লাইট হাউজ বা বাতিঘর নির্মাণে মুসলমানদের অবদান
, ১৪ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০৬ হাদি ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ০৬ এপ্রিল, ২০২৩ খ্রি:, ২৪ চৈত্র, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) ইতিহাস
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, নক্ষত্র ব্যতীত আরো কিছু নিদর্শন আছে, যার দ্বারা তারা (মানুষেরা) পথের দিশা লাভ করে। (পবিত্র সূরা নাহল শরীফ) আর মুসলমানগণ পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত নিদর্শন মুবারক থেকেই বাতিঘর নির্মাণের মূল উপজীব্য খুজে পেয়েছিলেন।
সমুদ্রে জাহাজ চালনায় নকশা অঙ্গনের পর দ্বিতীয় জরুরী জিনিস হচ্ছে বাতিঘর। মুসলমানগণ সমুদ্রে জাহাজ চালনার সময় এসব বাতিঘর থেকে পথের নির্দেশ লাভ করতেন। সমুদ্রপথে নৌ-চলাচলের সুবিধার্থে বিশেষ বিশেষ স্থানে বাতিঘর স্থাপন করা হয়।
সমুদ্রের বিশেষ বিশেষ স্থানে বড় বড় খাম্বা গেড়ে তার উপর বাতিঘর নির্মিত হতো। এইসব বাতিঘরে কিছু লোক অবস্থান করতেন। উনারা রাতের বেলা বাতি জ্বালিয়ে রাখতেন এবং কোনো কারণে তা নিভে গেলে পুনরায় জ্বালিয়ে দিতেন। এসব বাতিঘর সাধারণত জাহাজ চলাচলের পক্ষে বিপজ্জনক স্থানে তৈরী হতো। এর দ্বারা এটাই বোঝানো হতো যে, জাহাজ চলাচলের জন্য এ স্থানটি বিপদসঙ্কুল। এখান থেকে জাহাজ দূরে রাখতে হবে কিংবা এটি হচ্ছে একটি সামুদ্রিক নৌবন্দর এখানে এসে জাহাজ থামবে।
বিশ্বে প্রথম বাতিঘর নির্মিত হয়েছিলো আলেকজান্দ্রিয়াতে। যা একমাত্র মুসলমানরাই অত্যন্ত যত্নের সাথে সংরক্ষণ করেছিলেন। এই বাতিঘরটি ছিলো ২৭৫ ফুট উচু। যা ছিলো আলেকজান্দ্রিয়ার নৌবন্দরের একবারেই সম্মুখে। মুসলমানরা আলেকজান্দ্রিয়া বিজয় করার পর এই বাতিঘরে একটি আতশদানি জ্বালিয়ে রাখা হতো। প্রথম দিকে এসব বাতিঘর এক বিশেষ ধরণের তেল দ্বারা জ্বালানো হতো এর দীর্ঘদিন পর যখন বিদ্যুৎ আবিষ্কার হলো তখন এগুলো বিদ্যুৎ দ্বারাই পরিচালিত হতে থাকে। পারস্য উপসাগরেও বড় বড় খাম্বা পুতে এরুপ বাতিঘর তৈরী করতেন মুসলমানরা।
বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সব নৌ উপকূলেই বাতিঘর রয়েছে তবে এখনো কোনো কোনো বাতিঘর তেল দ্বারা পরিচালিত হয়। বলা হয়ে থাকে, যে জাতির বাতিঘর যত উজ্জ্বল সে জাতি নৌ শক্তিতে ততই শক্তিশালী।
বর্হিবিশ্বের পাশাপাশি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তর মুসলিম রাষ্ট্র বাংলাদেশেরও বিভিন্ন স্থানে বাতিঘর রয়েছে। ১৮২২ সালে কর্ণফুলি মোহনার ৪০ মাইল দুরে কুতুবদিয়া দ্বীপে একটি বাতিঘর নির্মাণ করা হয়। পাথরের ভিত্তির উপর নির্মিত এই বাতিঘরের উচ্চতা ১২১ ফুট। ১৮৪৬ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এর নির্মাণ ব্যয় ছিল ৪৪২৮ টাকা। পাকিস্তান আমলে লৌহ নির্মিত টাওয়ারের উপর আধুনিক বাতিঘর নির্মাণ করে প্রাচীন বাতিঘরটি বাতিল করা হয়। প্রবাল দ্বীপ নারিকেল জাজিরা বা সেন্টমার্টিন দ্বীপেও বাতিঘর রয়েছে। এই বাতিঘরে প্রতি ১৫ সেকেন্ডে বিচ্ছুরিত আলো ১৭ মাইল পর্যন্ত দেখা যায়। কক্সবাজারে থাকা বাতিঘরে প্রতি ১৫ সেকেন্ডে বিচ্ছুরিত আলো ২১.৫ মাইল পর্যন্ত দেখা যায়। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা বাতিঘরে প্রতি ১৫ সেকেন্ডে বিচ্ছুরিত আলো ১৫ মাইল পর্যন্ত দেখা যায়।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪০)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কেমন ছিলো মোঘল সালতানাতের গোলন্দাজ এবং অশ্বারোহী বাহিনী
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পান্থনিবাস ও সরাইখানা নির্মাণে মুসলমানদের অনবদ্য অবদান
২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৯)
১৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুসলমানদের শিক্ষা-দীক্ষার বিরোধিতায় বিধর্মী-অমুসলিমরা
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাংলার হিন্দু ধনিক-বণিক, বেনিয়া শ্রেণী, ব্যাংকার প্রভৃতির সাথে এক গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মুসলিম
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইউরোপকে যেভাবে সমৃদ্ধ করেছেন আফ্রিকান মুসলমানরা
১২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
গুজরাটের সুলতান মুজাফফর শাহের পরহেজগারিতা এবং ভ্রাতৃত্ববোধ
০২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৭)
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কেমন ছিলেন ইসলামী ইতিহাসের প্রথম আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঐতিহাসিক মুসলিমবাগ ঈদগাহ-ই কি আজকের ঢাকেশ্বরী মন্দির?
২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
১২টি চন্দ্রমাসের নাম এবং নামকরণের সার্থকতা (২)
২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












