জীবনী মুবারক
হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
বিলাদত শরীফ: হিজরীপূর্ব ৪৩ সন। (শামসীপূর্ব ৫৫ সন) বিছাল শরীফ: ৩২ হিজরী। বয়স মুবারক: ৭৫ বছর।
, ২৪ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৫ হাদী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ০৪ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রি:, ২১ চৈত্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
দানশীলতা:
হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অতিশয় ধনশীল ছাহাবী ছিলেন। উনার আয়ের উৎস ছিল মূলতঃ ব্যবসা বাণিজ্য। তবে তিনি বিরাট খামার ও ভূসম্পত্তিরও মালিক ছিলেন।
উনার দানশীলতা ও মহান আল্লাহ পাক উনার পথে ব্যয়ের প্রবণতা ছিল প্রবাদের মত। জাতীয় ও দ্বীনী কাজে তিনি অনেক বিরাট অঙ্কের অর্থ দান করে গিয়েছেন। তাবুকের জিহাদের সময় তিনি ৪ হাজার দিরহাম হাদিয়া করেছিলেন। দুই দুই বার তিনি ৪০ হাজার দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) ওয়াক্ফ করেছিলেন। জিহাদের জন্য ৫০০ ঘোড়া এবং ৫০০ উষ্ট্র দিয়েছিলেন। একবার সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার নিকট একটি ভূখন্ড ৪০ হাজার দীনারে বিক্রয় করে সমুদয় অর্থ হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে হাদিয়া মুবারক করেন এবং বনু যুহরার দরিদ্র লোকদের মধ্যে বন্টন করে দিয়েছিলেন। পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফের খুশিতে অন্যান্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ন্যায় তিনিও ব্যাপক আর্থিক গোলামীর আনজাম দিয়েছেন। এছাড়াও তিনি ১০০ উট এবং ১০০ ঘোড়া হাদিয়া মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশকালে তিনি ৫০ হাজার ঘোড়া মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় ওয়াক্ফ করে গিয়েছিলেন এবং বদরের জিহাদে অংশগ্রহণকারী ছাহাবীগণ উনাদের প্রত্যেকের নামে ৪০০ করে দীনার ওছীয়ত মুবারক করে গিয়েছিলেন। ঐ সময়ে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনিসহ ১০০ জন বদরী ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম বিদ্যমান ছিলেন। হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের জন্য একটি বাগানও ওছীয়ত মুবারক করেছিলেন। এ বাগানটি ৪ লক্ষ দিরহামে বিক্রয় হয়েছিল। সাধারণ দান খয়রাত ছাড়াও উনার উক্তরূপ দানের বহু নজীর রয়েছে। (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা)
বিছাল শরীফ:
একবার হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অসুস্থ হয়ে বেহুঁশ হয়ে গেলেন, লোকেরা মনে করল, তিনি ওফাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। উনারা উনার নিকট থেকে সরে গেলেন এবং উনাকে কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখলেন। অতঃপর হঠাৎ তিনি তাকবীর ধ্বনি দিয়ে উঠে বসলেন এবং উনার হুঁশ ফিরে আসলো। গৃহবাসী লোকেরাও তাকবীর দিয়ে উঠলো। তৎপর তিনি বললেন, আমি কি বেহুঁশ হয়েছিলাম? লোকেরা বললো, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আপনারা সত্য বলেছেন। আমার বেহুঁশ অবস্থায় আমি দেখতে পেলাম, দুইজন কঠোর প্রকৃতির লোক আমাকে নিয়ে চললো। তারা বললো, বিশ্বস্ত পরাক্রমশীল উনার সমীপে চলুন, আমরা আপনার বিচার করবো। অতঃপর তারা আমাকে নিয়ে যেতে লাগলো। রাস্তায় একটি লোকের সঙ্গে সাক্ষাত হলো। লোকটি বললো, উনাকে তোমরা কোথায় নিয়ে যাচ্ছো? তারা বললো, উনাকে বিশ্বস্ত পরাক্রমশীল উনার নিকট বিচারের জন্য নিয়ে যাচ্ছি। লোকটি বললো, তোমরা ফিরে যাও। কারণ তিনি ঐ সমস্ত লোকদের অর্ন্তভুক্ত যাঁদের জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি সৌভাগ্য ও ক্ষমা লিখে রেখেছেন এবং উনার পরে মহান আল্লাহ পাক তিনি যতদিন ইচ্ছা করেন উনার সন্তানগণ জীবন যাপন করবেন। এ ঘটনার পরে হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মাত্র এক মাস জীবিত ছিলেন। (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা)
হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ৭৫ বৎসর বয়সে হিজরী ৩২ সনে (৬৫২ খৃ:) বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। উনার ওছীয়ত মুবারক অনুযায়ী সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি উনার জানাযার নামাযের ইমামতি করেন। জান্নাতুল বাকীতে উনাকে দাফন করা হয়। (ইবনে সা’দ, সিয়ারু আ’লামিন নুবালা)
ফযীলত ও মর্যাদা:
খলীফাতু রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে ৮ জন বিশিষ্ট ছাহাবীকে ফতওয়া ও বিচারের দায়িত্ব প্রদানের সাথে সাথে অন্য সকলকে ফতওয়া দান থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়। হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ছিলেন এ ৮ জনের একজন।
তিনি ছিলেন আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে উনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী। খলীফাতুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত আমলেও গঠিত মজলিসে শূরার তিনি ছিলেন অত্যন্ত প্রভাবশীল এবং সক্রিয় সদস্য। আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের সময় তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে বলিষ্ঠ সমর্থন প্রদান করেন ও সর্বদা উনাকে সৎ পরামর্শ প্রদান করতে থাকেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্পর্কে বলেন, হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হচ্ছেন মুসলিম নেতৃবৃন্দের একজন। (চলবে)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হাযির-নাযির শান মুবারক (১)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আল্লাহওয়ালী মহিলা উনাদের তিনটি বৈশিষ্ট্য-
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












