সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (১৩)
, ২১ জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১৫ সাদিস, ১৩৯৩ শামসী সন , ১৩ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ২৮ কার্তিক, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দীদার মুবারক-এ তাশরীফ মুবারক নেয়ার পর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের অবস্থা মুবারক:
দুইজন সন্তান কুরবান হওয়ার পরেও যথাযথভাবে সম্মানিত মেহমানদারী মুবারক উনার ইন্তিযাম মুবারক:
বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি একবার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উনার বাসায় দাওয়াত মুবারক করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দয়া করে দাওয়াত মুবারক ক্ববূল করেন। তাই তিনি সম্মানিত মেহমানদারী মুবারক উনার ব্যবস্থা করার জন্য একটি খাসী জবাই করেন। খাসী জবাই করে মোটামোটি প্রস্তুত করে তিনি উনার সম্মানিতা আহলিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা উনাকে রান্না করার জন্য বলেন। তারপর তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উনার বাসায় নিয়ে আসার জন্য যান। মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত কুদরত মুবারক! এর মধ্যে একটি ঘটনা ঘটে যায়। হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার দুইজন ছেলে সন্তান ছিলেন। উনারা দুইজনই ছিলেন অল্প বয়স্ক। উনারা দুইজনই খাসী জবাই করা দেখেছিলেন। উনারা একজন আরেকজনকে বললেন যে, ‘কিভাবে খাসী জবাই করা হয়েছে দেখি। এটা বলে ছোট ভাই কাত হয়ে শুইলেন আর বড় ভাই ছোট ভাই উনার গলায় ছুরি চালিয়ে দিলেন। ফলে ছোট ভাই শহীদ হয়ে গেলেন।’ এটা দেখে বড় ভাই (মুখতালিফ বর্ণনা) ছাদ থেকে পড়ে বা আগুনে পড়ে তিনিও শহীদ হলেন।
হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার সম্মানিতা আহলিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা তিনি তখন রান্না-বান্নার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তারপর তিনি যখন উনার দুই সন্তান উনাদেরকে খোঁজ করলেন, হঠাৎ দেখলেন উনার দুইজন সন্তান উনারা শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন। তখন তিনি তাড়াতাড়ি ঐ দুই সন্তান উনাদেরকে বাড়ির এক কক্ষে শোয়ায়ে কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখলেন- যাতে কেউ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এই সংবাদ পোঁছাতে না পারে এবং সম্মানিত মেহমানদারী মুবারক উনার মধ্যে যেন সামান্য থেকে সামান্যতমও ত্রুটি না হয়। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি মুবারক লাভের জন্য হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার সম্মানিতা আহলিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা তিনি এই কঠিন পরিস্থিতিতে একজন মা হওয়া সত্ত্বেও স্বাভাবিক অবস্থায় রইলেন এবং সমস্ত দুঃখ কষ্ট হাসি মুখে গ্রহণ করে নিলেন। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত কুদরত মুবারক! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি যথাসময়ে হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার বাসায় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাশরীফ মুবারক আনলেন। উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র খিদমত মুবারক-এ খাবার মুবারক পেশ করা হলো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খাবার মুবারক গ্রহণ করবেন। এমন সময় ইরশাদ মুবারক করলেন, ‘হে হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু! আপনার না দুইজন সন্তান রয়েছেন? উনারা কোথায়? উনাদেরকে নিয়ে আসুন। উনাদেরকে নিয়ে এক সাথে খাবার মুবারক গ্রহণ করবো।’ সুবহানাল্লাহ!
এই কথা মুবারক শুনে হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি উনার দুই সন্তান উনাদেরকে ডেকে আনার জন্য গেলেন। তখন উনার সম্মানিতা আহলিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা তিনি অত্যন্ত হিকমতের সাথে উনাকে বললেন, ‘একটি বিষয় আপনাকে বলার ছিলো। সেটা হচ্ছে- কেউ যদি কোনো কিছু আমানত রাখে এবং তা ফিরিয়ে নেয় তাতে কোনো সমস্যা আছে কী?’ হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বললেন, ‘না; তাতে কোনো সমস্যা নেই।’ তারপর তিনি বললেন, ‘মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে দুইজন সন্তান উনাদেরকে আমানত হিসেবে দিয়েছিলেন এবং তিনি উনাদেরকে নিয়ে গেছেন অর্থাৎ উনারা শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন।’ তারপর তিনি ঘটনা খুলে বলেন। সব শুনে হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনিও স্বাভাবিক রইলেন এবং সবকিছু হাসি মুখে গ্রহণ করে নিলেন। কারণ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন, যথাযথভাবে উনার সম্মানিত মেহমানদারী মুবারক করতে হবে। এখানে সামান্য থেকে সামান্যতম কোনো ত্রুটি করা যাবে না। দুই সন্তান চলে গেছেন, তাতে কোন সমস্যা নেই। সুবহানাল্লাহ!
কিন্তু এখানে একটি বিষয় রয়ে গেছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, ‘উনি হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার দুইজন ছেলে উনাদেরকে নিয়ে একসাথে খাবার মুবারক গ্রহণ করবেন।’ তাই হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি উনার সম্মানিতা আহলিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা উনাকে বললেন, ‘দেখি তো উনারা কোথায়?’ এ কথা বলে- যেই কাপড় দিয়ে উনার দুইজন সন্তান উনাদের জিসিম মুবারক ঢেকে রাখা হয়েছিল, তিনি সেই কাপড়খানা তুললেন। তখন মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত কুদরত মুবারক এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ই’জায শরীফ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মু’জিযা শরীফ) যাহির হয়ে গেলেন। উনি দেখলেন, উনার দুইজন সন্তানই জীবিত হয়ে গেছেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর তিনি উনাদেরকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট নিয়ে আসলেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদেরকে নিয়ে একসাথে খাওয়া-দাওয়া মুবারক করলেন। সুবহানাল্লাহ! খাওয়া-দাওয়া মুবারক শেষ হওয়ার পর যখন হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘বিষয়টি আমার জানা রয়েছে। আপনারা আমার সন্তুষ্টি মুবারক লাভের জন্য এই কঠিন পরিস্থিতিতেও স্বাভাবিক রয়েছেন, সমস্ত দুঃখ-কষ্ট হাসি মুখে গ্রহণ করে নিয়েছেন এবং যথাযথভাবে মেহেমানদারী মুবারক উনার ইন্তিযাম করেছেন। এখানে সামান্য থেকে সামান্যতম কোনো ত্রুটি করেননি। যার কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনি অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং আমিও অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছি। আর এজন্যই আমি বলেছি, আপনার দুইজন সন্তান উনাদেরকে নিয়ে আসার জন্য। আর আমি যখন বলেছি উনাদেরকে নিয়ে আসার জন্য, তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে পাঠিয়ে দিয়ে আপনার দুইজন সন্তান উনাদেরকে জীবিত করে দিয়েছেন।’ সুবহানাল্লাহ!
-মুহাদ্দিছ মুহম্মদ আমীন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে মানহানীকারীদের যুগে যুগে ভয়াবহ পরিণতি (৩০)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৫)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত সম্বোধন মুবারক করার বিষয়ে কতিপয় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লফ্য বা পরিভাষা মুবারক
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি তিনজন উনাদের মুহব্বত ফরয করে দিয়েছেন-
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মেহমানদারী করার মাধ্যমে উদযাপনে শাফায়াত মুবারক লাভ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩০)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৪)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইত্তিবা বা অনুসরণ করার ক্ষেত্রে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের কোন মেছাল নেই
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (২৯)
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৩)
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত সম্বোধন মুবারক করার বিষয়ে কতিপয় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লফ্য বা পরিভাষা মুবারক
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মাওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (২)
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












