হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
, ০৯ ছফর শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ০৫ ছালিছ, ১৩৯৩ শামসী সন , ০৪ আগস্ট, ২০২৫ খ্রি:, ২১ শ্রাবণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ
খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাপবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেছেন-
فَاِنْ اٰمَنُوْا بِـمِثْلِ مَا اٰمَنْتُمْ بِهِ فَقَدِ اهْتَدَوْا.
অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যেরূপ সম্মানিত ঈমান মুবারক এনেছেন তদ্রƒপ যদি তোমরা সম্মানিত ঈমান মুবারক গ্রহণ করতে পারো তাহলে তোমরা হিদায়েত মুবারক লাভ করতে পারবে। (পবিত্র সূরা বাক্বারাহ: আয়াত শরীফ ১৩৭)
এ লিখনীতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের বেমেছাল মুহব্বত মুবারক প্রকাশের কতিপয় দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা হবে। ইনশাআল্লাহ!
(৮)
বিষাক্ত সাপের দংশন নীরবে সহ্য করলেন
হিজরত মুবারক উনার রাতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাপবিত্র হুজরা শরীফ থেকে বের হয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার বাড়িতে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন। উনাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি ছাওর পর্বতের দিকে রওয়ানা হন। যা মক্কা শরীফ থেকে তিন মাইল দূরে অবস্থিত।
ভঙ্গুর প্রস্তর ও কাঁকরে পরিপূর্ণ দুর্গম পথ। রাতে এ পথ অতিক্রম করা বড়ই দুঃসাধ্য কাজ। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনারা এই দুর্গম পথ অতিক্রম করে পবিত্র ছাওর পর্বতে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে নিয়ে পবিত্র গারে ছাওরে প্রবেশ করবেন। এমন সময় সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বললেন- ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! পাহাড়ী গুহা, সাপ-বিচ্ছু থাকতে পারে। আপনি একটু অপেক্ষা করুন। আমি ভেতরটা পরিষ্কার করে আসি।
সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি প্রথমে পবিত্র গারে ছাওরে প্রবেশ করে গুহাটি পরিষ্কার করলেন। গুহার চার পাশের প্রাচীরে ছোট ছোট ছিদ্র ছিলো। অবস্থান কালে ছিদ্র পথে সাপ-বিচ্ছু, অন্য কোন বিষাক্ত প্রাণী বের হয়ে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এ আশঙ্কায় সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি উনার গায়ের চাদর মুবারক ছিড়ে ছিদ্রগুলো বন্ধ করে দিলেন। কিন্তু পূর্ণ চাদরটি শেষ হয়ে যাওয়ায় একটি ছিদ্র বন্ধ করতে পারলেন না।
তারপর তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে গুহার ভেতর নিয়ে গেলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার উরু মুবারকের উপর মহাপবিত্র নূরুল হুদা মুবারক (মাথা মুবারক) রেখে মহাপবিত্র নূরুল মুত্বমাইন্নাহ শান মুবারক প্রকাশ করেন (ঘুমিয়ে পড়েন)। সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি গুহায় বসে চিন্তা করলেন, যে ছিদ্রটির মুখ খোলা আছে যদি এর মাঝে কোনো বিষাক্ত সাপ থাকে। আর তা বের হয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দংশন করে, তাহলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কষ্ট হবে। তাই তিনি উনার পা দ্বারা ছিদ্রটি বন্ধ করে বসে থাকলেন। ইত্যবসরে একটি বিষাক্ত সাপ গর্ত থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছিলো। কিন্তু গর্তের সবগুলো মুখ বন্ধ পেয়ে শেষ পর্যন্ত সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার পা মুবারকে সাপটি দংশন করে।
দংশনের যন্ত্রণা ধীরে ধীর তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছিলো। কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি উনার মহব্বত মুবারক এতো গভীর ছিলো যে, আওয়াজ করলে বা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ডাকলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাপবিত্র নূরুল মুত্বমাইন্নাহ মুবারক (ঘুম মুবারক) ভেঙ্গে যাবে। উনার কষ্ট হবে একথা চিন্তা করে তিনি আওয়াজও করলেন না, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ডাকলেনও না এবং গর্তের মুখ থেকে পাও সরালেন না। কিন্তু অসহ্য যন্ত্রণায় উনার চোখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত হলো। আর তা গড়িয়ে উনার অজান্তেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাপবিত্র নূরুর রহমত মুবারক (চেহারা মুবারক)-এ পড়লো। ফলে তিনি জাগ্রত হয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার চেহারার দিকে তাকালেন। এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি ঘটনা বললেন।
অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদেশ মুবারকে তিনি গর্তের মুখ থেকে পা সরাতেই একটা বিষাক্ত সাপ বের হয়ে গুহার এক পাশে ফণা তুলে উনার দিকে তাকালো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজ মহাপবিত্র নূরুল বারাকাত মুবারক (থুথু মুবারক) আঙ্গুলে নিয়ে উনার দংশিত স্থানে লাগিয়ে দিলে সঙ্গে সঙ্গে তা ভালো হয়ে গেলো এবং যন্ত্রণার উপশম হলো। মনে হচ্ছিলো যেন কিছুই হয়নি। সুবহানাল্লাহ! এরপর দেখা গেলো, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাপবিত্র নূরুল আমীন মুবারক (ইশারা মুবারক)-এ সাপটি চলে গেলো। সুবহানাল্লাহ! কী সীমাহীন মহব্বত মুবারক।
অর্থাৎ মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাঝে বর্ণিত রয়েছে-
لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتّٰى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ. وَفِيْ رِوَايَةٍ أُخْرٰى مِنْ مَالِهٖ وَنَفْسِهٖ.
অর্থ : তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদারই হতে পারবে না যতক্ষণ না সে তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি এবং সমস্ত মানুষের চেয়ে অপর বর্ণনায় রয়েছে তার মাল-সম্পদ এমনকি নিজের জীবনের চেয়েও আমাকে সবচেয়ে বেশি মহব্বত না করবে। (বুখারী শরীফ)
এই মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার পরিপূর্ণ মিছদাক্ব ছিলেন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা। সুবহানাল্লাহ!
যিনি খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ন্যায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সমস্ত কিছুর চেয়ে সবচেয়ে বেশি মহব্বত করার এবং উনাদের ন্যায় পরিপূর্ণ ঈমানদার হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন।
-মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন মুরাদী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩২)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৭)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩১)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৬)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে ব্যবহৃত একখানা শব্দ মুবারক পবিত্র “নূরুন নাজাত” মুবারক উনার ব্যাপকতা ও বিশালতা
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে মানহানীকারীদের যুগে যুগে ভয়াবহ পরিণতি (৩০)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৫)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত সম্বোধন মুবারক করার বিষয়ে কতিপয় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লফ্য বা পরিভাষা মুবারক
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি তিনজন উনাদের মুহব্বত ফরয করে দিয়েছেন-
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মেহমানদারী করার মাধ্যমে উদযাপনে শাফায়াত মুবারক লাভ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩০)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৪)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












