ফতওয়া
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (৩৪)
, ২৬ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১৯ সাবি’, ১৩৯৩ শামসী সন , ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ০৩ পৌষ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) ফতওয়া বিভাগ
‘আত-তাক্বলীদু গাইরুশ্ শারয়ী তথা শরীয়ত বহির্ভূত অনুসরণ’ এর আলোচনা ও হুকুম:
التقليد غير الشرعى আত-তাকলীদু গাইরুশ্ শারয়ী তথা সম্মানিত শরীয়ত বহির্ভূত অনুসরণ: পবিত্র কুরআন মাজীদ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমাউল উম্মাহ ও পবিত্র ছহীহ ক্বিয়াস উনাদের দলীল-আদিল্লাহ উনাদের বিপরীতে নিজেদের খেয়াল-খুশি মতো শয়তান ও তাগুতী যাবতীয় বাতিল মত-পথ মেনে চলাকে ‘আত-তাকলীদু গাইরুশ শারয়ী তথা শরীয়ত বহির্ভূত অনুসরণ’ বলে। একে ‘তাকলীদুন নফ্স’ ও ‘তাকলীদুল হাওয়া’ তথা প্রবৃত্তির অনুসরণও বলা হয়ে থাকে।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের, হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ও হযরত ইমাম মুজতাহিদ-আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ফায়সালার বিপরীত অনুসরণই হলো ‘আত-তাকলীদু গাইরুশ শারয়ী তথা সম্মানিত শরীয়ত উনার বহির্ভূত অনুসরণ’।
অনুরূপভাবে: অভিশপ্ত ইবলীস-শয়তান, তাগুত, নফ্স, প্রবৃত্তি, খেয়াল-খুশি, কাফির, মুশরিক, মুরতাদ, মুনাফিক, যিন্দীক্ব, ইহুদী, নাছারা বা খৃষ্টান, মজূসী বা অগ্নীউপাসক, হুনূদ বা হিন্দু, বৌদ্ধ, ৭২ বাতিল ফিরক্বা, বিদ্য়াতী, গোমরাহ, পথভ্রষ্ট, ভন্ড, বেয়াদব, যাবতীয় বিধর্মী ও বদ দীনী ইত্যাদিদেরকে অনুসরণ করাই ‘আত-তাক্বলীদু গাইরুশ শারয়ী তথা সম্মানিত শরীয়ত উনার বহির্ভূত অনুসরণ’।
সম্মানিত শরীয়ত উনার বহির্ভূত অনুসরণ করা হারাম। সম্মানিত শরীয়ত উনার সমর্থিত অনুসরণ করা ফরযে আইন। কারণ, সম্মানিত শরীয়ত উনার বহির্ভূত অনুসরণ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। সম্মানিত শরীয়ত উনার বহির্ভূত অনুসরণ করা যে হারাম ও নাজায়িয এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মধ্যে যথেষ্ট আলোচনা উল্লেখ আছে। মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি উনার কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
(২৫১)
غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ.
অর্থ: আয় মহান আল্লাহ পাক! আমরা তাদের পথ চাই না, যারা গযবপ্রাপ্ত ও পথভ্রষ্ট হয়েছে। (পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)
নির্ভরযোগ্য বিশ্ববিখ্যাত সমস্ত তাফসীর উনাদের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে যে- ইহুদী, নাছারা, কাফির, মুশরিক, মুনাফিক, মুরতাদ, শয়তান, ইবলীস, তাগুত, যাবতীয় বেদীনী, বদ দীনী, বাতিল ৭২ ফিরক্বার অনুসারী ইত্যাদি লোকেরাই গযবপ্রাপ্ত ও পথভ্রষ্ট। নাঊযুবিল্লাহ! আর এদেরকে অনুসরণ করাই ‘আত-তাকলীদু গাইরুশ শারয়ী তথা সম্মানিত শরীয়ত উনার বহির্ভূত অনুসরণ’। যা হারাম ও নাজায়িয। ক্ষেত্র বিশেষে কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
(২৫২)
وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ اتَّبِعُوا مَا أَنْزَلَ اللَّهُ قَالُوا بَلْ نَتَّبِعُ مَا أَلْفَيْنَا عَلَيْهِ آبَاءَنَا أَوَلَوْ كَانَ آبَاؤُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ شَيْئًا وَلَا يَهْتَدُونَ.
অর্থ: যখন তাদেরকে বলা হয়, তোমরা সে হুকুমের আনুগত্য করো, যা মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি নাযিল করেছেন। তখন তারা বলে কখনো না, বরং আমরা তো সে বিষয়ের অনুসরণ করবো, যাতে আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে পেয়েছি। যদিও তাদের বাপ-দাদারা আক্বলমন্দ ছিলো না ও কিছুই জানতো না এবং হিদায়েতের উপরও ছিলো না। (পবিত্র সূরা বাক্বারাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭০)
অত্র পবিত্র আয়াতে কারীমায় যারা হিদায়েতপ্রাপ্ত ও আক্বলমন্দ নয় এবং জ্ঞানবান নয় তাদেরকে অনুসরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু যাঁরা হিদায়েতপ্রাপ্ত এবং বিচক্ষণ ইমাম-মুজতাহিদ উনাদেরকে তাক্বলীদ বা অনুসরণ করার ইঙ্গিত এই আয়াত শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্টভাবে বিদ্যমান। কাজেই যারা গোমরাহ ও অজ্ঞ তাদেরকে অনুসরণ করাই ‘আত-তাকলীদু গাইরুশ শারয়ী তথা সম্মানিত শরীয়ত উনার বহির্ভূত অনুসরণ’।
(২৫৩)
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِينٌ.
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমরা সম্পূর্ণরূপে দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে প্রবেশ করো। আর ইবলীস শয়তানের পথকে অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন। (পবিত্র সূরা বাক্বারাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২০৮)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইবলীস-শয়তানকে ও ইবলীস-শয়তানের যাবতীয় পথ ও পন্থাকে বর্জন করতে বলা হয়েছে। কারণ শয়তানের পথ অনুসরণ করাই হচ্ছে ‘আত-তাকলীদু গাইরুশ শারয়ী তথা সম্মানিত শরীয়ত বহির্ভূত অনুসরণ’।
(২৫৪)
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا إِلَى مَا أَنْزَلَ اللَّهُ وَإِلَى الرَّسُولِ قَالُوا حَسْبُنَا مَا وَجَدْنَا عَلَيْهِ آبَاءَنَا أَوَلَوْ كَانَ آبَاؤُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ شَيْئًا وَلَا يَهْتَدُونَ.
অর্থ: যখন তাদেরকে (কাফিরদেরকে) বলা হয়, তোমরা মহান আল্লাহ পাক তিনি যা নাযিল করেছেন উহার দিকে এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে আসো, তখন তারা বলে- আমাদের জন্য তাই যথেষ্ট যার উপর আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে পেয়েছি। যদিও তাদের বাপ-দাদারা কিছুই জানতো না এবং হিদায়েতের উপর ছিলো না। (পবিত্র সূরা মায়িদাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৪)
অত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে অজ্ঞ ও গোমরাহ বাপ-দাদা বা পূর্বপুরুষদেরকে অনুসরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। আরো বলা হয়েছে যে, এ খাছলতটি মূলত: কাফির ও মুনাফিকদের। এমন অনুসরণই হলো ‘আত-তাকলীদু গাইরুশ শারয়ী তথা সম্মানিত শরীয়ত উনার বহির্ভূত অনুসরণ’।
(মাসিক আল বাইয়্যিনাত থেকে সংকলিত।) (চলবে)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (৩৩)
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (৩২)
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (৩১)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (৩০)
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (২৯)
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (২৮)
২০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (২৭)
১৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (২৬)
১৩ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (২৫)
১০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (২৪)
০৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (২৩)
০৩ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয (২২)
৩০ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












