নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে অবমাননাকারীদের যুগে যুগে ভয়াবহ পরিণতি (২৯)
, ০৫ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২৯ সাদিস, ১৩৯৩ শামসী সন , ২৭ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ১২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ
শাতিম রাজপাল:
১৯২৯ সালের ৩১ অক্টোবর গাজী ইলমুদ্দীনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। তিনি এখন গাজী থেকে শহীদের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন। মিয়ানওয়ালিতে উনাকে দাফন করা হয় যদিও মুসলমানগণ উনার লাশকে লাহোরে দাফন করতে চেয়েছিলেন। ব্রিটিশ বেনিয়ারা ভয় পেয়েছিলো যে, এটা একধরনের উত্তেজনা তৈরি করবে যা হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা তৈরি করতে পারে। আল্লামা মুহম্মদ ইকবাল এবং মিয়া আবদুল আযীয লাশ লাহোরে নিয়ে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন।
এরপর তার দেহ কবর থেকে ১৫ দিন পর তুলে আনা হয়। কিন্তু লাশে কোনো পচন ধরেনি; বরং চাঁদের আলোর ন্যায় জ্বলজ্বল করছিলো। দুই দিন পর লাশ লাহোরে পৌঁছে। সমস্ত শহর এবং আশেপাশের অনেক অঞ্চল থেকে মুসলমানরা উনার জানাযায় আসেন। উনার বাবা আল্লামা ইক্ববালকে জানাযার নামাযের ইমামতী করার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু আল্লামা ইকবাল সেটা করতে চাননি। তিনি বলেন, ‘আমি একজন পাপী ব্যক্তি, সম্মানিত ইসলাম উনার এই বীরের জানাযার ইমাম হবার যোগ্যতা আমার নেই’।
লক্ষ লক্ষ মুসলমান এই জানাযায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। জানাযা পড়িয়েছেন সৈয়দ দীদার আলী শাহ। আল্লামা ইকবাল নিজে লাশ বহন করে কবরস্থানে নিয়ে যান। যখন আল্লামা ইক্ববাল এই লাশটিকে কবরে রাখতে যাচ্ছিলেন তখন তিনি বলেন, ‘এই অশিক্ষিত তরুণটি আমাদের মত শিক্ষিতদেরকে ছাড়িয়ে গেছেন। ’
উনি সত্যই বলেছেন। কারণ মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় জিহাদ করে শহীদ হলে তাদেরকে মৃত বলা যায় না। তাহলে ইলমুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিতো যিনি মহান আল্লাহ পাক উনারও মাশুক্ব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত শান মুবারক হিফাযতের জন্যই উনার মুহব্বতে শহীদ হয়েছেন, ফাসির কাষ্ঠে ঝুলেছেন। তাহলে উনার মর্যাদা কতটা মহান সেটা প্রকাশের ভাষা কায়িনাতবাসীর নেই। সুবহানাল্লাহ!
আব্দুল্লাহ ইবনে ক্বামিয়াহ, উতবা ইবনে আবী ওয়াক্কাছ:
পবিত্র উহূদ যুদ্ধে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কাফিররা অনেক তকলীফ বা কষ্ট দেয়। তারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শহীদ করার সর্বোচ্চ কোশেশ করে। নাঊযুবিল্লাহ! এমনকি তারা উনাকে শহীদ করার গুজবও রটিয়েছিলো। নাঊযুবিল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সরাসরি কষ্ট দেয়ার সাথে তিনটা কাফির ছিলো মূল হোতা। তারা হলো- ১. উতবা ইবনে আবী ওয়াক্কাছ
২. আব্দুল্লাহ ইবনে শিহাব যুহরী
৩. আব্দুল্লাহ ইবনে কামিয়াহ
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-
হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। (পবিত্র উহুদ যুদ্ধের দিন) ‘উতবা ইবনে আবী ওয়াক্কাছ’ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে লক্ষ্য করে আঘাত করে, ফলে উনার ডান পাশের নিচের সম্মানিত রুবায়ী নূরুল্লাহ বা দাঁত মুবারক শহীদ হন এবং উনার নিচের সম্মানিত নূরুল হামরা বা ঠোঁট মুবারক জখম হন। নাউযুবিল্লাহ!
আর আব্দুল্লাহ ইবনে শিহাব যুহরী লা’নাতুল্লাহি আলাইহি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নূরুল মালাহাহ বা কপাল মুবারকে আঘাত করে জখম করে। নাঊযুবিল্লাহ!
আর মালউন ইবনে ক্বামীয়াহ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুল আনওয়ার বা গাল মুবারকে আঘাত করে জখম করে, ফলে শিরস্ত্রানের দুটি লোহার রিং ভেঙ্গে উনার নূরুল আনওয়ার মুবারক উনার ভিতরে ঢুকে যায়। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এমন একটি গর্তে তাশরীফ মুবারক নেন (পড়ে যান), যা কাট্টা কাফির আবূ আমের আর রাহেবী এর পরিকল্পনায় খোঁড়া হয়েছিলো। মুসলিমরা যেন উনাদের অজান্তেই সেখানে পড়ে যান। নাঊযুবিল্লাহ!
তখন ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি এবং হযরত ত্বালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অর্থাৎ উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নূরুল মাগফিরাত বা হাত মুবারক ধরে সেখান থেকে উঠিয়ে নেন, ফলে তিনি পুরোপুরি দাঁড়িয়ে যান।
এদিকে হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্মানিত পিতা হযরত মালিক ইবনে সিনান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত নূরুর রহমত মুবারক থেকে নূরুন নাজাত মুবারক (রক্ত) চুষে চুষে গিলে ফেললেন। এটা দেখে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন-
مَنْ مَّسَّ دَمِيْ دَمُه لَمْ تُصِبْهُ النَّارُ
‘যে ব্যক্তি আমার সম্মানিত নূরুন নাজাত মুবারক তার রক্তের সাথে মিশ্রিত করলো, তাকে কখনো আগুন স্পর্শ করবে না। ’ অর্থাৎ যে আমার নূরুন নাজাত মুবারক পান করেছে, জাহান্নামের আগুন তাকে স্পর্শ করবে না। সুবহানাল্লাহ! (তাহযীবু সীরাতি ইবনে হিশাম- ২৫০ পৃষ্ঠা) (অসমাপ্ত)
-হাফিয মুহম্মদ ইমামুল হুদা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩১)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৬)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে ব্যবহৃত একখানা শব্দ মুবারক পবিত্র “নূরুন নাজাত” মুবারক উনার ব্যাপকতা ও বিশালতা
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে মানহানীকারীদের যুগে যুগে ভয়াবহ পরিণতি (৩০)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৫)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত সম্বোধন মুবারক করার বিষয়ে কতিপয় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লফ্য বা পরিভাষা মুবারক
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি তিনজন উনাদের মুহব্বত ফরয করে দিয়েছেন-
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মেহমানদারী করার মাধ্যমে উদযাপনে শাফায়াত মুবারক লাভ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩০)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৪)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইত্তিবা বা অনুসরণ করার ক্ষেত্রে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের কোন মেছাল নেই
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (২৯)
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












