সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রচার-প্রসারে নৌ-বাণিজ্যের অবদান
, ০৫ শা’বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৮ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন , ২৬শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ১২ই ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) ইতিহাস
পৃথিবীব্যাপী নৌপথে মানুষের যাতায়াত এবং বাণিজ্য সুদীর্ঘকাল ধরে চলমান। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার আগমনের পূর্ব থেকে আরবের মানুষ সমুদ্রপথে বাণিজ্য করত। সম্মানিত হযরত খোলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের সময়ে সামুদ্রিক বাণিজ্যের ধারা আরো গতিশীল হয়। সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনার পরিধি বিস্তৃত হওয়ার সঙ্গে সমুদ্র বাণিজ্যের আয়তন বৃদ্ধি পেতে থাকে। যা উমাইয়া ও আব্বাসীয়দের যুগেও অব্যাহত থাকে।
বাণিজ্যিক এসব কাফেলার মাধ্যমেই ভারত মহাসাগরের উপকূলে, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইনসহ বিশ্বের কোনায় কোনায় সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দাওয়াত মুবারক পৌছে যায়।
ভৌগোলিক অবস্থার কারণে প্রাচীনকাল থেকে আরব উপদ্বীপের অধিবাসীগণ সামুদ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল ছিলো। একদিকে তা ছিল দূরপ্রাচ্য ও আরবের মধ্যপ্রাচ্যের সংযোগস্থল। তা ছাড়া এটি ছিল সমুদ্র পারাপারের জন্য ইউরোপের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ স্থান। আরব উপদ্বীপের লোকজনও আরব উপসাগর, ভারত মহাসাগর ও লোহিত সাগরের আবহাওয়া সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখত। তাই আরবদের সমুদ্র চলাচল অনেকটা স্বাভাবিক ছিল। বাণিজ্যিক কারণে দূরপ্রাচ্যসহ ভারত ও আফ্রিকার পশ্চিমাঞ্চলে যাতায়াত ছিল তাদের।
অঞ্চলভিত্তিক গুরুত্বের কারণে এজন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরব উপদ্বীপের বিভিন্ন অঞ্চলে দূত প্রেরণ করেছেন। পরবর্তীতে হযরত খোলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিভিন্ন পদক্ষেপ থেকে সমুদ্রের উপকূলীয় অঞ্চলের গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়, যা পরবর্তীদের সামুদ্রিক অভিযান প্রেরণে সহায়ক হয়।
বাহরাইনের গভর্নর আলা হাজরামি রহমাতুল্লাহি আলাইহি সামুদ্রিক অভিযান প্রেরণ করেন এবং এতে অভূতপূর্ব সাফল্য লাভ করেন। এর পূর্বে হযরত উসমান বিন আবিল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আরেকটি সামুদ্রিক অভিযান প্রেরণ করেন। আমিরুল মুমিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যূন নুরাইন আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনার সময়ে সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনার বিস্তৃতি ঘটার সাথে সাথে মুসলিম আরব বণিকদের সামুদ্রিক বাণিজ্যের পরিমান বেড়ে যায়। ফলে উনাদের নিরাপত্তার জন্য মুসলিম নৌবাহিনী গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। বিশেষত এই সময় মিসর ও সিরিয়ার উপকূলবর্তী এলাকার বহু মুসলিম সমুদ্র বাণিজ্যে সক্রিয় হয়। উনাদের নিরাপত্তায় হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মুসলিম নৌবাহিনী গঠনের আরজি মুবারক পেশ করেন এবং সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি তা কবুল করেন এবং অনুমতি মুবারক প্রদান করেন। মুসলিম নৌবাহিনী গঠনের মুসলিম বাণিজ্যিক জাহাজগুলো ভূমধ্যসাগর, পারস্য সাগর ও ভারত মহাসাগরে উনাদের তৎপরতা বৃদ্ধি করেন।
হিজরী প্রথম শতাব্দীতে বিভিন্ন অঞ্চলে মুসলিম বাহিনীর সামুদ্রিক বন্দর স্থাপিত হয়। আব্বাসীয় সালতানাতের যুগে ভারত মহাসাগর ও আরব উপসাগরে বিভিন্ন অভিযান প্রেরণ করা হয়। এসব অভিযানের পুরোটাই সামরিক ছিল না বরং বাণিজ্যিকও ছিল। আব্বাসীয় শাসক আবু জাফর মানসুর বাগদাদকে আব্বাসীয়দের রাজধানী ঘোষণা করেন। তখন দজলা ও ফোরাত নদী দিয়ে বিভিন্ন বন্দরে যোগাযোগ রক্ষা করা হয়। তৃতীয় ও চতুর্থ শতাব্দীতে আব্বাসীয় শাসকদের তত্ত্বাবধানে সামুদ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি ঘটে মুসলিম বিশ্বের ইউরোপ ও আফ্রিকার বাণিজ্যিক যোগাযোগও বৃদ্ধি পায় এ সময়। (মুজামুল বুলদান)
আব্বাসি যুগে ইরাকে শিল্প ও কৃষির বিপ্লব ঘটে। আর তাতে উৎপন্ন পণ্যসামগ্রী ও অন্যান্য দ্রব্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে দজলা ও ফোরাত নদী দিয়ে রপ্তানি করা হয়। এ পথে বাণিজ্যিক পণ্য আমদানিতে ব্যবসায়ীরা মনোযোগী হয়ে ওঠে। এ সময়ে নৌবাহিনী ও সামুদ্রিক কাফেলার মাধ্যমে গড়ে ওঠে বাহরাইন, ওমান, বসরা, সাইরাফসহ অনেক বন্দর। দূরপ্রাচ্যের বাণিজ্যিক কেন্দ্র ভারত, সিন্ধু, চীনসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক কেন্দ্র থেকে মুসলিম দেশগুলোর প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর আমদানি জোরদার হয়। মধ্যপ্রাচ্য, দূরপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর নানা দেশে আমদানি-রপ্তানির মাধ্যমে গড়ে ওঠে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক। তবে এ সম্পর্কের মূল উদ্দেশ্যই ছিলো সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রচার প্রসার। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রচার-প্রসারের কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে আরব ব্যবসায়ীগণ উনাদের সবাই অত্যন্ত সম্মান এবং তাযীম তাকরীম করতো।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আছিম ইবনে ছাবিত রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ঈমানদীপ্ত আত্মত্যাগ মুবারক
২১ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ইতিহাসে সমৃদ্ধশালী ও গুরুত্বপূর্ণ নৌবন্দরসমূহ (২)
১৯ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ইতিহাসে সমৃদ্ধশালী ও গুরুত্বপূর্ণ নৌবন্দরসমূহ (১)
১৮ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দিল্লীর মামলুক সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের ন্যায়পরায়ণতা
১৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সুলতান আব্দুল হামিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইলদিজ প্রাসাদে ইফতার আয়োজনের স্মৃতিকথা
১০ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে মুসলমানদের অবিস্মরণীয় বিজয়সমূহ
১০ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দেশে দেশে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার আগমন (চীন)
০৫ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
যুগে যুগে ইহুদীদের জঘন্য চরিত্র ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র (প্রারম্ভিক)
১৩ মার্চ, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দেশে দেশে মুসলিম নির্যাতন (৩)
২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দেশে দেশে মুসলিম নির্যাতন (২)
১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দেশে দেশে মুসলিম নির্যাতন (১)
১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দ্বীন ইসলাম প্রাথমিক যুগেই চীনে দ্বীন ইসলাম ও মুসলমানদের আগমন
০৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)