সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সংক্ষেপে বা ইশারা-ইঙ্গিতে পবিত্র দুরূদ শরীফ লেখা নাজায়িয, চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৩)
, ২৬ রবিউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২০ খমীছ, ১৩৯৩ শামসী সন , ১৯ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রি:, ০৩ কার্তিক, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ
আল্লামা হযরত শামসুদ্দীন সাখাভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলেন-
(وَاجْتَنِبْ) أَيُّهَا الْكَاتِبُ (الرَّمْزَ لَهَا) أَيْ: لِلصَّلَاةِ عَلَى رُسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي خَطِّكَ، بِأَنْ تَقْتَصِرَ مِنْهَا عَلَى حَرْفَيْنِ وَنَحْوِ ذَلِكَ فَتَكُونَ مَنْقُوصَةً صُورَةً كَمَا يَفْعَلُهُ الْكِسَائِيُّ وَالْجَهَلَةُ مِنْ أَبْنَاءِ الْعَجَمِ غَالِبًا وَعَوَامُّ الطَّلَبَةِ فَيَكْتُبُونَ بَدَلًا عَنْ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ص أَوْ صم أَوْ صلم أَوْ صلعم
অর্থ: “হে লেখকগণ! আপনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সম্মানিত দুরূদ শরীফ লেখার ক্ষেত্রে সংকেত ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। যেমন, দুই হরফের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা বা অনুরূপ এক অক্ষর লেখা। এটা একটি অসম্পূর্ণ ছূরত। যেটা অধিকাংশ ক্ষেত্রে কিছু অনারব অলস প্রকৃতির লোক ও কিছু জাহিলরা করে থাকে। আর কিছু সাধারণ শিক্ষার্থীরাও ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ উনার পরিবর্তে ص, صم, صلم এবং صلعم ইত্যাদি লিখে থাকে। ” নাঊযুবিল্লাহ! (ফাতহুল মুগীছ ৩/৭১-৭২)
বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থে বর্ণিত রয়েছে-
ويتجنب أن يكتب ্রصلعمগ্ধ مكان- صلى الله عليه وسلم- كما يفعله الكسالى والجهلة وعوام الطلبة
অর্থ: “ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ উনার স্থানে (صلعم) এভাবে সংকেতের মাধ্যমে লেখার অভ্যাস পরিহার করা উচিত। যেমনটা কিছু অলস, মূর্খ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা লিখে থাকে। ” (শরহে ছহীহিল বুখারী ৩/২৬)
হযরত ইবনে হাজার হাইতামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
كلمة صلعم لا تجوز بل الواجب التصلية والتسليم
অর্থ: “(صلعم) এই বাক্যটি জায়িয নয়। বরং ওয়াজিব হচ্ছে, ছলাত ও সালাম পুরোটা একসাথে লেখা। ” (ফতওয়ায়ে হাদীছিয়্যাহ, মু’জামুল মানাহী আল লফজিয়্যাহ ১১২ পৃষ্ঠা)
পূর্ববর্তীগণ কেউ সংক্ষেপে দুরূদ শরীফ লিখতেন না:
হযরত ইবনে হাজার হাইতামী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ ৯৭৪ হিজরী) তিনি বলেন-
ولا يختصر كتابتها بنحو صلعم فإنه عادة المحرومين
অর্থ: “(পূর্ববর্তীগণ উনারা) (صلعم) দ্বারা এভাবে সংক্ষেপে ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ লিখতেন না। কেননা এটা হচ্ছে (নেকী থেকে) বঞ্চিত লোকদের অভ্যাস। ” নাঊযুবিল্লাহ! (ফাতওয়ায়ে হাদীছিয়্যাহ ৫৪৭ নং পৃষ্ঠা)
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-
ولا تختصر الصلاة في الكتاب ولو وقعت في السطر مرارًا كما يفعل بعض المحررين المتخلفين فيكتب صلع، أو صلم، أو صلعم، وكل ذلك غير ليق بحقه - صلى الله عليه وسلم -، وقد ورد في كتابة الصلاة بكمالها وترك اختصارها آثار كثيرة
অর্থ: “(পূর্ববর্তীগণ উনারা) দুরূদ শরীফ লেখার সময় সংক্ষেপে লেখতেন না। যদিও লেখার সময় বারবার (দুরূদ শরীফ) আসতেন। যেটা ভিন্ন মতালম্বী লেখকরা লিখে থাকে। যেমন তারা صلع- صلمঅথবা صلعم এভাবে লিখে থাকে। এগুলো প্রত্যেকটাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক উনার খিলাফ। সম্মানিত দুরূদ শরীফ লেখার সময় পূর্ণভাবেই লিখতে হবে। এটা পরিহার করার ব্যাপারে অনেক আছার বর্ণিত রয়েছে। ” (তাযকিরাতুস সামি ওয়াল মুতাকাল্লিম ফী আদাবিল আলিম ওয়াল মুতাআল্লিম ৬২ নং পৃষ্ঠা)
সংক্ষেপে দুরূদ শরীফ লেখা চরম বেয়াদবী:
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-
رمز اتخذه بعض متأخري المسلمين بديلاً عن كلمة (صلى الله عليه وسلم)، وفيه سوء أدب مع رسول الله صلى الله عليه وسلم ولا بركة في مثل هذا النوع من الاختصار
অর্থ: “পরবর্তী যুগের কিছু মুসলমান ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ এই বাক্য মুবারক উনার পরিবর্তে সংকেত গ্রহণ করেছে। এতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে চরম বেয়াদবী রয়েছে। আর এভাবে সংক্ষেপে লেখার মধ্যে কোনো বরকতও নেই। ” নাঊযুবিল্লাহ! (লিসানুল মুহাদ্দিছীন ৩/৩৬৭)
হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিসহ আরো অনেকেই বর্ণনা করেছেন-
إن أول من رَمَزَهُمَا بصلعم قطعت يده
অর্থ: “যে ব্যক্তি সম্মানিত ছলাত ও সালাম উনাদের সংকেত صلعم এর দ্বারা লেখার প্রচলন করেছে। তার হাত কেটে দেয়া হয়েছিলো। ” নাঊযুবিল্লাহ! (তাদরীবুর রাবী ২/৭৭)
উপরোক্ত দলীলবিত্তিক আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো- সংক্ষেপে বা কোনো সংকেত ব্যবহার করে দুরূদ শরীফ লেখা জায়িয নেই। এটা হচ্ছে অলস, জাহিল বা মূর্খ, নেকী থেকে মাহরূম ব্যক্তিদের কাজ। পূর্ববর্তীতে কেউ এভাবে সংক্ষেপে বা সংকেতের মাধ্যমে দুরূদ শরীফ লিখতেন না। এভাবে দুরূদ শরীফ লেখা চরম আদবের খিলাফ। শুধু ছলাত বা শুধু সালাম লেখাও জায়িয নেই। সম্পূর্ণ দুরূদ শরীফ লিখতে হবে। এটা সবার জন্য ফরয।
-হাফিয মুহম্মদ ইমামুল হুদা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩১)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৬)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে ব্যবহৃত একখানা শব্দ মুবারক পবিত্র “নূরুন নাজাত” মুবারক উনার ব্যাপকতা ও বিশালতা
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে মানহানীকারীদের যুগে যুগে ভয়াবহ পরিণতি (৩০)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৫)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত সম্বোধন মুবারক করার বিষয়ে কতিপয় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লফ্য বা পরিভাষা মুবারক
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি তিনজন উনাদের মুহব্বত ফরয করে দিয়েছেন-
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মেহমানদারী করার মাধ্যমে উদযাপনে শাফায়াত মুবারক লাভ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩০)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৪)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইত্তিবা বা অনুসরণ করার ক্ষেত্রে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের কোন মেছাল নেই
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (২৯)
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












