মুখোশধারী মুনাফিক্ব (৫)
, ১১ আগস্ট, ২০২৫ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ
قَالَ لَهُمْ أَبُو عَامِرٍ ابْنُوا مَسْجِدَكُمْ وَاسْتَمِدُّوا مَا اسْتَطَعْتُمْ مِنْ قُوَّةٍ وَمِنْ سِلَاحٍ
“অভিশপ্ত আবূ আমির আল ফাসিক লা’নাতুল্লাহি আলাইহি মুনাফিক্বদেরকে বলেছিল, ‘তোমরা তোমাদের (ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত বাস্তবায়নের জন্য) মসজিদ নির্মাণ করো, আর তোমাদের সাধ্য অনুযায়ী শক্তি ও অস্ত্র-শস্ত্র সংগ্রহ করো’।”
ফলে, মুনাফিক্বগুলো মসজিদে যিরার নির্মাণ করে এবং সেটাকে তাদের ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত, গুপ্তচরবৃত্তি ও অস্ত্র সংগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গ্রহণ করে।
فَكَانُوا يَجْتَمِعُونَ فِيهِ وَيَعِيبُونَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَيَسْتَهْزِئُونَ بِهِ
‘তারা সেখানে সমবেত হয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি কটূক্তি করতো এবং ঠাট্টা-বিদ্রƒপে লিপ্ত থাকতো।’
সাধারণ মুসলমানদেরকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য তারা এটাকে ‘মসজিদ’ নাম দেয় এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সেখানে গিয়ে ছলাত আদায়ের জন্য দাওয়াত দেয়। অজুহাত হিসাবে তারা বলে, এটি তারা নির্মাণ করছে ঐ সকল অসুস্থ, অক্ষম ও দুর্বলদের জন্য, যারা দূরের মসজিদে যেয়ে নামায আদায় করতে পারে না এবং যারা বৃষ্টির রাতে কষ্ট করে দূরের মসজিদে যেতে পারে না তাদের জন্য। তার পাশাপাশি এখানে অভাবগ্রস্তদের জন্য সাহায্য-সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারপর তারা বলে, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি সেখানে গমন করে একবার নামায পড়িয়ে দিলে তা মাক্ববূল ও বরকতময় হয়ে যাবে।’ যেমন- মুনাফিক্বদের ভাষায় কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
فقالوا يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّا قَدْ بَنَيْنَا مَسْجِدًا لِذِي الْعِلَّةِ وَالْحَاجَةِ وَاللَّيْلَةِ الْمَطِيرَةِ وَإِنَّا نُحِبُّ أَنْ تَأْتِيَنَا فَتُصَلِّيَ لَنَا فِيهِ
“তারা (মুনাফিক্বগুলো) বলে, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা একটি মসজিদ নির্মাণ করেছি অসুস্থ, অক্ষম, দুর্বল ও অভাবগ্রস্তদের জন্য এবং বৃষ্টির রাতে কষ্ট দূর করার উদ্দেশ্যে। আমরা পছন্দ করি যে, আপনি সেখানে এসে একবার ছলাত আদায় করুন (যাতে তা মাক্ববূল ও বরকতময় হয়)।”
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘এখন আমি তাবূক যাচ্ছি। ফেরার পথে ফায়ছালা হবে। অবশেষে তাবূক থেকে ফেরার সময় তিনি যখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার নিকটবর্তী ‘যু আওয়ান’ (ذُ أَوَان) নামক স্থানে অবতরণ করেন, তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি মুনাফিক্বদের গভীর ষড়যন্ত্র ফাঁস করে দিয়ে নিম্নোক্ত সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করেন-
وَالَّذِينَ اتَّخَذُوْا مَسْجِدًا ضِرَارًا وَكُفْرًا وَتَفْرِيْقًا بَيْنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَإِرْصَادًا لِمَنْ حَارَبَ اللهَ وَرَسُولَهُ مِنْ قَبْلُ وَلَيَحْلِفُنَّ إِنْ أَرَدْنَا إِلا الْحُسْنَى وَاللهُ يَشْهَدُ إِنَّهُمْ لَكَاذِبُونَ. لاَ تَقُمْ فِيْهِ أَبَدًا
‘আর যারা মসজিদ তৈরি করেছে ক্ষতি সাধনের জন্য, কুফরী করার জন্য ও মু’মিনদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির জন্য এবং মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের বিরুদ্ধে পূর্ব থেকেই যুদ্ধকারীদের ঘাঁটি করার জন্য, তারা অবশ্যই শপথ করে বলবে যে, আমরা সদুদ্দেশ্যেই এটা করেছি। অথচ মহন আল্লাহ পাক তিনি সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, তারা অবশ্যই মিথ্যাবাদী’। আপনি কখনোই উক্ত মসজিদে দ-ায়মান হবেন না।’ (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা তওবা শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৭-০৮)
তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত মালিক ইবনে দুখশুম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে এবং হযরত মা‘আন ইবনে ‘আদী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে অর্থাৎ উনাদের দুইজনকে, অন্য বর্ণনায় এসেছে, একদল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকে নির্দেশ মুবারক দেন মসজিদ নামক উক্ত ষড়যন্ত্রের ঘাঁটিকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করে, নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য। যেমন- কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
انْطَلِقُوا إِلَى هَذَا الْمَسْجِدِ الظَّالِمِ أَهْلُهُ فَاهْدِمُوهُ وَأَحْرِقُوهُ
“অপনারা সেই মসজিদের দিকে রওনা হন, যার অধিবাসীরা সীমালঙ্ঘনকারী ও যালিম। তারপর তা ধ্বংস করে দিন, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিন।”
فَانْطَلَقُوا مُسْرِعِينَ حَتَّى أَتَوْا بَنِي سَالِمِ بْنِ عَوْفٍ وَهُمْ رَهْطُ حَضْرَتْ مَالِكِ بْنِ الدُّخْشُمِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ فَقَالَ حَضْرَتْ مَالِكٌ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ انْظُرُوا حَتَّى أُخْرِجَ إِلَيْهِمْ بِنَارٍ مِنْ أَهْلِي فَدَخَلَ أَهْلَهُ فَأَخَذَ سَعَفًا مِنَ النَّخْلِ فَأَشْعَلَ فِيهِ نَارًا ثُمَّ خَرَجُوا يَشْتَدُّونَ حَتَّى أَتَوْا الْمَسْجِدَ وَفِيهِ أَهْلُهُ فَحَرَّقُوهُ وَهَدَمُوهُ وَتَفَرَّقَ أَهْلُهُ عَنْهُ
“অতঃপর উনারা দ্রুত রওনা হলেন এবং বনী সালিম ইবনে আওফ গোত্রের নিকট পৌঁছলেন- যাঁরা ছিলেন হযরত মালিক ইবনে দুখশুম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার স্বগোত্রীয়। তখন তিনি বললেন, ‘আপনারা একটু অপেক্ষা করুন, আমি ঘর থেকে আগুন নিয়ে আসছি।’ এরপর তিনি ঘরে প্রবেশ করে খেজুরগাছের কিছু শুকনো পাতাগুচ্ছ সংগ্রহ করে তাতে আগুন জ্বালান। অতঃপর উনারা খুবহ দ্রুত বেরিয়ে পড়েন এবং সেই মসজিদের কাছে এসে পৌঁছেন। তখনও সেখানে কিছু মুনাফিক্ব অবস্থান করছিলো। উনারা মসজিদটিকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিলেন এবং সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিলেন। আর তাতে অবস্থিত মুনাফিক্বগুলো ছত্রভঙ্গ হয়ে চারদিকে পালিয়ে গেলো।”
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদে কুবা থেকে অনতিদূরে উক্ত অভিশপ্ত স্থানটি আজও বিরান পড়ে আছে। এই সময় সম্মানিত ও পবিত্র সূরা তওবা শরীফ-এ মুনাফিক্বদের মুখোশ উন্মোচন করে অনেকগুলি সম্মনিত ও পবিত্র আয়াত নাযিল হন। ফলে, তারা সমাজে চিহ্নিত হয়ে যায় এবং একেবারে কোনঠাসা হয়ে পড়ে। (তথ্যসূত্র: আল মাওয়াহিব, শারহুয যারক্বানী, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ, আস সীরাতুল হালাবিয়্যাহ্, ইমতাউল আসমা, ইবনে হিশাম, আর রওদ্বুল উন্ফ, ত্ববারী, ইবনে কাছীর, দালাইলুন নুবুওওয়াহ্ লিল বাইহাক্বী ইত্যাদি)
কাজেই, মুনাফিক্বগুলো যতই গভীর ষড়যন্ত্র করুক না কেন, যতই নিজেদের পরিচয় গোপন রাখুক না কেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি কুদরতীভাবে তাদের মুখোশ উন্মোচন করে দেন। তার পাশাপাশি এটা প্রমাণিত হলো যে, মুনাফিক্বদের আস্তানা নিশ্চিহ্ন করে দেয়া, ধ্বংস করে দেয়া খাছ সুন্নত মুবারক। সুবহানাল্লাহ!
অতএব, এই ধরণের মুখোশধারী মুনাফিক্বদের থেকে এবং তাদের সর্বপ্রকার ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত থেকে সবাই সাবধান!
(পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকুন)
-মুহাদ্দিছ মুহম্মদ আবূ আহমাদ ছিদ্দীক্বাহ্।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩২)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৭)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩১)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৬)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে ব্যবহৃত একখানা শব্দ মুবারক পবিত্র “নূরুন নাজাত” মুবারক উনার ব্যাপকতা ও বিশালতা
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে মানহানীকারীদের যুগে যুগে ভয়াবহ পরিণতি (৩০)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৫)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত সম্বোধন মুবারক করার বিষয়ে কতিপয় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লফ্য বা পরিভাষা মুবারক
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি তিনজন উনাদের মুহব্বত ফরয করে দিয়েছেন-
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মেহমানদারী করার মাধ্যমে উদযাপনে শাফায়াত মুবারক লাভ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩০)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৪)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












