সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩২)
, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ
সাইয়্যিদাতুনা হযরত নুসাইবাহ্ বিনতে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা উনার বেনযীর দৃষ্টান্ত মুবারক:
হযরত নুসাইবাহ্ বিনতে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা তিনি বলেন, সম্মানিত জিহাদ মুবারক উনার একপর্যায়ে-
أَقْبَلَ الرَّجُلُ الَّذِي ضَرَبَ ابْنِي فَقَالَ رَسُولُ الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَذَا ضَارِبُ ابْنِكِ قَالَتْ فَأَعْتَرِضُ لَهُ فَأَضْرِبُ ساقه فبرك قالت فرأيت رسول الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَبَسَّمُ حَتَّى رَأَيْتُ نَوَاجِذَهُ
অর্থ: “আমার সন্তান উনাকে যেই কাট্টা কাফির আঘাত করেছে সে অগ্রসর হয়ে সামনে আসছিলো। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘এই কাট্টা কাফিরটা আপনার সন্তান উনাকে আঘাত করেছে।’ হযরত নুসাইবাহ্ বিনতে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা তিনি বলেন, তখন আমি তাকে প্রতিরোধ করে তার পায়ের নলায় আঘাত করি। ফলে সে হাঁটু গেড়ে বসে। (তারপর অপর এক আঘাতে তাকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দিলাম। সুবহানাল্লাহ!) হযরত নুসাইবাহ্ বিনতে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা তিনি বলেন, অতঃপর আমি দেখলাম নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুত তাক্বরীর মুবারক (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাবাস্সুমী শান মুবারক) প্রকাশ করেন অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মুচকি হাসি মুবারক দেন; এমনকি উনার মাড়ির মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল্লাহ মুবারক (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দাঁত মুবারক) পর্যন্ত আমি দেখেছি।” সুবহানাল্লাহ! (ত্ববাক্বাতুল কুবরা ৮/৩০৫)
তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে হযরত উম্মু উমারাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা! আপনি তো আপনার ছেলে উনার আঘাতের ক্বিছাছ খুব ভালো ভাবেই গ্রহণ করলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া যিনি আপনাকে শক্রর উপর কামিয়াবী দান করলেন এবং আপনার সামনেই তাকে হালাক করে দিয়ে আপনার চোখকে প্রশান্ত করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার বেমেছাল বীরত্ব মুবারক সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেছেন,
لَمَقَامُ حضرت نُسَيْبَةَ بِنْتِ كَعْبٍ رضى الله تعالى عنها اَلْيَوْمَ خَيْرٌ مِنْ مَقَامِ فُلانٍ وَفُلانٍ
অর্থ: “অবশ্যই আজকে (উহুদের সম্মানিত জিহাদ মুবারক উনার দিন) হযরত নুসাইবাহ্ বিনতে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা উনার অবস্থান মুবারক অমুক, অমুক উনাদের অবস্থান মুবারক থেকেও উত্তম ছিলো।” সুবহানাল্লাহ! (ত্ববাক্বাতুল কুবরা ৮/৩০৪)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত নুসাইবাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা উনার এবং উনার পরিবার-পরিজন উনাদের প্রতি সন্তুষ্টি মুবারক প্রকাশ করে উনাদের জন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দো‘আ করেন,
اللَّهُمُ اجْعَلْهُمْ رُفَقَائِي فِي الْجَنَّةِ
অর্থ: “আয় বারে এলাহী, মহান আল্লাহ পাক! আপনি উনাদেরকে সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ আমার বন্ধু করে দিন, আমার খাছ খাদিম করে দিন।” সুবহানাল্লাহ! (ত্ববাক্বাতুল কুবরা ৮/৩০৫)
সম্মানিত জিহাদ মুবারক শেষে হযরত নুসাইবাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা উনাকে আহত ও অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া যায়। জ্ঞান ফেরার পরও উনার প্রথম বাক্য মুবারক ছিলেন- ‘নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কেমন আছেন?’
এই সম্মানিত জিহাদ মুবারক-এ উনার শরীর মুবারক-এ ১৩টি কঠিন আঘাত লাগে। এগুলোর মধ্যে একটি আঘাতের ক্ষত ভালো হতে সময় লাগে পূর্ণ ১ বছর। স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজে ইরশাদ মুবারক করেন,
مَا الْتَفَت يَوْمَ أُحُدٍ يَمِيناً وَلَا شِمَالاً إِلَّا وَرَأَيْتُ حضرت أُمَّ عُمَارَةَ رضى الله تعالى عنها تُقَاتِلُ دُونِي
অর্থ: “উহুদের সম্মানিত জিহাদ মুবারক উনার দিন আমি যতবারই ডানে বামে তাকিয়েছি, ততবারই উম্মু উমারাহ্ হযরত নুসাইবাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা উনাকে আমার পাশে সম্মানিত জিহাদ মুবারকরত অবস্থায় দেখেছি।” সুবহানাল্লাহ! (ইবনে সা’দ ৮/৩০)
হযরত নুসাইবাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা উনার আওলাদ হযরত হাবীব ইবনে যায়েদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে মিথ্যা নবী দাবিদার মুসাইলামাতুল কায্যাব অত্যন্ত মর্মান্তিকভাবে শহীদ করে। ইয়ামামার সম্মানিত জিহাদ মুবারক-এ হযরত উহুশী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বর্শা নিক্ষেপ করে মুসাইলামাতুল কায্যাবকে হত্যা করেন। হযরত নুসাইবাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা তিনিও এই সম্মানিত জিহাদ মুবারক-এ অংশগ্রহণ করেন এবং অত্যন্ত বেমেছাল বীরত্ব মুবারক প্রদর্শন করেন।
وجرحت يومئذ اثنتي عشرة جراحة وقطعت يدها
অর্থ: “আর সেই দিন তিনি ১২টি আঘাতে জর্জরিত হন এবং উনার একখানা হাত মুবারক কর্তিত হন। অর্থাৎ উনার একখানা হাত মুবারক হারান।” (আল ইছাবাহ্, উসদুল গ¦বাহ্)
তাহলে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে কতটুকু ফানা ও বাক্বা ছিলেন? তাহলে সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সবাইকে উনার মাঝে কতটুকু ফানা ও বাক্বা হতে হবে? তাহলে উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কত বেমেছাল? এক কথায় তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন; এছাড়া সব। সুবহানাল্লাহ!
মূলত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারাই হাক্বীক্বীভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত বুলন্দী শান মুবারক উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। যার কারণে উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে হাক্বীক্বীভাবে ফানা ও বাক্বা হয়ে উনার জন্য উনাদের মাল-সম্পদ সমস্ত কিছু তো বিসর্জন দিয়েছেনই; এমনকি শেষ পর্যন্ত উনাদের জানটুকুও কুরবান করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
তাই সমস্ত উম্মতের জন্য ফরযে আইন হচ্ছে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের অনুসরণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে হাক্বীক্বীভাবে ফানা ও বাক্বা হয়ে উনার জন্য তাদের মাল-সম্পদ তো অবশ্যই; এমনকি নিজেদের জানটুকুও কুরবান করে দেয়া। সুবহানাল্লাহ! তাহলেই তারা ইহকাল ও পরকালে হাক্বীক্বী কামিয়াবী লাভ করতে পারবে।
উল্লেখ্য যে, পরবর্তী উম্মত যদি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে হাক্বীক্বী ফানা ও বাক্বা হতে চায়, তাহলে অবশ্যই আগে স্বীয় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার মাঝে হাক্বীক্বী ফানা ও বাক্বা হতে হবে। উনার মাঝে হাক্বীক্বী ফানা-বাক্বা হতে পারলে আপসেআপ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে হাক্বীক্বী ফানা ও বাক্বা হতে পারবে। সুবহানাল্লাহ! অন্যথায় কস্মিনকালেও সম্ভব নয়।
-মুহাদ্দিছ মুহম্মদ আমীন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৭)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩১)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৬)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে ব্যবহৃত একখানা শব্দ মুবারক পবিত্র “নূরুন নাজাত” মুবারক উনার ব্যাপকতা ও বিশালতা
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে মানহানীকারীদের যুগে যুগে ভয়াবহ পরিণতি (৩০)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৫)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত সম্বোধন মুবারক করার বিষয়ে কতিপয় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লফ্য বা পরিভাষা মুবারক
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি তিনজন উনাদের মুহব্বত ফরয করে দিয়েছেন-
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মেহমানদারী করার মাধ্যমে উদযাপনে শাফায়াত মুবারক লাভ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩০)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৪)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইত্তিবা বা অনুসরণ করার ক্ষেত্রে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের কোন মেছাল নেই
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












