ইতিহাস
সম্মানিত ইসলামী সভ্যতা উনার অনন্য বিচারিক ব্যবস্থা ‘আল হিসবাহ’ উনার ইতিকথা (২)
, ১৪ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১০ রবি’, ১৩৯৩ শামসী সন , ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ২৩ ভাদ্র, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) ইতিহাস
সমাজ থেকে সকল অবিচার, অনাচার, অপরাধ দূর করে মুসলমানদের মধ্যে নৈতিকতার প্রচার প্রসারের জন্যই সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনার সময়ে তৈরী করা হয়েছিলো একটি বিচারিক ব্যবস্থা। যার নাম হলো ‘আল হিসবাহ’। আল হিসবাহ’র দায়িত্বশীলগণকে বলা হতো মুহতাসিব।
হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের পরে আল হিসবাহ’র কার্যক্রম উমাইয়া এবং আব্বাসীয় শাসনামলেও ছিলো। সাইয়্যিদুনা হযরত আমীরে মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্মানিত খিলাফতকালে বসরার বাজারে প্রথম মুহতাসিব নিয়োগ করা হয়।
পরবর্তীতে আব্বাসীয়দের যুগ থেকে মুহতাসিবের পদ ও দায়িত্ব নতুনভাবে পরিচিতি লাভ করে। আব্বাসীয় শাসক আবু জাফর মনসুরের শাসনকাল থেকেই এ পদটি মানুষের মাঝে প্রসিদ্ধ হয়ে ওঠে। আর এ কারণেই সমাজের পুনর্বিন্যাস ও মুহতাসিবদের জন্য সুষ্ঠুরূপে দায়িত্ব পালনের পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে আবু জাফর মনসুর বাগদাদ শরীফের বাজারগুলো কেন্দ্রীয় শহর ও সরকারি কার্যালয় থেকে দূরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে স্থানান্তর করে দেন। এরই ফলে বাবুল কারখ ও বাবুশ শাইর শহরদুটিতে বাজার স্থানান্তরিত হয়। সেখানে নিযুক্ত হয় পৃথক পৃথক মুহতাসিব। বাজারে সার্বক্ষণিক নজরদারি ও ত্রুটিপূর্ণ বিষয়গুলো সংস্কারের দায়িত্ব ছিলো মুহতাসিবের উপর।
শুরুতে বাজারের পরিমাপ ও ওজন নির্ণয় করা, পণ্য মজুদ করা থেকে মানুষকে বারণ করা, সৎ কাজের আদেশ করা এবং অসৎ কাজ থেকে মানুষকে নিষেধ করা এগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো মুহতাসিবের দায়িত্ব। কিন্তু আব্বাসীয় যুগে মুহতাসিবের দায়িত্ব আরও সম্প্রসারিত হয়। ফলে মসজিদ-মাদরাসাসমূহ পরিচ্ছন্নতার উপর নজরদারি করা, শাসনকার্যের দায়িত্বশীলরা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছেন কিনা এ বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখা, এমনকি মুয়াজ্জিন তিনি সময়মতো আযান দিচ্ছেন কিনা তাও যাচাই করার দায়িত্ব ছিলো মুহতাসিবদের উপর।
শুধু তাই নয়, কাযী ও বিচারকগণ সময়মতো এজলাসে বসছেন কিনা তাও খতিয়ে দেখার দায়িত্ব ও ক্ষমতা ছিলো মুহতাসিবের। এমনকি নানা পেশার মানুষ যথাযথ যোগ্যতা নিয়ে কাজে বসছেন কিনা তাও তদন্ত করার অধিকার ছিলো মুহতাসিবদের। যেন সাধারণ মানুষ তাদের কাছে এসে প্রতারিত না হয়। একবার আব্বাসীয় শাসক মুতাযিদ প্রধান সিনান ইবনে সাবিতকে নির্দেশ দেন বাগদাদের সকল চিকিৎসকের পরীক্ষা নিতে। সর্বমোট চিকিৎসকের সংখ্যা ছিলো ৮৬০ জন। অপরদিকে মুহতাসিবকে নির্দেশ দেন পরীক্ষায় টিকতে না পারলে কোনো ডাক্তারকে যেন চিকিৎসা সেবা প্রদানের অনুমতি দেওয়া না হয়।
মুহতাসিবের ক্ষমতা এতটাই বেশি দেয়া হতো যে, যদি এমন একজন সেনাপতি যার হাতের ইশারায় ৫০ হাজার সেনা ঝাঁপিয়ে পড়বে কোনো চিন্তা না করেই, তিনিও যদি কোনো অপরাধ করেন তাহলে সেই সেনাপতিকে তার পুরো সৈন্যদলের সামনে শাস্তি প্রদান করার ক্ষমতা ছিলো একজন মুহতাসিবের। এ কারণেই মুসলমান শাসকগণ সবসময় মুহতাসিব পদের জন্য যোগ্য, জ্ঞানীয় ও সাহসী ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতেন।
ইতিহাসভিত্তিক গ্রন্থ নিহায়াতুর রুতবা গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে। একবার দামেস্কের সুলতান আতাবেক তুগতেকিন একবার মুহতাসিব খোঁজ করলেন উনাকে একজন বিজ্ঞ ও সাহসীয় মানুষের সন্ধান দেয়া হলো। তিনি উনাকে দরবারে উপস্থিত করতে বললেন। ওই ব্যক্তি দরবারে উপস্থিত হলে সুলতান তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আপনাকে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধের জন্য মুহতাসিব নিযুক্ত করা হলো। এ কথা শুনে ওই ব্যক্তি তৎক্ষনাৎ বলে উঠলো, তাই যদি হয় তবে আপনার এই তোষক থেকে উঠে দাড়ান এবং ওই দামি গদি অপসারণ করুন। কারণ উভয়টি রেশমের তৈরী।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে পুরুষদের জন্য রেশম ও স্বর্ণ ব্যবহার হারাম করা হয়েছে। একথা শোনামাত্রই সুলতান তোষক থেকে উঠে দাড়ালেন। গদি সরিয়ে নিতে বললেন এবং হাত থেকে আংটি খুলে ফেললেন। বললেন, এ দায়িত্বের পাশাপাশি এখন থেকে পুলিশদের উপর নজরদারি করার দায়িত্বও আপনাকে দেয়া হলো। সে সময়ে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে প্রভাবশালী মুহতাসিব। (অসমাপ্ত)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কেমন ছিলো মোঘল সালতানাতের গোলন্দাজ এবং অশ্বারোহী বাহিনী
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পান্থনিবাস ও সরাইখানা নির্মাণে মুসলমানদের অনবদ্য অবদান
২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৯)
১৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুসলমানদের শিক্ষা-দীক্ষার বিরোধিতায় বিধর্মী-অমুসলিমরা
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাংলার হিন্দু ধনিক-বণিক, বেনিয়া শ্রেণী, ব্যাংকার প্রভৃতির সাথে এক গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মুসলিম
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইউরোপকে যেভাবে সমৃদ্ধ করেছেন আফ্রিকান মুসলমানরা
১২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
গুজরাটের সুলতান মুজাফফর শাহের পরহেজগারিতা এবং ভ্রাতৃত্ববোধ
০২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৭)
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কেমন ছিলেন ইসলামী ইতিহাসের প্রথম আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঐতিহাসিক মুসলিমবাগ ঈদগাহ-ই কি আজকের ঢাকেশ্বরী মন্দির?
২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
১২টি চন্দ্রমাসের নাম এবং নামকরণের সার্থকতা (২)
২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ঐতিহাসিক খেমকারান যুদ্ধ: যেভাবে বাংলাদেশের জাতীয়তাবোধের উদ্ভব
২৫ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)












