সুওয়াল-জাওয়াব
সুওয়াল: জনৈক মাওলানা ছাহিব বলেছে যে, নামাযের ক্বাযা আছে, কিন্তু কাফফারা নেই। এ বিষয়ে দলীলভিত্তিক জাওয়াব জানতে বাসনা রাখি।
প্রসঙ্গ: নামাযের মাসায়িল (২য় অংশ)
, ১৯ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৬ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ০৫ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ২০ আশ্বিন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) শিক্ষামূলক জিজ্ঞাসা
একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ হযরত ইমাম বায়হাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সূত্রে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ হিসেবে উদ্ধৃত করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার রোযা ক্বাযা করে যে ব্যক্তি ইন্তিকাল করবে তার পক্ষ থেকে প্রতিদিনের পরিবর্তে অর্ধ সা (দুই মুদ) গম খাদ্য হিসেবে প্রদান করবে।
উপরে উল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনার উপর ভিত্তি করে হানাফী মাযহাবে যে মাসয়ালা গ্রহণ করা হয়েছে তা হচ্ছে, একজনের ক্বাযাকৃত বা অনাদায়ী নামায আরেকজন আদায় করে দিলে তা আদায় হবে না। অনুরূপ একজনের ক্বাযাকৃত রোযা আরেকজন রাখলে তাও আদায় হবে না। এক্ষেত্রে ক্বাযাকৃত নামায ও রোযা উভয়ের পরিবর্তে ফিদইয়া বা কাফফারা অভাবগ্রস্তদেরকে প্রদান করতে হবে।
যেমন এ প্রসঙ্গে উছূল শাস্ত্রের প্রসিদ্ধ কিতাব নূরুল আনওয়ার কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-
ووجوب الفدية فى الصلوة للاحتياط
অর্থ: আর নামাযের ক্ষেত্রে ফিদইয়া ওয়াজিব হওয়ার বিষয়টি সতর্কতার ভিত্তিতে সাব্যস্ত করা হয়েছে।
আরো বর্ণিত রয়েছে-
يجب على الوارث ان يفدى بعوض كل صلوة ما يفدى لكل صوم على الاصح
অর্থ: বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী ওয়ারিছগণের উপর প্রত্যেক নামাযের পরিবর্তে একেকটি রোযার সমপরিমাণ ফিদইয়া আদায় করা ওয়াজিব হবে।
মোট কথা হলো, রোযার ফিদইয়ার ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ
অর্থ: যারা রোযা রাখতে অপারগ বা অক্ষম তারা রোযা রাখার পরিবর্তে ফিদইয়া স্বরূপ কোন মিসকীনকে খাদ্য দান করবে। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮৪)
অর্থাৎ উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার হুকুমটি এমন একটি কারণের সাথে সম্পর্কিত, যে কারণটি রোযার ক্ষেত্রে যেমন রয়েছে তেমনি নামাযের ক্ষেত্রেও রয়েছে, আর তা হচ্ছে অপারগতা। অপরপক্ষে রোযা যেরূপ উদ্দেশ্যপূর্ণ শারীরিক ইবাদত, তদ্রƒপ নামাযও উদ্দেশ্যপূর্ণ শারীরিক ইবাদত; বরং রোযা অপেক্ষা নামায অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কাজেই সম্মানিত শরীয়ত যেমন ফিদইয়াকে রোযার স্থলাভিষিক্ত নির্ধারণ করেছে, তদ্রƒপ উহা নামাযেরও স্থলাভিষিক্ত হতে পারে। তবে ক্বিয়াসের ভিত্তিতে নয়; বরং সতর্কতার দিক বিবেচনায় ফিদইয়ার হুকুমকে নামাযের দিকে স্থানান্তর করা হয়েছে। এই আশায় যে, মৃত ব্যক্তি যেইসব নামায ক্বাযা করেছে উহার পরিবর্তে এ ফিদইয়া মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফে যথেষ্ট হবে। নতুবা অন্ততপক্ষে ছদকার ছওয়াব তো সে পাবেই।
বস্তুতঃ হানাফী মাযহাবে নামাযের জন্য ফিদইয়া (কাফফারা) ওয়াজিব করা হয়েছে সতর্কতার দিক বিবেচনা করে, ক্বিয়াসের উপর ভিত্তি করে নয়। আর এক্ষেত্রে আমরা ফিদইয়া কবুল হওয়ার আশা পোষণ করি।
স্মরণীয় যে, ফিদইয়ার পরিমাণ হচ্ছে এক ফিতরা অর্থাৎ অর্ধ সা গম বা আটা অথবা তার মূল্য; যা বর্তমানে গ্রাম হিসেবে ১৬৫৭ গ্রাম প্রায়। তবে উত্তম হলো দুই কেজি পরিমাণ আটা বা তার মূল্য প্রদান করা।
উল্লেখ্য, ফরযের ক্বাযা আদায় করা ফরয এবং ওয়াজিবের ক্বাযা আদায় করা ওয়াজিব। তা নামায হোক কিংবা রোযা হোক। এ হিসেবে একদিনের রোযার জন্য একটি ফরয। আর একদিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জন্য পাঁচ ফরয এবং এক ওয়াজিব।
অতএব, কারো যদি পুরো একদিনের নামায ক্বাযা হয়ে যায়, এবং সে যদি তা আদায় না করে ইনতিকাল করে তাহলে তার কাফফারা বা ফিদইয়া বাবদ পাঁচ ফরয ও এক ওয়াজিবের জন্য মোট ছয় ফিতরা পরিমাণ আটা বা তার মূল্য গরীব মিসকীনদের দান করে দিতে হবে। অর্থাৎ ফরয ও ওয়াজিব প্রতি ওয়াক্ত নামাযের জন্য অর্ধ সা বা তার মূল্য অভাবগ্রস্তদেরকে প্রদান করা হচ্ছে পবিত্র শরীয়ত উনার নির্দেশ।
দলীলসমূহ: মুসলিম শরীফ, নাসায়ী শরীফ, মিশকাত শরীফ, তাফসীরে মাযহারী শরীফ, আযযিয়াদাত, নূরুল আনওয়ার, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, ফতওয়ায়ে শামী ইত্যাদি।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সুওয়াল- জাওয়াব
১৪ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সুওয়াল-জাওয়াব
১১ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: পুরুষ ও মহিলার নামাযের পার্থক্য
১৭ মার্চ, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সুওয়াল জাওয়াব: প্রসঙ্গ দেনমোহর
২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সুওয়াল: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইলমে গইব সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বার লোকেরা বিভিন্ন প্রকার চু-চেরা করে থাকে। নাউযুবিল্লাহ! এ বিষয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দলীল সহকারে জাওয়াব প্রদান করলে ঈমান-আক্বীদা হিফাযতে সহায়ক হবে।
২১ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সুওয়াল: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইলমে গইব সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বার লোকেরা বিভিন্ন প্রকার চু-চেরা করে থাকে। নাউযুবিল্লাহ! এ বিষয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দলীল সহকারে জাওয়াব প্রদান করলে ঈমান-আক্বীদা হিফাযতে সহায়ক হবে।
২০ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সুওয়াল-জাওয়াব
১০ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সুওয়াল-জাওয়াব
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সুওয়াল: কোন মাস ও দিনকে অশুভ ও কুলক্ষণে মনে করা এবং কোন রোগ-ব্যাধিকে ছোঁয়াচে বা সংক্রামক মনে করার ব্যাপারে সম্মানিত শরীয়তে কোন বিধি-নিষেধ আছে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত
১৮ নভেম্বর, ২০২৩ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
যাকাত
১১ নভেম্বর, ২০২৩ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সুওয়াল: মসজিদের অনেক ইমাম ও খতীবকে দেখা যায়, তারা দুআ করার সময় মহান আল্লাহ পাক উনাকে তুমি বলে সম্বোধন করে থাকে। এটা কতটুকু শুদ্ধ? পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে সঠিক ফায়ছালা জানিয়ে বাধিত করবেন।
২৬ অক্টোবর, ২০২৩ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)