সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা সারা কায়িনাত
, ২৫ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ৩০ সাবি’, ১৩৯২ শামসী সন , ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ১২ পৌষ , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ
সাইয়্যিদাতুনা হযরত নুসাইবাহ্ বিনতে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা উনার বেনযীর দৃষ্টান্ত মুবারক:
(প্রথম অংশ)
হযরত নুসাইবাহ্ বিনতে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট আনছার মহিলা ছাহাবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা। উনার সম্মানিত কুনিয়াত মুবারক হচ্ছেন ‘হযরত উম্মু উমারাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা’। তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার ‘বনূ নাজ্জার গোত্রে’ বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন। তিনি আকাবার দ্বিতীয় বাইয়াতের সময় সম্মানিত ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি উহুদ, হুদায়বিয়াহ্, খাইবার, উমারাতুল কাযা, হুনাইন ও ইয়ামামা ইত্যাদি সম্মানিত জিহাদ মুবারক-এ সরাসরি অংশ গ্রহণ করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
৩য় হিজরী শরীফ উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ৭ই শাওওয়াল শরীফ উহুদের সম্মানিত জিহাদ মুবারক সংঘটিত হন। হযরত নুসাইবাহ্ বিনতে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা তিনি উনার সম্মানিত আহাল উনাকে এবং দুই আওলাদ উনাদেরকে নিয়ে এই সম্মানিত জিহাদ মুবারক-এ অংশ গ্রহণ করেন। হযরত নুসাইবাহ্ বিনতে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা তিনি নিজে বলেন, আমি উহুদের সম্মানিত জিহাদ মুবারক উনার দিন মশক ভর্তি করে পানি নিয়ে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছিলাম। সম্মানিত জিহাদ মুবারক উনার এক পর্যায়ে যখন মুশরিকগুলো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর অতর্কিত আক্রমণ করলো, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে মাত্র অল্প কয়েকজন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা ছিলেন। উনারা চারদিক থেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ঘেরাও করে নিলেন। তখন আমিও উনাদের মধ্যে শামিল হলাম এবং জীবনের পরওয়া না করে অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে সম্মানিত জিহাদ মুবারক করতে থাকলাম। কাট্টা কাফির ইবনে কামিআ ইতিমধ্যেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে চিৎকার করে এগিয়ে আসছিলো এবং বলছিলো, ‘উনাকে দেখিয়ে দাও! উনাকে যদি আজ শহীদ করা না যায়, তাহলে আমার ধ্বংস অনীবার্য। ’ তার এই চিৎকার শুনে আমি দ্রুত তার দিকে অগ্রসর হলাম। আমি তার কাছাকাছি না যেতেই সে আমাকে দেখে দূর থেকে আমার কাঁধে আঘাত করল। তার আঘাতে কাঁধে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হলো। প্রচ- ব্যথাও করছিল। কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি;
وَلَقَدْ ضَرَبْتُهُ عَلَى ذَلِكَ ضَرَبَاتٍ وَلَكِنَّ عَدُوَّ اللَّهِ كَانَ عَلَيْهِ دِرْعَانِ
‘বরং আমি তাকে পাল্টা আক্রমণ করলাম। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার দুশমন সেদিন বর্ম পরিহিত ছিলো। ’
যার কারণে সে আমার হাত থেকে বেঁচে যায়।
হযরত নুসাইবাহ্ বিনতে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা উনার জখমের স্থান থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে দেখে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত নুসাইবাহ্ বিনতে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা উনার এক সন্তান উনাকে ডেকে ইরশাদ মুবারক করলেন ‘আপনার সম্মানিতা মাতা উনার জখম স্থানে পট্টি বেঁধে দিন। ’
হযরত নুসাইবাহ্ বিনতে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা তিনি বলেন, ‘নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অনেকটা একাকী হয়ে পড়লেন, তখন
انْحَزْتُ إلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُمْتُ أُبَاشِرُ الْقِتَالَ وَأَذُبُّ عَنْهُ بِالسَّيْفِ وَأَرْمِي عَنْ الْقَوْسِ
‘আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার জন্য দাঁড়িয়ে যেয়ে কঠিনভাবে সম্মানিত জিহাদ মুবারক করতে থাকলাম। তরবারী দিয়ে আঘাত করে এবং তীর নিক্ষেপ করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে কাফিরদেরকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছিলাম। ’ সুবহানাল্লাহ! (সীরাতে ইবনে হিশাম ৩/৪৫)
তিনি আরো বলেন, তখন আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সামনে ছিলাম। আমার হাতে কোনো ঢাল ছিলো না। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একজন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার হাত মুবারক-এ ঢাল দেখে ইরশাদ মুবারক করলেন,
أَلْقِ تُرْسَكَ إِلَى مَنْ يُقَاتِلُ فَأَلْقَاهُ فَأَخَذْتُهُ فَجَعَلْتُ أُتَرِّسُ بِهِ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
‘(হে ঢালধারী ব্যক্তি!) আপনার ঢালটি এমন একজনকে দিন যিনি (আপনার চেয়ে আরো উত্তমভাবে) সম্মানিত জিহাদ মুবারক-এ রত। তিনি উনার ঢাল মুবারকটি আমাকে দিলেন। আমি সেই ঢাল মুবারক হাতে নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মুখে যে সমস্ত কাফির মুশরিকরা এগিয়ে এসেছিলো তাদেরকে প্রতিহত করতে লাগলাম। ’ সুবহানাল্লাহ!
এক পর্যায়ে এক কাফির তরবারী দিয়ে আমাকে আঘাত করলো। আমি আঘাত ফিরিয়ে দিলাম। অতঃপর আমার তরবারী মুবারক দিয়ে তার ঘোড়ার উপর স্বজোরে আঘাত করলাম। ফলে তার ঘোড়াটি পড়ে গেলো এবং সে নিজেও যমীনে ছিটকে পড়লো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সবকিছুই দেখছিলেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি আমার ছেলে উনাকে ডাক দিয়ে ইরশাদ মুবারক করলেন, ‘হে হযরত ইবনে উম্মু উমারাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু! তাড়াতাড়ি আপনার সম্মানিতা মাতা উনার কাছে চলে আসুন। তারপর আমার ছেলে তিনি এবং আমি অর্থাৎ আমরা দু’জন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নির্দেশ মুবারক অনুযায়ী সম্মিলিতভাবে ঐ কাফিরকে আক্রমণ করলাম এবং তাকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দিলাম। সুবহানাল্লাহ!
-মুহাদ্দিছ মুহম্মদ আমীন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩১)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৬)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে ব্যবহৃত একখানা শব্দ মুবারক পবিত্র “নূরুন নাজাত” মুবারক উনার ব্যাপকতা ও বিশালতা
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে মানহানীকারীদের যুগে যুগে ভয়াবহ পরিণতি (৩০)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৫)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত সম্বোধন মুবারক করার বিষয়ে কতিপয় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লফ্য বা পরিভাষা মুবারক
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি তিনজন উনাদের মুহব্বত ফরয করে দিয়েছেন-
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মেহমানদারী করার মাধ্যমে উদযাপনে শাফায়াত মুবারক লাভ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩০)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৪)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইত্তিবা বা অনুসরণ করার ক্ষেত্রে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের কোন মেছাল নেই
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (২৯)
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












