আধুনিক যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণ শিল্পের গোড়াপত্তন করেছিলেন আরব মুসলমানগণই
, ৩০ শা’বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৩ ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ২৩ মার্চ, ২০২৩ খ্রি:, ০৯ চৈত্র, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) ইতিহাস
বর্তমান বিশ্বে যে যুদ্ধ জাহাজ শিল্প গড়ে উঠেছে তার মূল রচয়িতা ছিলেন আরব মুসলমানগণ। কিন্তু বিধর্মী ঐতিহাসিক এবং তথ্য-সন্ত্রাসের কারণে মুসলমানদের এসব সমৃদ্ধ ইতিহাস ধামাচাপা পড়ে আছে।
হযরত খোলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত খিলাফতকাল থেকেই আধুনিক সমরবিদ্যায় চরম সাফল্যের স্বাক্ষর রাখেন মুসলমানগণ। এর মধ্যে অন্যতম হলো নৌযুক্ত। নৌযুদ্ধের সূচনা হয়েছিলো আমিরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যূন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিলাফতকালে। উনারই সম্মানিত পৃষ্ঠপোষকতায় সাইয়্যিদুনা হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অত্যাধুনিক নৌবাহিনী গঠন করেন। যা দ্বীন ইসলাম উনার প্রথম নৌবাহিনী হিসেবে ইতিহাসে পরিচিত। নৌবাহিনী গঠনের পর থেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধজাহাজের প্রয়োজনীয়তা পড়ে। আর এই প্রয়োজনীয়তা থেকেই যুদ্ধ জাহাজ শিল্পের গোড়াপত্তন করেন আরব মুসলমান নৌকুশলীগণ।
আরবগণ জাহাজ নির্মাণ কারখানাকে বলতেন ‘দারুস সানা’। উনারা জাহাজ নির্মাণ শিল্পে পূর্ণ পারদর্শিতা অর্জন করেছিলেন। ইউরোপের অধিবাসীরা স্পেন, সিসিলী এবং আফ্রিকায় আরবদের নিকট থেকে এই বিদ্যা শিক্ষা করেছিলো। আরব মুসলমানদের পাশাপাশি জাহাজ নির্মাণ ও জাহাজ চালনা করতো রোমকরা। কিন্তু তাদের জাহাজ নির্মাণ ও নৌ চালনা ছিলো সম্পূর্ণ অনুন্নত ও অপরিকল্পিত ধাঁচের। রোমকরা কেবল ছোট ছোট রণতরীই নির্মাণ করতে পারতো। বড় বড় যুদ্ধ জাহাজ তাদের কারখানায় তৈরী হতো না। আরব মুসলমানরাই এই শিল্পে নতুনত্ব আনয়ন করেন। নতুন নতুন মডেল ও কৌশল আবিষ্কার করেন। আরবরাই সর্বপ্রথম নৌ দফতর প্রতিষ্ঠা করেন। এই দফতরের নাম ছিলো ‘দীওয়ানুল উসহুল’। এই দফতরের অধীনে অনেক বড় বড় নৌ-কারিগর ছিলেন। তারা রণতরীর নতুন নতুন মডেল ও নকশা তৈরী করতেন।
স্পেন, আফ্রিকা, মিসর ও সিরিয়া ছিলো তৎকালীন মুসলমানদের বড় বড় নৌকেন্দ্র। এই সবগুলো দেশই ভূমধ্যসাগরের উপকূলে অবস্থিত। ভূমধ্যসাগরের উপকূলভাগ সব সময়ই তার মনোরম আবহাওয়ার কারণে তাহযীব তামাদ্দুনের কেন্দ্রভূমি ছিলো। মুসলমানরা সর্বপ্রথম যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণ কারখানা স্থাপন করেন হিজরী প্রথম শতাব্দীতে মিসরের ফুসতাত নামক স্থানে। আহমদ ইবনে তুলুন নামের এক মুসলিম সামরিক কমান্ডার এই কারখানার বিশেষ উন্নতি করেন। পরবর্তীতে মুসলিম শাসনের বিভিন্ন ভূখন্ডে জাহাজ নির্মাণ কারখানা গড়ে ওঠে।
দারুস সানায়া বা জাহাজ নির্মাণ কারখানায় ছোট বড় বিভিন্ন রকমের যুদ্ধ জাহাজ তৈরী হতো। এগুলোর নামও ছিলো ভিন্ন ভিন্ন। আকার-আকৃতি ও গঠন প্রকৃতিও ছিলো নানারূপ। এগুলোর সমষ্টিকে ‘উসতুল’ বলা হতো। আমরা এখানে কয়েকটি যুদ্ধ জাহাজের নাম উল্লেখ করছি-
শূণা: এগুলো দেখতে বিশাল আকারের ছিলো। এগুলোতে শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য কেল্লা ও মিনার নির্মাণ করা হতো।
হাররাকা: এগুলোতে মিনজানিক স্থাপন করা হতো। মিনজানিক দ্বারা শত্রু পক্ষের উপর বিস্ফোরক দ্রব্য নিক্ষেপ করা হতো।
তার রাদা: এ ছিলো এক ধরণের দ্রুতগামী নৌবিশেষ।
উশারিয়াত: এতে করে নৌ সেনারা নীল নদে টহল দিতেন।
শালান দিয়াত: এসব দিয়ে বিভিন্ন খবরাখবর পৌছানো হতো।
মিসতাহাত: এই জাহাজ সাধারন যুদ্ধের জন্য ব্যবহার করা হতো।
নৌ যুদ্ধে মুসলমানদের এ সকল অবদান শুধু ধামাচাপাই দেয়া হয়নি বরং যে সকল মুসলিম ঐতিহাসিক মুসলমানদের এ সকল অবদান প্রকাশের চেষ্টা করেছেন তাদের উপর নেমে এসেছিলো নির্যাতন-নিপীড়ন। যা পরবর্তী কোনো পর্বে প্রকাশ করা হবে ইনশাআল্লাহ!
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
যুগে যুগে পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনের ইতিহাস (২)
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
যুগে যুগে পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনের ইতিহাস (১)
২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নেপোলিয়নের সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ এবং ১২ই শরীফ পালন নিয়ে ঐতিহাসিক তথ্য
২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
বাংলার ইতিহাসের স্বর্ণপাতায় মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ সংক্রান্ত ঐতিহাসিক একটি ঘটনা
১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বাংলাদেশে দ্বীন ইসলাম উনার আগমন ও মুসলিম শাসনের ইতিহাস (৪)
২৯ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বাংলাদেশে দ্বীন ইসলাম উনার আগমন ও মুসলিম শাসনের ইতিহাস (৩)
২৮ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
বাংলাদেশে দ্বীন ইসলাম উনার আগমন ও মুসলিম শাসনের ইতিহাস (২)
২৭ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
বাংলাদেশে দ্বীন ইসলাম উনার আগমনের ইতিহাস (১)
২৪ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৩৮)
২৪ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ উনার বরকতময় ইতিহাস
২১ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সতীদাহ প্রথা নির্মূলে মুসলিমরাই প্রথম ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন, রামমোহন নয়
২০ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)