ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (২২)
, ০৩ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০১ আউওয়াল, ১৩৯৩ শামসী সন , ৩১ মে, ২০২৫ খ্রি:, ১৮ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) ইতিহাস

শয়তান যে মানুষকে নেক সুরতে ধোঁকা দেয়, এ বিষয়টি ভালভাবে অনুধাবন করেছিল শয়তানের অনুচর ইহুদী এবং খ্রিষ্টানরা। মুসলমানদের সোনালী যুগ এসেছিল শুধু ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণের ফলে। শয়তানের চর ইহুদী খ্রিষ্টানরা বুঝতে পেরেছিল মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য, সংঘাত সৃষ্টি করতে পারলেই ইসলামের জাগরণ এবং বিশ্বশক্তি হিসেবে মুসলমানদের উত্থান ঠেকানো যাবে। আর তা করতে হবে ইসলামের মধ্যে ইসলামের নামে নতুন মতবাদ প্রবেশ করিয়ে। শুরু হয় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা; যার মূলে থাকে খ্রিষ্টীয় ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ। জন্ম হয় ওহাবী মতবাদের। ওহাবী মতবাদ সৃষ্টির মূলে থাকে একজন ব্রিটিশ গুপ্তচর হেমপার। মিশর, ইরাক, ইরান, হেজাজ ও তুরস্কে তার গোয়েন্দা তৎপরতা চালায় মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য “ÒConfession of British Spy and British enmity against Islam” গ্রন্থ হচ্ছে হেমপারের স্বীকারোক্তি মূলক রচনা। যা মূল গ্রন্থ থেকে ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ প্রকাশ করা হবে। ইনশাআল্লাহ!
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
আমি ইস্তাম্বুলে অবস্থানকালীন আমার শিক্ষক আহমেদ আফেন্দীকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, প্রিয় শিক্ষক! ‘ইহুদী এবং খ্রিস্টানরা যে বাতিল’- এ ব্যাপারে কি আপনার কোন মতামত পেতে পারি?
উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ’ তারা বাতিল। তিনি আরও বলেছিলেন, “তাদের থেকে দূরে থাকা প্রয়োজন। ”
আমি যখন কারণ জানতে চাইলাম, তিনি উত্তর দিলেন, “এটা অপমানের প্রতিশোধ নেবার মানসেই করা হয়ে থাকে। তবে তারা আমাদেরকে অবিশ্বাসীর চোখে দেখে এবং আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অস্বীকার করে। যে কারণে আমরা প্রতিশোধ গ্রহণ করি। ”
আমি তাকে বললাম, “পরিচ্ছন্নতা কি ঈমানের অঙ্গ নয়? অথচ দেখুন, শান-ই-শরীফ (হযরত আলী আলাইহিস সালাম উনার মাযার শরীফ) এলাকার রাস্তা-ঘাট সব নোংরা এবং অপরিষ্কার। এমনকি মাদরাসা যাকে বিদ্যাপীঠ বলা হয় তাও পরিষ্কার বলে ধরা যায় না। ”
উত্তরে তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ’ একথা সত্যি। পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ, তবে কিছু করার নেই কেননা শিয়ারা পরিচ্ছন্নতা নিয়ে খুব একটা গা করে না। ”
যাই হোক, আমি নাজাফে থাকাকালীন শিয়া প-িতের কাছ থেকে আমি যে উত্তর পেয়েছিলাম মন্ত্রণালয়ের এই লোকের সঙ্গে তার বেশ মিল ছিলো। নাজাফের সেই প-িতের সাথে এই লোকের মিল দেখে আমি সত্যি অবাক হলাম। উপরন্তু সেই লোকটিও ফার্সীতে কথা বলছে।
সচিব বললেন, তুমি যদি বাকি চারজনের সেখানকার আসল লোকগুলির সাথে কথাবার্তা বলে থাকো, তাহলে এই নকল ব্যক্তিদের সাথে আলাপ করলেই বোঝা যাবে আসল নকলে কি অদ্ভূত মিল।
আমি বললাম, আমি জানি ‘শায়খুল ইসলাম’ কি চিন্তা করেন। কেননা ইস্তাম্বুলে থাকা অবস্থায় আমার শিক্ষক আহমেদ আফিন্দি আমাকে শায়খুল ইসলাম সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন।
সচিব তখন বললেন, তবে যাও শায়খুল ইসলামের সেই মডেলের সাথে আলাপ করতে থাকো।
আমি শায়খুল ইসলামের মডেলের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করলাম, “খলীফাকে অনুসরণ করা কি ফরয?”
উত্তরে সে বললো, ‘হ্যাঁ’ এটা ওয়াজিব। সে আরও বললো, এটা এ কারণে ওয়াজিব যেহেতু আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মানা ফরয। ”
যখন আমি তাকে বললাম, “এর স্বপক্ষে তিনি কি দলীল দিতে পারেন?”
উত্তরে তিনি বললেন, তুমি আল্লাহ পাক উনার এই আয়াত শোনোনি?- “মহান আল্লাহ পাক উনাকে, নবী উনাকে এবং তোমাদের মধ্যকার উলীল আমরকে মান্য করো। ”
আমি বললাম, “এই আয়াত শরীফ কি তাই বলে যে, ইয়াজিদকে আমাদের মানতে হবে? ইয়াজিদ তার সৈন্যদল দিয়ে মদীনা শরীফ লুণ্ঠন করেছিলো, যে আমাদের নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দৌহিত্র হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করেছে। মান্য করতে হবে ওয়ালিদকে, যে শরাব পান করতো?”
তার উত্তর ছিলো, “বৎস! ইয়াজিদ মহান আল্লাহ পাক উনার অনুমতিক্রমে খলীফা হয়েছিলো। সে হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করার হুকুম দেয়নি। সুতরাং শিয়াদের মিথ্যা প্রচারে ভুল করো না। ভাল করে কিতাব পড়বে। আসলে সে ভুল করেছিলো। এজন্যে সে তওবা করেছিলো (সে ছিলো অনুতপ্ত এবং এ জন্যে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ও অনুকম্পা চেয়েছে)। ”
[এ বর্ণনা সম্পূর্ণ ভুল। শুদ্ধ বর্ণনা হচ্ছে, “হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করার ক্ষেত্রে ইয়াজিদ অবশ্যই দায়ী। যার কারণে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আম ফতওয়া মতে, ইয়াজিদ চরম ফাসিক আর খাছ ফতওয়া মতে সে কাফির এবং লা’নতগ্রস্ত। ”]
“তবে মদীনা মুনাওওয়ারা লুণ্ঠনের আদেশ দেয়াটা ভুল ছিলো না। কারণ, মদীনাবাসীরা ছিলো অবাধ্য এবং তারা নিয়ম শৃঙ্খলার বাইরে চলে গিয়েছিলো। ”
(এটাও মিথ্যা বক্তব্য। সঠিক হলো, “মদীনাবাসীদের প্রতি জুলুম করার কারণে উনারা বিরোধিতা করেছিলেন। কাজেই, মদীনা শরীফের অধিবাসীদেরকে অবাধ্য তথা খারাপ বলে অভিহিত করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। )
আর ওয়ালিদ অবশ্যই পাপী ছিলো। খলীফাকে অনুসরণ করা ওয়াজিব তবে তার নির্দেশগুলো শরীয়ত মুতাবিক হতে হবে। আমি আমার শিক্ষক আহমেদ আফেন্দীকেও একই প্রশ্ন করেছিলাম কিছুটা ভিন্নতাসহ প্রায় এই উত্তর পেয়েছিলাম।
ভাষান্তর : আবুল বাশার।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পবিত্র মদীনা শরীফে ব্রিটিশদের লুটতরাজের ষড়যন্ত্র যিনি রুখে দিয়েছিলেন
১৪ জুলাই, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (২৫)
১২ জুলাই, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সুগন্ধি সাবান উদ্ভাবনে মুসলমানদের অবদান
১১ জুলাই, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (২৪)
০৫ জুলাই, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত বাদশাহ নাজ্জাশী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কিত কিছু ঐতিহাসিক তথ্য
২৮ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইতিহাস থেকে প্রমাণিত: মানুষের গোশত খাওয়ার মত ঘৃণ্য কাজও ইহুদী-খ্রিস্টানদের জাতিগত বৈশিষ্ট্য
২২ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সিলেট বিজয়ী সাইয়্যিদ হযরত নাসির উদ্দিন সিপাহসালার রহমতুল্লাহি আলাইহি
১৮ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (২৩)
১৪ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কুরবানীবিরোধী ও মুসলিম বিদ্বেষী জালিম শাসক গৌরগোবিন্দের করুণ পরিণতি
০৫ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
উসমানীয় সালতানাতে যেভাবে পবিত্র কুরবানী উনার ঈদ বিশেষভাবে উদযাপন করা হতো
০৪ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইসলামী বিশ্বকোষের আলোকে বালাকোট শহরের স্থাপত্য ও বালাকোট যুদ্ধের ইতিহাস (৪)
০৩ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
বাংলার মুসলিম কৃষকদের উপর হিন্দু জমি দখলদারদের জুলুমের ইতিহাস (পর্ব ১৪)
০২ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)