পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আলোকে
সম্মানিত যাকাত উনার আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল
, ২৫ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৬ হাদী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ০৫ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রি:, ২৩ চৈত্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
উশরযোগ্য ফল-ফসলের বিধান
উশর সম্পর্কে সম্মানিত হানাফী মাযহাব উনার ইমাম হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যমীনে উৎপন্ন যাবতীয় ফসলেরই উশর অথবা নিছফু উশর দিতে হবে। চাই দীর্ঘস্থায়ী শস্য যেমন- খেজুর, আম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা ইত্যাদি ফলফলাদি হোক অথবা ক্ষণস্থায়ী শস্য যেমন- ধান, গম, সরিষা, কলা, পেঁপে, শাক-সবজি ইত্যাদি যেটাই হোক। তিনি আরো বলেন, ফসল কম-বেশি যাই হোক না কেন, তার উশর বা নিছফে উশর অবশ্যই আদায় করতেই হবে। অনুরূপ মধুরও উশর বা সম্মানিত যাকাত আদায় করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِىْ الْعَسَلِ فِىْ كُلِّ عَشَرَةِ اَزُقٍّ زِقٌّ.
অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, প্রতি দশ মশক মধুর জন্যে এক মশক যাকাত ধার্য হবে। ” (তিরমিযী শরীফ : কিতাবুয যাকাত : বাবু মাযাআ ফী যাকাতিল ‘আসাল : হাদীছ শরীফ নং ৬২৯)
অন্য এক পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ اَبِيْهِ عَنْ جَدِّهٖ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنَّهٗ اَخَذَ مِنْ الْعَسَلِ اَلْعُشْرَ.
অর্থ : “হযরত আমর বিন শুয়াইব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার পিতা থেকে উনার পিতা উনার দাদা আবদুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মধু থেকে এক-দশমাংশ (উশর) গ্রহণ করেছেন। ” (ইবনে মাজাহ শরীফ : কিতাবুয যাকাত : বাবু যাকাতিল ‘আসাল : হাদীছ শরীফ নং ১৮২৪)
উশর কে দিবেন : যিনি বা যারা ফসলের মালিক হবেন তিনি বা উনারাই উশর প্রদান করবেন।
উশর কতটুকু দিবেন : সম্মানিত হানাফী মাযহাব মতে, উশর উনার কোন নিছাব নেই। বিনা পরিশ্রমে যমীন থেকে উৎপাদিত ফসল ও ফল-ফলাদির ১০ ভাগের ১ ভাগ বা তার মূল্য দান করে দিতে হবে। আর পরিশ্রম করে ফসল বা ফল ফলাদি ফলানো হলে তখন ২০ ভাগের ১ ভাগ বা তার মূল্য দান করে দিতে হবে।
ধান, চাল, গম ইত্যাদি ব্যতীত ফল-ফলাদির ১০টির ১টি বা ২০টির ১টি দিতে হবে। আর যদি ৫টি হয় তবে একটার অর্ধেক দিতে হবে অথবা সমপরিমাণ মূল্য দিতে হবে।
উশর কখন দিবেন : উশর আদায়ের নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। যতোবারই ফসল উৎপন্ন হবে ততোবারই ফসলের উশর দিতে হবে।
উশর ব্যয়ের খাতসমূহ : যে খাতে বা স্থানে সম্মানিত যাকাত ব্যয় করা যায়, সে খাত বা স্থানেই উশর ব্যয় করতে হবে।
উশর আদায়ের হুকুম : উশর আদায় করা সম্মানিত যাকাত উনার মতই ফরয। কেউ যদি উশর আদায় না করে তাহলে সে ফরয অনাদায়ের গুনাহে গুনাহগার হবে।
কর ও খাজনা প্রদানকৃত যমীনের ফসলে উশর দেয়ার হুকুম : কর ও খাজনা প্রদানকৃত যমীনের ফসলেরও উশর আদায় করতে হবে। কেননা কর ও খাজনা দেয়া হয় সরকারি খাতে জমি সংরক্ষণ, জরিপ ও দেখাশুনা করার জন্য। অনেক জমিতে ফসল না হলেও খাজনা দিতে হয়। আবার পূর্ব যামানায় জমিতে খাজনাও দিতে হতো না। অতএব, কর ও খাজনা প্রদানকৃত যমীনের ফসলেরও উশর আদায় করতে হবে, যা ফরযের অন্তর্ভুক্ত। স্মরণ রাখতে হবে, সম্মানিত যাকাত হলো ফরয ইবাদত। যা মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের কর্তৃক ফরয করা হয়েছে। সম্মানিত যাকাত উনার সাথে কর ও খাজনার কোন সম্পর্ক নেই। উল্লেখ্য, কর ও খাজনা মানুষ কর্তৃক অর্থাৎ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হয়।
উশর আদায়ের ফযীলত : সম্মানিত যাকাত দিলে যেমন সম্পদ বৃদ্ধি পায় এবং পবিত্র হয়, ঠিক তেমনি উশর আদায় করলেও ফসল, ফল-ফলাদি বৃদ্ধি পাবে ও পবিত্র হবে। সাথে সাথে বিভিন্ন প্রকার দুর্যোগ যেমন- ঝড়-তুফান, বন্যা-খরা, পোকা-মাকড়ের আক্রমণ, প্রাকৃতিক দূর্যোগ ইত্যাদি থেকেও ফসল ও ফল-ফলাদি হিফাযত হবে। সুবহানাল্লাহ!
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পরিভাষা, শব্দ ও বানান আগ্রাসন (৯)
০১ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হালাল হারামের কথা-১৪
০১ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সুমহান পবিত্র ২১শে শাওওয়াল শরীফ: মুবারক প্রেক্ষাপট
০১ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দ্বীন ইসলাম উনার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দিবস পালন নিয়ে বিভ্রান্তির দলীলসম্মত জাওয়াব
৩০ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
রাজারবাগ শরীফ উনার পরিচিতি
৩০ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল খ্বমিসাহ আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
৩০ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইলিম এবং আলিম উনাদের ফযীলত
৩০ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
২৮ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৩১)
২৮ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র কুরবানী ও কুরবানীদাতার ফযীলত (২)
২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ছাহিবু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, হাবীবুল্লাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওয়াজ শরীফ (৮)
২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬)
২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)