লাখো মুসলমান শহীদ করা মোঙ্গলরা যভোবে সম্মানতি দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করলো
, ০৮ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৮ ছানী, ১৩৯১ শামসী সন , ২৭ জুলাই, ২০২৩ খ্রি:, ১২ শ্রাবণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) ইতিহাস
ইতিহাসে মুসলিম বিশ্বের উপর যারা নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েছিলো তাদের মধ্যে মোঙ্গলদের হামলা ছিলো সবচেয়ে ভয়াবহ। এই মোঙ্গলরাই প্রথমে ঐতিহাসিক বোখারা নগরীকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে। এরপর সমরকন্দের উপর আক্রমণ করে এবং শহরের একজন অধীবাসীও তাদের হাতে জীবিত রক্ষা পায়নি। তারা একে একে রে, হামদান, কযভীন,মার্ভ ও নিশাপুর ধ্বংস করে এবং কোটি মুসলমানকে নির্মমভাবে শহীদ করে।
ইরান ও তুর্কিস্তান তছনছ করার পরে তাতারীরা পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে সমৃদ্ধ নগরী বাগদাদ শরীফকেও ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছিলো। যে ইতিহাস স্বরণ করলে এখনো হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয় মুসলমানদের। ইবন কাসির রহমাতুল্লাহি আলাইহি লেখেন, ৪০ দিন পর্যন্ত বাগদাদে গণশহীদ ও ধ্বংসের রাজত্ব চলে। নগর-উদ্যান, যা পৃথিবীর সুন্দরতম ও সমৃদ্ধতম নগর ছিলো, এমন ধ্বংস ও বিরান হয় যে, অলিতেগলিতে লাশের স্তুপ পড়ে থাকে।
কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার নিদর্শন বোঝা কখনোই সাধারণ বান্দা-বান্দীদের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ এই দুর্ধর্ষ মোঙ্গলরাই এক সময় দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করে দ্বীন ইসলামবিরোধীদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী জিহাদে অবতীর্ণ হয়েছিলেন এবং দ্বীন ইসলাম উনার অসামান্য খিদমত করেছিলো।
বর্বর চেঙ্গিস খানের নাতি বারকে খান একবার বুখারার ভেতর দিয়ে ইউরোপ থেকে রাজধানী খারখোরিন যাচ্ছিলেন মঙ্গোলীয়দের উচ্চ পর্যায়ের সভায় যোগ দেবার জন্য। তিনি মুসলমানদের একটি মরুযাত্রী দলের সাক্ষাৎ পেলেন। সে দলে ছিলেন হযরত সুফী সাইফ উদ্দিন রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। উনার কাছে মুসলমানদের বিশ্বাস সম্পর্কে জানতে চান তিনি। হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনার নেক নজর মুবারকে যে মানুষের ভাগ্য বদলে যায় তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ এই ঘটনাটি। বারকে খানের মাও ছিলেন একজন খৃষ্টান। তাদের এতদিনের বিশ্বাস হযরত সুফী সাইফ উদ্দিন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার একটি মাত্র দৃষ্টিতে পাল্টে যায়। উনার কাছে দ্বীন ইসলাম উনার ইনসাফপূর্ণ বাণী মুবারক শুনে বারকে খান ও তার মা দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করে উনার হাতে বায়াত হন ।
বারকে খান নিজেই শুধু দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেননি, বরং অন্যান্য মঙ্গোল খানদেরও দ্বীন ইসলাম উনার দাওয়াত দেন এবং তাদের অনেকেই মুসলমান হয়ে যায়। তিনিই ছিলেন প্রথম মোঙ্গল শাসক যিনি মুসলমান হয়েছিলেন এবং মোঙ্গল ভূখন্ডেই একটি ইসলামী শাসন কায়েম করেছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি দ্বীন ইসলাম উনার খিদমত করেছেন এবং মোঙ্গলদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের রক্ষার জন্য ঢাল হিসেবে মোঙ্গল ও মুসলমানদের মাঝে ঠায় দাড়িয়ে গিয়েছিলেন। এদিকে তারই চাচাত ভাই হালাকু খান তৎকালীন খাকান মংকে খানের আদেশে মুসলিমদের ধ্বংসের নীল নকশা হাতে নিয়ে বাগদাদে মুসলিমদের উপর ইতিহাস কুখ্যাত অবর্ণনীয় ধ্বংসযজ্ঞ চালালে বারকে খান শপথ নেন- “সে (হালাকু) মুসলিম জনপদগুলো ধ্বংস করেছে। মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সহায়তায় অবশ্যই আমি তার কাছে থেকে প্রতিটি নিরপরাধ লোকের শহীদের প্রতিশোধ নিব।“
কিন্তু বিরাট মোঙ্গল বাহিনীর বিরুদ্ধে একা লড়া প্রায় অসম্ভব ছিলো। তাই তিনি অনুধাবন করেন মোঙ্গলদের পরাস্ত করতে আগে তাদের দুর্বল করা প্রয়োজন। তারই সূত্র ধরে তিনি খাকান হিসেবে আরিকবুকাকে সমর্থন দেয়ার মাধ্যমে মোঙ্গলদের মাঝে প্রথম গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটান, তৎকালীন মুসলিম মামলুক সালতানাতকে সহায়তা দেন যার ফলশ্রুতিতেই হালাকু খান ইতিহাস বিখ্যাত আইন জালুতের যুদ্ধে শোচনীয় পরাজয় বরণ করে।
গোল্ডেন হোর্ড, ককেশাস অঞ্চল ছাড়াও মোঙ্গলদের মাঝে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিকাশ ঘটানোতে বারকে খানের অতুলনীয় অবদান ছিলো। তার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে হাজারো মানুষ মুসলমান হচ্ছিলো। বারকে খানের দাওয়াতে দ্বীন ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন খোরাসানের গভর্নর আজতাঈ, বলা হয়ে থাকে তার সাথে তার লাখেরও বেশি সেনা মুসলমান হয়ে গিয়েছিলো।
এছাড়াও মোঙ্গল শিবিরে দ্বীন ইসলাম উনার প্রচার প্রসার যখন প্রবল বেগে শুরু হয় তখন হালাকু খানের সপ্তম ছেলে তাকুদার খান মুসলমান হয়ে যান। হালাকু খান কর্তৃক ইরাক, ইরান ও সিরিয়া দখলের সময় তাকুদার চীনে অবস্থান করছিলেন। মুসলিম হয়ে তিনি আহমাদ নাম ধারণ করেন। এছাড়াও ইলখানাতের সপ্তম শাসক চেঙ্গিস খানের বংশধর মাহমুদ ক্বাযানও দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।
মুগদা হাসপাতালে আপাতত ডেঙ্গু রোগী ভর্তি করা হবে না
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪০)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কেমন ছিলো মোঘল সালতানাতের গোলন্দাজ এবং অশ্বারোহী বাহিনী
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পান্থনিবাস ও সরাইখানা নির্মাণে মুসলমানদের অনবদ্য অবদান
২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৯)
১৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুসলমানদের শিক্ষা-দীক্ষার বিরোধিতায় বিধর্মী-অমুসলিমরা
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাংলার হিন্দু ধনিক-বণিক, বেনিয়া শ্রেণী, ব্যাংকার প্রভৃতির সাথে এক গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মুসলিম
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইউরোপকে যেভাবে সমৃদ্ধ করেছেন আফ্রিকান মুসলমানরা
১২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
গুজরাটের সুলতান মুজাফফর শাহের পরহেজগারিতা এবং ভ্রাতৃত্ববোধ
০২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৭)
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কেমন ছিলেন ইসলামী ইতিহাসের প্রথম আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঐতিহাসিক মুসলিমবাগ ঈদগাহ-ই কি আজকের ঢাকেশ্বরী মন্দির?
২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
১২টি চন্দ্রমাসের নাম এবং নামকরণের সার্থকতা (২)
২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












