হযরত খুবাইব ইবনে আদী ইবনে আমরে রদ্বযি়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ঈমানদীপ্ত মহান আত্মত্যাগ
এডমিন, ১৭ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০৬ছালিছ, ১৩৯১ শামসী সন , ০৫ আগস্ট, ২০২৩ খ্রি:, ২১ শ্রাবণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) ইতিহাস
আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘আদল’ ও ‘কারাহ’ গোত্রের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হযরত আছিম ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নেতৃত্বে যে দলটিকে সেখানে প্রেরণ করেন, তার অন্যতম সদস্য ছিলেন হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। পথিমধ্যে স্থানীয় বনু লেহইয়ান গোত্রের মুশরিক সন্ত্রাসীদের সাথে জিহাদ করতে করতে প্রতিনিধিদলের সকলেই ঈমানদীপ্ত শাহাদাত মুবারক লাভ করেন। তবে হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে জীবিত বন্দি করা হয়। কয়েক মাস উনাকে বন্দি রাখার পর পবিত্র হারাম মাস অতিক্রম করলে মুশরিকরা মরিয়া হয়ে উঠে উনাকে শহীদ করার জন্য। নাউযুবিল্লাহ!
তারা পবিত্র হারাম শরীফ উনার অদূরে তানঈ’ম নামক স্থানে একটি গাছে শূলী কাঠ ঝোলায়। ব্যাপক ঢোল-শুহরত করে মক্কা শরীফ-উনার নারী-পুরুষ, শিশু, যুবক, বৃদ্ধ নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর মানুষের সমাবেশ ঘটানো হয়। শূলীতে চড়ানোর পূর্বে হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মুশরিকদের নিকট কিছুটা সময় চেয়ে নেন দু’রাকায়াত নফল নামায পড়ার জন্য। অতঃপর তিনি দুয়া মুবারক করলেন এই বলে- ‘ইয়া বারে ইলাহী! আমরা আপনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দাওয়াত মুবারক পৌঁছে দিয়েছি, দয়া করে আপনিও আমাদের সংবাদ আপনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পৌঁছে দিন।’
সত্যিই ওহীর মাধ্যমে পবিত্র মদীনাতুল মুনাওয়ারা শরীফ থেকে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবকিছু অবহিত হচ্ছিলেন এবং উপস্থিত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের মাঝে তা বর্ণনা করছিলেন। এমনকি শূলীতে উঠার ঠিক আগ মুহূর্তে হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু গগনবিদারী চিৎকারে বলে উঠলেন, আসসালাতু আসসালামু আলাইকা ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তৎক্ষণাৎ মদীনা শরীফ থেকে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জওয়াব মুবারক দিলেন- ওয়া আলাইকুমুস্ সালাম ইয়া খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।
শূলীতে চড়িয়ে একেবারে সর্বশেষ মুহূর্তে এক কাফির উনাকে প্রশ্ন করে- আচ্ছা! আপনি কি এটা পছন্দ করেন যে, আপনার এই স্থানে আপনার পরিবর্তে আপনারই নবী নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রাখা হোক? সাথে সাথে তিনি জবাব দিলেন- আমি এখান থেকে ফিরে গিয়ে আমার পরিবার পরিজনের সাথে নিশ্চিন্তে নিরাপদে অবস্থান করি এবং তার বিনিময়ে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জিসিম মুবারকের কোথাও একটা কাঁটারও আঁচর লাগুক; আল্লাহ পাক উনার কসম! আমি তা কস্মিনকালেও কোন কিছুর বিনিময়েও বরদাশত করবো না।’ অতঃপর প্রায় অর্ধশতাধিক কাফির তীরন্দাজ একই সাথে অতর্কিতে হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে লক্ষ্য করে তীর নিক্ষেপ করলো। এতে উনার শরীর মুবারক এতো বেশি ঝাঁঝরা হয়ে যায় যাতে গোশত মুবারক টুকরা টুকরা হয়ে খসে পড়ছিল। ঐ অবস্থায় উনাকে রেখে কাফির মুশরিকের দল রাত দিন পাহারা দিতে লাগলো। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কয়েকজন দক্ষ গোয়েন্দা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রেরণ করলেন হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জিছিম মুবারক কৌশলে নিয়ে আসার জন্য। উনারা সেখানে পৌঁছে দেখেন গভীর রাতে প্রায় ৪০ জন মুশরিক সশস্ত্র অবস্থায় নেশামত্ত হয়ে জিসিম মুবারকের আশপাশে পাহারা দিচ্ছে। খুবই কৌশলে উনারা জিসিম মুবারক শূলী থেকে নামাতে সক্ষম হন। ইতোমধ্যে পাহারাদার মুশরিক গং তা টের পেয়ে যায়। তারা একাধিক দিক থেকে তীর বল্লম নিক্ষেপ করতে করতে পিছু নিল। চরম প্রতিকূল অবস্থায় উনারা জিসিম মুবারক যমীনে রেখে দিলেন। মুশরিকরা জিসিম মুবারকের কাছে ঘেঁষার পূর্বেই যমীন নিজে ফেটে গিয়ে হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে আপন বুকে নিয়ে নিলো। (সুবহানাল্লাহ) এ কারণেই হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু ‘বালীউল আরদী’ লক্বব মুবারকে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে সম্বোধন করা হয়। সুবহানাল্লাহ!
-মুহম্মদ শাহ জালাল