জীবনী মুবারক
বিশিষ্ট মহিলা ছাহাবী হযরত আসমা বিনতু আবী বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা (৩)
, ০৮ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৬ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ০৯ আশ্বিন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন, যদি আপনি অসত্য ও অন্যায়ের উপর শহীদ হন, তা হলে আমি ব্যথিত হব।
হযরত আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, আম্মা! আপনি বিশ্বাস রাখুন, আপনার এ সন্তান কখনও অন্যায় অশ্লীল কাজ করেননি, মহান আল্লাহ পাক উনার আইন লংঘন করেননি, কারো বিশ্বাস ভঙ্গ করেননি, কোন মুসলমান বা জিম্মীর উপর জুলুম করেননি এবং মহান আল্লাহ পাক উনার রেজামন্দী অপেক্ষা উৎকৃষ্টতর কোন কিছু এ দুনিয়ায় উনার কাছে নেই। এ কথা দ্বারা নিজকে পবিত্র ও নি®পাপ বলা আমার উদ্দেশ্য নয়। কারণ, আমার সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনিই বেশী ভাল জানেন। আপনার অন্তরে ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা সৃষ্টি হোক- কথাগুলি শুধু এ জন্যই বলছি।
জবাবে হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন, সেই মহান আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা, যিনি উনার ও আমার পছন্দনীয় কাজের উপর আপনাকে অটল রেখেছেন। আপনি আমার কাছে একটু এগিয়ে আসুন, শেষ বারের মত একটু আপনার শরীরের সুঘ্রান শুঁকি এবং আপনাকে স্পর্শ করি। কারণ, এটাই আমার ও আপনার ইহজীবনের শেষ সাক্ষাৎ। অতঃপর হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ছেলের মাথা, মুখ ও কাঁধে নিজের নাক ও মুখ ঠেকিয়ে ঘ্রান নিতে লাগলেন ও উনার শরীরে নিজের দু’টি হাতের পরশ বুলিয়ে দিলেন। হঠাৎ হযরত আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বর্মের প্রতি লক্ষ্য করে তিনি বললেন, আবদুল্লাহ! আপনি এ কি পরেছেন? তিনি বললেন, আম্মা, এতো আমার বর্ম। হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন, বৎস! যারা শাহাদাতের আকাঙ্খী এটা তাদের পোষাক নয়। আপনি এটা খুলে ফেলুন। এটা হবে আপনার কর্মতৎপরতা, গতি ও চলাফেরার পক্ষেও সহজতর। তার পরিবর্তে আপনি লম্বা সেলোয়ার পরিধান করুন। তাহলে আপনাকে মাটিতে ফেলে দেয়া হলেও আপনার সতর অপ্রকাশিত থাকবে। মায়ের কথামত হযরত আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ম খুলে সেলোয়ার পরলেন এবং এ কথা বলতে বলতে হেরেম শরীফের দিকে যুদ্ধে যোগদানের উদ্দেশ্যে চলে গেলেন। আম্মা, আমার জন্য দোয়া করবেন। সাথে সাথে উনার মা হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার দু’টি হাত আকাশের দিকে তুলে পুত্রের জন্য দোয়া করলেন। সেদিন সূর্য অস্ত যাওয়ার আগেই হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু শাহাদাত লাভ করেন। শাহাদাত লাভের পূর্বে উনার মুখ থেকে নিচের চরণ দু’টি উচ্চারিত হচ্ছিল-
أسماء إن قتلت لا تبكينى -- لم يبقى إلا حسبى و دينى و صارمٌ لانتْ به يمينى
(আমার মা আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা! আমি শহীদ হলে আমার জন্য কাঁদবেন না। আমার আভিজাত্য ও আমার দীনদারী ছাড়া আর অন্য কিছু অবশিষ্ট নেই। আর অবশিষ্ট আছে একখানি ধারালো তরবারি যা দিয়ে আঘাত করতে করতে আমার ডান হাত দুর্বল হয়ে গেছে।) (হায়াতুছ ছাহাবা)
সাহসিকতা ও পুত্রের জিসিম মুবারক দাফন:
হযরত আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে শহীদ করার পর হাজ্জাজ উনার জিসিম মুবারককে তিন দিন পর্যন্ত লটকিয়ে রেখেছিল। হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা অতিশয় ধৈর্য ও স্থৈর্যের সাথে এই দৃশ্য দেখলেন। লটকানো জিসিম মুবারকের কাছে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত শান্তভাবে বললেন, এ সওয়ারীর এখনও ঘোড়া থেকে নামার সময় হলো না? জনতার ভীড় কমানোর উদ্দেশ্যে উনাকে নেয়ার জন্য হাজ্জাজ লোক পাঠায়। তিনি যেতে অস্বীকৃতি জানান। সে আবারো লোক মারফত বলে পাঠায়, এবার না আসলে উনার চুলের গোছা ধরে টেনে আনা হবে। হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হাজ্জাজের ভয়ে ভীত হলেন না। তিনি গেলেন না।
এবার হাজ্জাজ নিজেই আসল। উনাদের দু’জনের মধ্যে নিুরূপ কথাবার্তা হলো, হাজ্জাজ বলল, বলুন তো, আমি আল্লাহ পাক উনার দুশমন ইবনে যুবায়েরের সাথে কেমন ব্যবহার করেছি? (নাঊযুবিল্লাহ) হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন, তুমি উনার দুনিয়া নষ্ট করতে চেয়েছ। আর উনার কারণে তোমার পরকাল নষ্ট হয়েছে। আল্লাহ পাক উনার কসম, আমি “যাতুন নিত্বাকাইন”। আমি একটি নিতাক কোমরবন্ধ) দিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাদের খাবার বেঁধেছি। আরেকটি নিতাক আমার কোমরেই আছে। মনে রেখ, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট থেকে আমি শুনেছি, ছাক্বীফ গোত্রে একজন মিথ্যাবাদী ভ- এবং একজন জালিম পয়দা হবে। মিথ্যাবাদীকে তো আগেই দেখেছি (আল-মুখতার), আর জালিম তুমিই। হাজ্জাজ এই হাদীছ শরীফ শুনে নীরব হয়ে যায়। (মুসলিম শরীফ)
অতঃপর জিসিম মুবারক উনার মাতার হস্তে সমর্পন করা হলে তিনি উনাকে মদীনা শরীফে দাফন করেন। (চলবে)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হাযির-নাযির শান মুবারক (১)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আল্লাহওয়ালী মহিলা উনাদের তিনটি বৈশিষ্ট্য-
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












