ফতওয়া
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৪)
, ০২রা শা’বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৫ তাসি’, ১৩৯২ শামসী সন , ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রি:, ১৯ মাঘ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) ফতওয়া বিভাগ

গোঁফ বা মোঁছ ছোট করে রাখা সুন্নত ও মু-ন করা মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ হওয়ার অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীলসমূহ-
(২২)
واما قص الشارب فسنة ايضا ويستحب واما حد مايقصه- فالمختار انه يقص حتى يبدو طرف الشفة ولا يحفه من اصله واما رواية احفوا الشوارب" فمعناها احفوا ما طال على الشفتين.
অর্থ: মোঁছ ছোট করা সুন্নত ও মুস্তাহাব। গ্রহণযোগ্য বা মুখতার বর্ণনা মতে মোঁছ ছোট করার পরিমাণ বা সীমারেখা হলো- মোঁছ এরূপভাবে খাটো বা ছোট করবে, যেন ঠোঁটের কিনারা প্রকাশ পায়। মোঁছ মূল (গোড়া) থেকে তুলবে না অর্থাৎ মু-ন করবে না। আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত- قص الشارب উনার অর্থ হলো, উভয় ঠোঁটের উপরের লম্বা মোঁছগুলো কেটে ছোট করা। (শরহুল মুসলিম লিন নববী, ২য় খ-, ১৪৯ পৃষ্ঠা)
(২৩)
وقص الشارب وفى هذا الباب خلاف- فقال الطحاوى ذهب قوم من اهل المدينة الى ان قص الشارب هوا المختا وعلى الاحفاء ...... وسعيد بن المسيب وعروة بن الزبير وجعفر بن الزبير- عبيد الله بن عبد الله بن عتبة وابا بكر بن عبد الرحمن بن الحارث فانهم قالوا المستحب هو ان يختار قص الشارب على احفانه واليه ذهب حميد بن هلال والحسن البصرى ومحمد بن سيرين وعطاء بن ابى رباح- وهو مذهب مالك ايضا وقال عياض ذهب كثير من السلف الى منع الحلق والاستنصال فى الشارب وهو مذهب مالك ايضا وكان يرى حلقه مثلة
অর্থ: মোঁছ ছোট করার ব্যাপারে ইখতিলাফ বা মতবিরোধ রয়েছে। ইমাম তহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, পবিত্র মদীনা শরীফবাসীগণের একদল উনাদের মতে- মু-ন করার চেয়ে ছোট করাটাই গ্রহণযোগ্য। ........ আর হযরত সাঈদ ইবনে মুসায়্যিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি, হযরত উরওয়া ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি, হযরত জা’ফর ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি, হযরত উবায়দুল্লাহ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে উতবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ও হযরত আবূ বকর ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে হারিছ উনারা বলেন- মোঁছ মু-ন না করে ছোট করাটাই মুস্তাহাব।
হযরত হুমাইদ ইবনে হিলাল রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মুহম্মদ ইবনে সীরীন রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত আতা ইবনে রিবাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা এটাই গ্রহণ করেছেন। এটা হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারও মাযহাব বা অভিমত। আর ক্বাজী আয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, অধিকাংশ সলফে ছালিহীনগণ মোঁছ হলক্ব বা মু-ন করার বিপক্ষে মত পেশ করেছেন। ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাযহাব এটাই। উনার মতে মোঁছ মু-ন করা “মোছলা” বা আকৃতি বিকৃতি করার শামিল। (উমদাতুল ক্বারী শরহে ছহীহ বুখারী ২২তম খ-, ৪৪ পৃষ্ঠা)
(২৪)
وقال ابن القاسم عن مالك- احفاء الشارب عندى مثلة- والمراد بالحديث المبالغة فى اخذ الشارب حتى يبدو حرف الشفين وقال اشهب سألت مالكا عمن يحفى شاربه- فقال ارى ان يوجع ضربا وقال لمن يحلق شاربه هذه بدعة ظهرت فى الناس.
অর্থ: হযরত ইবনুল ক্বাসিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করে বলেন যে, মোঁছ মু-ন করা আমার নিকট “মোছলা” বা আকৃতি-বিকৃতি করার শামিল। পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- মোঁছ এত অধিক ছোট করবে, যেন ঠোঁটের প্রান্ত প্রকাশ পায়। হযরত আশহাব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম- যারা নিজ মোঁছ মু-ন করে, ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার মতে তারা শাস্তির উপযুক্ত। তিনি আরো বলেন, নিজ মোঁছ মু-ন করা বিদয়াত, যা মানুষের মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে। (ফতহুল বারী শরহে ছহীহ বুখারী ১০ম খ-, ৩৪৭ পৃষ্ঠা)
(২৫)
وقد اختلف الناس فى حد مايقص من الشارب وقد ذهب كثير من السلف الى استئصاله وحلقه لظاهر قوله. (احفوا وانهكوا) وهو قول الكوفيين- وذهب كثير منهم الى منع الحلق والاستتصال واليه ذهب مالك وكان يرى تأديب من حلقه وروى عنه ابن القاسم انه قال احفاء الشارب مثلة- وقال النووى المختار انه يقص حتى يبدو طرف الشفة ولا يحفيه من اصله قال واما رواية. (احفوا الشوارب) فمعناه احفوا ما طال عن الشفتين.
অর্থ: মোঁছ ছোট করার ব্যাপারে ইমামগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। সলফে ছালেহীনগণের অনেকে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা احفوا ও انهكوا -উনার উপর ভিত্তি করে মোঁছ মু-ন করার মত ব্যক্ত করেছেন, আর এটা মূলতঃ কুফীগণের বক্তব্য। আর সলফে ছালেহীনগণের অধিকাংশের মত মোঁছ মু-ন করার বিপক্ষে। ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও উক্ত মত সমর্থন করেছেন। উনার মতে- মোঁছ মু-নকারী তা’দীবের উপযুক্ত। ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে ইবনে কাসিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, মোঁছ মু-ন করা “মোছলা” উনার অন্তর্ভুক্ত। ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, মুখতার বা গ্রহণযোগ্য বর্ণনা হলো- মোঁছ এতটুকু ছোট করবে, যেন ঠোঁটের প্রান্ত প্রকাশ পায়, মোঁছ মূল থেকে দূর করবে না অর্থাৎ মু-ন করবে না। তিনি আরো বলেন, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত “ইহ্ফা” শব্দের অর্থ হলো- “উভয় ঠোঁটের উপরিস্থ লম্বা মোঁছগুলো ভালরূপে ছোট করা” (নাইলুল আওতার ১ম খ-, ১৩০ পৃষ্ঠা)
(মাসিক আল বাইয়্যিনাত উনার ফতওয়া বিভাগ থেকে সংকলিত।)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৫)
০৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৩)
২৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪২)
১৮ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৯)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৮)
১১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৭)
১০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৬)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫)
২৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৪)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৩)
১৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৯)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৮)
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)