বাংলার স্থাপত্য:
হাজীগঞ্জ দুর্গ
, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) স্থাপত্য নিদর্শন
প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ১৫৮০ খ্রিষ্টাব্দে মোঘল সুবেদার মীর জুমলার শাসনামলে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে হাজীগঞ্জ দুর্গ নির্মাণ করা হয়। এর অনেক প্রাচীন স্থাপনা ভেঙে গেছে। পাঁচ কোনাকারে নির্মিত এ দুর্গের বাহুগুলো এক মাপের নয়। তবে মোটামুটি পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা এ দুর্গটির আয়তন আনুমানিক ২৫০ বাই ২০০ ফুট। দুর্গের কোণগুলো অর্ধবৃত্তাকার। কোণগুলোতে কামান বসানোর জন্য বুরুজ নির্মাণ করা হয়েছিল এবং সেগুলো এখনো টিকে আছে। দেয়ালগুলো বেশ উঁচু এবং প্রায় ২০ ফুট পুরু। সমতল প্রাঙ্গণটি ভূমি থেকে পাঁচ ফুট নিচু।
সম্ভবত এখানে সৈন্যরা তাঁবু ফেলে অবস্থান করত। বেষ্টনী দেয়ালে কামান দাগার জন্য ছিদ্র আছে। আর আছে দেয়াল সংলগ্ন কয়েকটি উঁচু বেদি। দুর্গের এক কোণে ইটের তৈরি বড় আকারে একটি চতুষ্কোণ বেদি আছে। দুর্গের ভেতরে কোনো ইমারতের ধ্বংসাবশেষ নেই। এতে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছে, দুর্গটিতে কেউ নিয়মিত বসবাস করত না। করলেও সেখানে তাঁবুর ব্যবস্থা ছিল।
দুর্গটি কে নির্মাণ করেছেন তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। মীরজুমলা দুর্গটি নির্মাণ করেন বলে মুন্সি রহমান আলী তার বইতে উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে আহমদ হাসান দানি ‘মুসলিম আর্কিটেকচার ইন বেঙ্গল’ গ্রন্থে বলেছেন, ইসলাম খান ঢাকায় রাজধানী স্থাপন করার পর দুর্গটি নির্মাণ করেন। দুর্গে কোনো শিলালিপি না থাকায় বিষয়টি অমীমাংসিত। তবে ইতিহাস থেকে জানা গেছে, মোঘল সুবেদাররা দুর্গটি ব্যবহার করত বাংলার বিদ্রোহী জমিদারদের দমন করার উদ্দেশ্যে। তাছাড়া আরাকানি (মগ), পর্তুগিজ নৌদস্যুরা ঢাকা ও আশপাশ এলাকায় আক্রমণ করে লুটতরাজ ও শান্তি ভঙ্গ করত। তাদের আক্রমণ প্রতিহত করাও ছিল এ দুর্গের প্রধান উদ্দেশ্য।
দুর্গের দক্ষিণ কোণে একটি উঁচু অবজারভেটরি ছিল। সেটা বর্তমানে টাওয়ার বলে চেনাই মুশকিল। শত্রুপক্ষের গতিবিধি লক্ষ করার জন্য এটি নির্মাণ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। উত্তর দিক থেকে একটি আয়তাকার ফটকের মধ্য দিয়ে বেশ ক’টি সিঁড়ির ধাপের ওপর দিয়ে দুর্গের প্রবেশপথ। দুর্গের অভ্যন্তরে উন্মুক্ত প্রান্তরে নামার জন্য আট ধাপের সিঁড়ি রয়েছে। ঢাকা লালবাগ দুর্গ মসজিদের দরজার মতো হাজীগঞ্জ দুর্গের ফটক খিলান সংযোজিত অর্ধ গম্বুজের ভেতরে অবস্থিত। ফটকের গায়ে অন্ত প্রবিষ্ট প্যানেল এবং ওপরে মার্লন নকশাঙ্কিত প্যারাপেট দিয়ে সুশোভিত।
হাজীগঞ্জ দুর্গটি বহুকাল পরিত্যক্ত থাকায় জঙ্গলাকীর্ণ হয়ে পড়েছিল। একটি মহল দুর্গটি দখলের চেষ্টা করেছে। অপর একটি অংশ চানপুকুর দখল করে সেখানে প্রভাবশালীরা মিল-কারখানা গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশ প্রতœতত্ত্ব বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন এ দুর্গের চারপাশের দখলদারদের উচ্ছেদ করে দুর্গটি সংস্কারের মাধ্যমে প্রায় আগের অবস্থায় ফিরিয়ে এনেছে। দুর্গটি দেখতে অনেক পর্যটক আসেন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণে মুসলমানদের অবদান
২৩ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মালয়েশিয়ার ঐতিহাসিক মসজিদ “মসজিদ নেগারা”
১৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
যে মসজিদ থেকে গভীর রাতে ভেসে আসতো যিকিরের আওয়াজ
০৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৮)
০৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদ হযরত শাহ মখদুম রুপোশ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাজার শরীফ
০২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বয়নশিল্প নিদর্শনে মুসলমানগণ (৬)
২৬ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বয়নশিল্প নিদর্শনে মুসলমানগণ (৫)
১৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বয়নশিল্প নিদর্শনে মুসলমানগণ (৪)
১২ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বয়নশিল্প নিদর্শনে মুসলমানগণ (৩)
০৫ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বয়নশিল্প নিদর্শনে মুসলমানগণ (২)
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
স্থাপত্যশৈলীর অনন্য স্থাপনা মানিকগঞ্জের ‘ওয়াসি মহল’
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বয়নশিল্প নিদর্শনে মুসলমানগণ (১)
২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)












