার, স্যালাইন ও টিকা নেয়া অবশ্যই রোযার ভঙ্গের কারণ (১৭)](https://www.al-ihsan.net/uploads/1712352148_ অবস্থায় ইনজেকশন,ইনসুলিন, ইনহেলার,ইনফিউশন নিলে রোজা ভঙ্গ হবে.jpg)
পূর্বপ্রকাশিতের পর
ইমদাদুল ফতওয়ায় দ্বিতীয়ত বলা হয়েছে যে, “ইনজেকশনের দ্বারা ওষুধ ইত্যাদি শিরার ভিতর পৌঁছানো হয় এবং শারাঈন (অর্থাৎ যে রগ দিয়ে রক্ত চলাচল করে) ও আভেরদা (অর্থাৎ যে রগ দিয়ে রক্ত চলাচল করেনা) এর ভিতর দিয়ে গিয়ে রক্তের সাথে মিশে যায়। মগজ অথবা পেটে ওষুধ প্রবেশ করেনা।”
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার আলোকে খন্ডনমূলক জাওয়াব : ইমদাদুল ফতওয়ার উপরোক্ত বক্তব্যটিও ভুল, কারণ এখানে রগ বলতে কি বুঝিয়েছে তা অস্পষ্ট। কেননা চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় রগ বলতে যেখানে যেটি প্রযোজ্য, সুনির্দিষ্টভাবে সেটাকেই বোঝানো হয়ে থাকে।
যদি ইন্ট্রাভেনাস (Intravenous) ইনজেকশনের কথা ধরা হয়, তবে সেক্ষেত্রে শিরা হলো রগ। তাহলে এমন কোন শিরা পাওয়া যাবেনা, যার মাধ্যমে রক্ত চলাচল করেনা। এখন তাহলে চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে রগ সম্পর্কে একটু আলোচনা করা যাক।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে রগের বর্ণনা
বলা হয়ে থাকে, রগে টান পড়া, রগ কেটে দেয়া, রগ ফুলে যাওয়া, রগ ছিড়ে যাওয়া, রগ টনটন করা, রগ দপদপ করা। এক্ষেত্রে সব রগ এক নয়। কোনটি শিরা (vein), কোনটা ধমনী (aretery), কোনটা বা টেনডন (Tendon) কিন্তু আমরা সবগুলোকেই রগ বলছি। এভাবে রগ ১০ প্রকার।
১. ধমনী (Aretery) : এটা এক প্রকার রক্তনালী যা সাধারণতঃ পরিশোধিত রক্ত বহন করে।
২. শিরা (ঠবরহ) : দূষিত রক্ত বহনকারী রক্তনালী।
৩. লসিকা নালী (Lymph Vessel) লসিকা (Lymph) বহনকারী নালী, লসিকা মানবদেহের জন্য রক্তের মতই একটি অতীব প্রয়োজনীয় দুধের মত সাদা জলীয় পদার্থ। লসিকা নালী লসিকা তন্ত্র (Lymph System)-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই লসিকা তন্ত্রের প্রধান প্রধান কাজ হলো-
(ক) শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে ফ্যাট এবং বড় আকৃতির প্রোটিন কতা মিশ্রিত বিশেষ জলীয় পদার্থ অর্থাৎ লসিকা হৃদপিন্ডের দিকে বহন করা।
(খ) রোগ প্রতিরোধে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করা।
৪. পেশী (Muscle) : এক প্রকার সংযোগ কলা যা মানুষের অস্থিসমূহকে আবৃত করে রাখে এবং মানব দেহকে সুন্দর আকৃতি দানে সহায়তা করে। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ চলাচলে মূল ভূমিকা পালন করে এই পেশী। বিভিন্ন প্রকার রক্তনালী, লসিকা নালী ও লসিকা গ্রন্থি, স্নায়ু ইত্যাদি পেশীর মধ্য দিয়ে অতিক্রমকালে তাদের স্ব স্ব কাজ সম্পাদন করে। গোশ্তপেশীর অভ্যন্তরভাগ ফাঁপা নয়।
৫. টেনডন (Tendon) : এটা পেশীর প্রান্তীয় অংশ যা দ্বারা গোশ্তপেশী সাধারণতঃ অস্থির সহিত সংযুক্ত থাকে। টেনডন মূলতঃ পেশীরই পরিবর্তীত রূপ- শরীরের বাইরে থেকে যাকে শক্ত দড়ির মত মনে হয়।
৬. স্নায়ু (Nerve) : যা মানবদেহের অনুভূতি বহনকারী স্নায়ুতন্ত্র (Nervous System)-এর একটি বিশেষ অংশ। এটা দেখতে এবং আকার আকৃতিতে সাদা রং-এর দড়ির মত। এর অভ্যন্তর ভাগও ফাঁপা নয়।
৭. ¯ স্নায়ুরজ্জু (Spinal Cord) এটিও স্নায়ুতন্ত্রেরই একটি অংশ যা মেরুদ-ের অভ্যন্তরে অবস্থিত।
এটি মস্তিষ্কের সাথে শরীরের অভ্যন্তরস্থ দূরবর্তী স্নায়ূসমূহকে সংযোগকারী। ¯ স্নায়ুরজ্জু আসলে বহু সংখ্যক স্নায়ুর সমষ্টি। তবে এর অভ্যন্তরভাগে সরু একটি নালী আছে, যার ভিতর দিয়ে সেরিব্রো-স্পাইনাল ফ্লুইড (Cerebro-Spinal Fluid ev CSF) নামক পানির মত স্বচ্ছ তরল পদার্থ মস্তিষ্ক থেকে ¯ স্নায়ুরজ্জুর নিম্ন প্রান্ত পর্যন্ত চলাচল করে।
৮. কণ্ঠনালী বা শ্বাসনালী (Trachea) : গলার সম্মুখভাগে অবস্থিত দেখতে প্রায় বাঁশের আকৃতির, যার মধ্যভাগ ফাঁপা এবং ভিতর দিয়ে বাতাস চলাচল করে। মানবদেহের শ্বাসতন্ত্র (Respiratory System)-এর অন্যতম প্রধান অংশ হিসাবে এটি কাজ করে থাকে।
৯. খাদ্যনালী (Esophagus/Oesophagus) : শ্বাসনালীর ঠিক পশ্চাতেই অবস্থিত। মানবদেহের পরিপাকতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে মুখ ও পাকস্থলীকে সংযোগ করে থাকে।
১০. শুক্ররজ্জু (Spermatic Cord) : অন্ডকোষকে পেটের সাথে সংযোগকারী নালী যা শুক্রনালী, ধমনী, শিরা লসিকা নালী ও স্নায়ু ইত্যাদির সমন্বয়ে গঠিত। উল্লেখ্য, সাধারণতঃ মানুষ রগ বলতে উপরোক্ত দশটির যে কোন একটি বা একাধিকটিকে বুঝিয়ে থাকেন (যেমন- রগে টান পড়া, রগ কেটে দেয়া, রগ ফুলে যাওয়া, রগ ছিড়ে যাওয়া, রগ টনটন করা, রগ দপদপ করা) যদিও চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় রগ বলতে যেখানে যেটি প্রযোজ্য সুনির্দিষ্টভাবে সেটিকেই বোঝানো হয়ে থাকে।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রগ সম্পর্কে ইমদাদুল ফতওয়ার উক্ত বক্তব্যও ভুল। কারণ চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে এমন কোন শিরা বা রগ পাওয়া যাবেনা, যার দ্বারা রক্ত চলাচল করেনা। আর কোন ওষুধই রক্তের সাথে মিশে গিয়ে নিঃচিহ্ন হয়ে যায়না বরং রক্তে ওষুধের উপস্থিতি থাকে এবং তা সহজেই মগজে পৌঁছে যায়।
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, ইনজেকশন সম্পর্কে ইমদাদুল ফতওয়ার উপরোক্ত বক্তব্য মোটেও শুদ্ধ হয়নি। মূলকথা হলো- ইনজেকশন নিলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। কারণ ইনজেকশনের দ্বারা ব্যবহৃত ওষুধ মগজে পৌঁছে থাকে।
(গবেষনাকেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ কর্তৃক মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার ফতওয়া বিভাগে প্রকাশিত)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ছবি তোলা শক্ত হারাম, রয়েছে কঠিন শাস্তি
২৭ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম
২৭ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৭ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
২৭ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কাফির-মুশরিক, বেদ্বীন-বদদ্বীনদের সঙ্গে কখনই মুহব্বত করা ও সাদৃশ্য রাখা যাবে না
২৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
অন্যায়কে ঘৃণা না করলে ঈমানদার থাকা যায় না
২৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
তা’বীয ও ঝাড় ফুঁক সম্পর্কে শরয়ী ফায়সালা (৪)
২৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)