আফগানিস্তানে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার আগমনের ইতিহাস
, ২৮ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৯ আউওয়াল, ১৩৯১ শামসী সন , ১৮ জুন, ২০২৩ খ্রি:, ০৪ আষাঢ়, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) ইতিহাস
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময়েই আফগানের ভূখন্ডে দ্বীন ইসলাম উনার আগমন হয়। এরপর আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আযম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিলাফতকালে বোখারা-সমরকন্দ অঞ্চল অতিক্রম করে আফগান অঞ্চলে দ্বীন ইসলাম উনার প্রচার-প্রসার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।
ঈসায়ী ৬৩৭ সালে মুসলমানদের কাছে সাসানীয়রা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হওয়ার ১০০ বছরের মধ্যে আফগান অঞ্চল মুসলমানদের অধীনে চলে আসে। এবং আফগানিস্তানের বিভিন্ন উপজাতি ও গোষ্ঠী সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। ঈসায়ী ৬৪২ সালে ‘নাহাভান্দ’ যুদ্ধের মাধ্যমে মুসলমানরা খোরাসান জয় করলে আফগান অঞ্চল জয়ের পথ প্রশস্ত হয়।
আফগান ভূখন্ডে মুসলিম শাসন ব্যাপকভাবে শক্তিশালী হয় উমাইয়া শাসকদের আমলে। এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখেন হিশাম ইবনে আবদুল মালিক ও ওমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমাতুল্লাহি আলাইহি। উমাইয়া সেনাপতি আব্দুর রহমান ইবনে সামুরা জানবিলদের পরাজিত করে জাবুলিস্তান (দক্ষিণ আফগানিস্তান) জয় করেন। আব্বাসীয় শাসক আল মুতাসিমের সময় সমগ্র আফগানিস্তান মুসলিমদের অধীনে আসে এবং পুরো আফগানিস্তানের বাসিন্দাগণ মুসলমান হয়ে যান। আব্বাসীয়দের অধীনে সামানিদরা (৮১৯-৯৯৯ সাল) আফগানসহ মধ্য এশিয়ার কিছু অঞ্চল শাসন করত ঈসায়ী দশম সালে সামানিদদের পতন হলে আফগানিস্তানে গজনভি সালতানাতের গোড়াপত্তন হয়। গজনভিদের শাসনকালেই আফগানিস্তান প্রথমবারের মতো বৃহত্তর পরিসরের কোনো ইসলামী শাসন লাভ করে। ১২২০ সালে সমগ্র মধ্য এশিয়ার মতো চেঙ্গিস খান দ্বারা আক্রান্ত হয়। ১৩৮০ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তান বিক্ষিপ্ত অবস্থায় থাকে। এরপর তৈমুর লং আফগানিস্তানকে ঐক্যবদ্ধ করেন এবং তার পরিবার ১৬ শতাব্দী পর্যন্ত তা শাসন করেন।
১৫০৪ সালে উত্তর ভারতে প্রতিষ্ঠিত নতুন মোগল সালতানাতের অধীন হয় আফগানিস্তান। পুরো আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিতে তারা পরবর্তী দুই শ বছর ইরানের সাফাভিদ সাম্রাজ্যের সঙ্গে যুদ্ধ করে। ১৭৪৭ সালে সাফাভি শাসক নাদির শাহের মৃত্যুর পর আফগানিস্তানে পশতু শাসনের উত্থান ঘটে, যারা দুররানি নামে বেশি পরিচিত। নামে মাত্র হলেও ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত তাদের শাসন অব্যাহত ছিল। দুররানি সালতানাতের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আহমদ শাহ দুররানি রহমাতুল্লাহি আলাইহি। যিনি ইতিহাসে আহমদ শাহ আবদালি নামেও পরিচিত; তিনি আফগানিস্তানের পশতু জাতিগোষ্ঠীকে একত্র করেন। উনাকে আধুনিক আফগানিস্তানের প্রতিষ্ঠাতাও বলা হয়। আফগানিরা উনাকে আহমদ বাবা নামে অভিহিত করে থাকেন। আহমদ শাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি ১৭৬০ সালে উনার শাসন ভারতের দিল্লি থেকে আরব সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত করেন। ১৭৭২ সালে উনার ইন্তেকালের পর দুরদানি সালতানাত ভেঙে যায়। তবে ১৮২৬ সালে পশতু নেতা দোস্ত মুহম্মদ আফগানিস্তানে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন।
দোস্ত মুহম্মদের পর থেকে আফগানিস্তানে বিদেশি আগ্রাসি শক্তিগুলোর আনাগোনা শুরু হতে থাকে। ব্রিটেন রাশিয়া আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রন নিতে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত শুরু করে। অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে আফগানিস্তান। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে পরিণত হয় দেশটি। এ সময় কয়েকটি নামমাত্র মুসলিম শাসক দেশটির শাসক করলেও তারা সবাই পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের দ্বারা প্রভাবিত ছিলো। সাম্রাজ্যবাদীরা বর্তমানে আফগানিস্তান ত্যাগ এবং তালেবানরা আফগানিস্তানের শাসনভার তুলে নিয়েছে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কেমন ছিলো মোঘল সালতানাতের গোলন্দাজ এবং অশ্বারোহী বাহিনী
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পান্থনিবাস ও সরাইখানা নির্মাণে মুসলমানদের অনবদ্য অবদান
২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৯)
১৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুসলমানদের শিক্ষা-দীক্ষার বিরোধিতায় বিধর্মী-অমুসলিমরা
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাংলার হিন্দু ধনিক-বণিক, বেনিয়া শ্রেণী, ব্যাংকার প্রভৃতির সাথে এক গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মুসলিম
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইউরোপকে যেভাবে সমৃদ্ধ করেছেন আফ্রিকান মুসলমানরা
১২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
গুজরাটের সুলতান মুজাফফর শাহের পরহেজগারিতা এবং ভ্রাতৃত্ববোধ
০২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৭)
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কেমন ছিলেন ইসলামী ইতিহাসের প্রথম আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঐতিহাসিক মুসলিমবাগ ঈদগাহ-ই কি আজকের ঢাকেশ্বরী মন্দির?
২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
১২টি চন্দ্রমাসের নাম এবং নামকরণের সার্থকতা (২)
২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ঐতিহাসিক খেমকারান যুদ্ধ: যেভাবে বাংলাদেশের জাতীয়তাবোধের উদ্ভব
২৫ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)












