ফতওয়া
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪২)
, ১৭ই রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২১ ছামিন, ১৩৯২ শামসী সন , ১৮ জানুয়ারী, ২০২৫ খ্রি:, ০৪ মাঘ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) ফতওয়া বিভাগ

মোঁছ মু-নকারীদের বক্তব্য খন্ডন
এখানে উল্লেখ্য যে, মোঁছ ছোট করে রাখা সুন্নত হওয়ার ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই, বরং সকলেই একমত। কিন্তু মোঁছ মু-ন করার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে, অধিকাংশের মতে মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ। আর কারো কারো মতে “মোছলা” বা আকৃতি-বিকৃতি হওয়ার কারণে মোঁছ মু-ন করা হারাম। আবার কেউ মোঁছ মু-ন করা জায়িযও বলেছেন, কিন্তু তাদের এ বক্তব্য যে গ্রহণযোগ্য নয়, পূর্বোক্ত আলোচনা দ্বারা তা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে। অর্থাৎ মোঁছ মু-ন করার দলীল জঈফ বা দূর্বল বিধায় তা অগ্রহণযোগ্য বা পরিত্যাজ্য।
এ প্রসঙ্গে দুররুল মোখতার কিতাবের বিখ্যাত শরাহ গায়াতুল আওতার কিতাবের মধ্যে উল্লেখ আছে যে-
مجتبی ميں ھے کہ مونچھوں کا مندھنا بدعت ھے اور قول ضعیف یہ ھے کہ سنت ھے.
অর্থ: “মোজতবা” নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, মোঁছ মু-ন করা বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ। আর যারা মোঁছ মু-ন করা সুন্নত বা জায়িয বলে, তাদের ক্বওল বা বক্তব্য জঈফ, অর্থাৎ গ্রহণযোগ্য নয়।
মোটকথা হলো- “মোখতার” বা গ্রহণযোগ্য মতে- মোঁছ ছোট ছোট করে ভুরুর ন্যায় রাখা সুন্নত। আর মোঁছ মু-ন বা সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করে ফেলা মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ।
গোঁফ বা মোঁছ ছোট করে রাখা সুন্নত ও মু-ন করা মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ হওয়ার অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীলসমূহ-
(১)
عَنْ حَضْرَتْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ انه كان يقلم اظفاره ويقص شاربه يوم الجمعة قبل ان يروح الى الجمعة
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জুমুয়ার দিন, জুমুয়ার নামায আদায় করতে যাওয়ার পূর্বে নিজ নখ মুবারক কাটতেন এবং মোঁছ মুবারক ছোট করতেন। (তাফসীরে আহকামুল কুরআন লিল জাসসাস, ১ম খ-, ৮২ পৃষ্ঠা)
(২)
وقال الليث- لا احب ان يحلق احد شاربه حتى يبدو الجلد واكره ولكن يقص الذى على طرف الشارب واكره ان يكون طويل الشارب
অর্থ: হযরত আবুল লাইছ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি পছন্দ করি না যে, কেউ তার মোঁছ এরূপভাবে মু-ন করবে, যাতে চামড়া প্রকাশ পায়, এরূপ করা আমি মাকরূহ মনে করি। বরং মোঁছের উপর থেকে ছোট করবে। অনুরূপ মোঁছ অধিক লম্বা রাখাও নিষিদ্ধ বা অপছন্দনীয়। (তাফসীরে আহকামুল কুরআন লিল জাসসাস ১ম খ-, ৮৩ পৃষ্ঠা)
(৩-৬)
عَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ لَمْ يَأْخُذْ مِنْ شَارِبِهِ فَلَيْسَ مِنَّا رواه احمد والنسائى والترمذى والنيل الاوطار وقال حديث صحيح
অর্থ: হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, যে ব্যক্তি তার মোঁছ ছোট করে না, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়। (আহমদ শরীফ, নাসাঈ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, নাইলুল আওতার, সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ)
(৭-১০)
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: من الفطرة قص الشارب.
অর্থ: হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন- “মোঁছ ছোট করা ফিৎরাতের অন্তর্ভুক্ত। (বুখারী শরীফ ২য় খ-, ৮৭৪ পৃষ্ঠা, অনুরূপ ফতহুল বারী, ওমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস সারীতে উল্লেখ আছে)
(১১-১৭)
عَنْ حَضْرَتْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الفطرة خمس اوخمس من الفطرة- الختان- والاستحداد ونتف الابط وتقليم الاظفار وقص الشارب.
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ফিৎরাত পাঁচটি অথবা পাঁচটি জিনিস বা আমল ফিৎরাতের অন্তর্ভুক্ত। খাতনা, নাভীর নীচের লোম পরিষ্কার করা, নখ কাটা, মোঁছ ছোট করা। (বুখারী শরীফ ২য় খ-, ৮৭৫ পৃষ্ঠা, অনুরূপ ফতহুল বারী, ওমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস সারী, সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, মুছান্নেফ ইবনে আব্দুর রাজ্জাক, তিরমিযী শরীফে উল্লেখ আছে)
(মাসিক আল বাইয়্যিনাত উনার ফতওয়া বিভাগ থেকে সংকলিত। )
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৫)
০৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৪)
০১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৩)
২৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৯)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৮)
১১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৭)
১০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৬)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫)
২৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৪)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৩)
১৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৯)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৮)
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)