ফতওয়া
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩)
, ০৭ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১২ খ্বমিস , ১৩৯২ শামসী সন , ১১ অক্টোবর , ২০২৪ খ্রি:, ২৫ আশ্বিন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) ফতওয়া বিভাগ

গোঁফ বা মোঁছের শরয়ী পরিমাপ ও আহকাম:
এখন প্রশ্ন হচ্ছে- পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে গোঁফ খাটো বা ছোট করার যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তার পরিমাণ কতটুকু? নিম্নে গোঁফ বা মোঁছের শরয়ী পরিমাপ ও তার আহকাম উল্লেখ করা হলো-
এ প্রসঙ্গে মিশকাত শরীফ উনার বিখ্যাত ফার্সী শরাহ আশয়াতুল লুময়াত, ১ম খ- ২২৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের দশটি সুন্নতের মধ্যে একটি হলো- মোঁছ বা গোঁফ কাটা। উপরের ঠোঁটের উপরিভাগে যে লোম বা কেশ উঠে, উহাকে মোঁছ বা গোঁফ বলে।
গ্রহণযোগ্য বা মুখতার মত হলো- মোঁছ বা গোঁফ খাটো বা ছোট করে রাখবে, উহা এরূপভাবে খাটো করে রাখবে, যেন ঠোঁটের প্রান্ত দেখা যায়। অর্থাৎ এ পরিমাণ খাটো করবে, যেন মোঁছের চিহ্ন পরিস্ফুটিত থাকে। আর মোঁছ সমর্úূণ মু-ন করে ফেলা মাকরূহ তাহরীমী।
উক্ত কিতাবের উক্ত স্থানে আরো উল্লেখ আছে যে, (পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত) ইহ্ফা শব্দের অর্থ হলো- খাটো করা, মোঁছ বা গোঁফ খাটো করার পরিমাণের ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। তবে হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মত হলো- মোঁছ বা গোঁফ চোখের ভ্রুর ন্যায় রাখবে।
বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রসিদ্ধ কিতাব মিরকাত শরীফের ১ম খ- ৩০১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-
(قص الشارب) قال ابن حجر فيسن احفائه حتى تبدو حمرة الصفة العليا ولا يحفه من اصله والامر باحفائه محمول على ما ذكر واخرج بقصه حلقه فهو مكروه وقيل حرام لانه مثلة
অর্থ: ইবনে হাজার রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, মোঁছ বা গোঁফ এ পরিমাণ খাটো করা সুন্নত, যাতে ঠোটের লালিমা প্রকাশ পায়। মোঁছ মূল থেকে মু-ন করবে না। মোঁছ খাট করার ব্যাপারে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে “ইহ্ফা” শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, যার অর্থ উপরে আলোচনা করা হয়েছে। অপর একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ক্বাচ্ছুন শব্দ এসেছে, এর অর্থও খাটো করা। যার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মোঁছ সম্পূর্ণ মু-ন করে ফেলা মাকরূহ তাহরীমী। কেউ কেউ হারামও বলেছেন। কেননা মোঁছ মু-ন করার কারণে (মোছলা) অর্থাৎ আকৃতি বিকৃতি হয়। ফিক্বাহ্র বিখ্যাত কিতাব ফতওয়ায়ে আলমগীরীতে উল্লেখ আছে যে-
وياخذ من شاربه حتى يصير مثل الحاجب وكذا فى الغياثية
অর্থ: চোখের ভ্রুর লোম পরিমাণ রেখে মোঁছ কেটে ফেলবে। অনুরূপ গিয়াছিয়াতে উল্লেখ আছে।
বাহরুর রায়েক ৮ম খ- ২০৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وينبغى للرجل ان ياخذ من شاربه حتى يوازى الطرف العليا من الشفة ويصير مثل الحاجب
অর্থ: পুরুষের জন্যে, উর্ধ্ব ওষ্ঠ প্রকাশ পায় এবং ভ্রুর লোম পরিমাণ রেখে মোঁছ কাটা উচিত।
তাহাবী শরীফ উনার ২য় খ- ৩৩৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
فالنظر على ذالك ان يكون كذالك حكم الشارب قصه حسن واحفائه احسن وافضل وهذا مذهت ابى حنيفة وابى يوسف ومحمد رحمهم الله تعالى
অর্থ: মোঁছ খাটো করার ব্যাপারে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার তাৎপর্য এই যে, মোঁছ খাটো করা উত্তম, আর কিছু বেশী খাটো করা অধিকতর ভাল ও উত্তম। এটাই হযরত ইমামে আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের মাযহাব বা মত।
গায়াতুল আওতার ৪র্থ খ- ১৩৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, মুজতাবা” নামক কিতাবে উলেখ আছে যে, মোঁছ মু-ন করা বিদয়াত। আর যারা মু-ন করা সুন্নত বলে, তাদের ক্বওল জঈফ বা দূর্বল। অর্থাৎ গ্রহণযোগ্য নয়।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, গ্রহণযোগ্য ও মুফ্তাবিহী মতানুসারে মোঁছ রাখার নিয়ম বা পদ্ধতি হলো- মোঁছ চোখের ভ্রুর ন্যায় খাটো রাখবে। মোঁছ সম্পূর্ণ চেছে ফেলা অধিকাংশের মতে মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ। আর কারো কারো মতে হারাম। (চলবে)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
অনুসরণীয় চার মাযহাব উনাদের ফতওয়া মুতাবিক
১৯ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (৩)
১৭ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে সম্মানিত কুরবানী মুবারক দেয়া প্রত্যেক উম্মতের জন্য ফরযে আইন (৫)
০৪ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চারটি মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (২)
০৩ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে সম্মানিত কুরবানী মুবারক দেয়া প্রত্যেক উম্মতের জন্য ফরযে আইন (৩)
০২ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে সম্মানিত কুরবানী মুবারক দেয়া প্রত্যেক উম্মতের জন্য ফরযে আইন (২)
০১ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে সম্মানিত কুরবানী মুবারক দেয়া প্রত্যেক উম্মতের জন্য ফরযে আইন (১)
৩১ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চারটি মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (১)
২৭ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে সম্মানিত কুরবানী মুবারক দেয়া প্রত্যেক উম্মতের জন্য ফরযে আইন (২৬)
২৬ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে সম্মানিত কুরবানী মুবারক দেয়া প্রত্যেক উম্মতের জন্য ফরযে আইন (২৫)
২৫ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে সম্মানিত কুরবানী মুবারক দেয়া প্রত্যেক উম্মতের জন্য ফরযে আইন (২৪)
২৪ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে সম্মানিত কুরবানী মুবারক দেয়া প্রত্যেক উম্মতের জন্য ফরযে আইন (২৩)
২৩ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)