ফতওয়া
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭)
, ৬ই রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ৮ আশির, ১৩৯২ শামসী সন , ৭ মার্চ, ২০২৫ খ্রি:, ২০ ফালগুন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) ফতওয়া বিভাগ

গোঁফ বা মোঁছ ছোট করে রাখা সুন্নত ও মু-ন করা মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ হওয়ার অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীলসমূহ-
(৪২)
مو نچھین کترو انے کی دلیل یہ ھے کہ حضرت عمر بن الخطاب علیہ السلام کے فرزند نے آ نحضرت صلی اللہ علیہ وسلم سے روایت کیا ھے کہ آپ صلی اللہ علیہ وسلم نے فرمایا- "مرنچھین کطو آؤ اور دارھی چھورو"-
حضرت ابو ھریۃ رضی اللہ تعالی عنہ فرماتے ھین کہ انحضرت صلی اللہ علیہ وسلم نے فرمایا- مرنچھین کطو اؤ اور دارھی چھورو-
ان دونون روایتون کے الفاظ ایک سے ھین اور انکا مطلب یہ ھے کہ بالون کو جرون کے پاس سے قینچی کے ذریعہ کتراؤ- انھین استرے سے موندنا مکروہ ھے-
کیونکہ حضرت عبد اللہ بن عمر رضی اللہ تعال عنہ کی روایت ھے کہ- آنحضرت صلی اللہ علیہ وسلم نے فرمایا- جو شخص اپنی مونچھین مونداتا ھے وہ ھم مین سے نھین-
مونچھین موندنے سے خلقت بدل حاتی ھے- منہ کی آبرو اور اسکا حسن چھن جاتا ھے- منہ کی آبرو اور اسکا حسن چھن جاتا ھے - بالون کی جرین نمایا رکھی جائین- تو منہ کے حسن اور زینت فاتم رھتی ھے- یہ معتبر روایت ھے کہ اصحاب کرام اپنی مونچین کاطا کرتے نھے-
অর্থ: মোঁছ ছোট করার দলীল এই যে, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার ছেলে হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মোঁছ কাটো (ছোট করো), আর দাড়ি ছাড়ো (লম্বা করো)।
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মোঁছ ছোট করো, দাড়ি লম্বা করো।
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের শব্দসমূহ একই রকম আর উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার উদ্দেশ্য এই যে, “মোঁছের লোমসমূহ গোড়া থেকে কেঁচি দ্বারা ছোট করো। মোঁছ মূল থেকে মু-ন করা মাকরূহ তাহরীমী।
কেননা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যে ব্যক্তি নিজ মোঁছ মু-ন করে, সে আমার দলভুক্ত নয়।
মোঁছ মু-ন করার কারণে আকৃতির বিকৃতি ঘটে, চেহারার সৌন্দর্য্য দূরীভূত হয়। এরূপভাবে মোঁছ কাটা উচিত যেন মোঁছের চিহ্ন পরিস্ফুটিত থাকে, তবে চেহারার সৌন্দর্য্য ও উজ্জলতা অবশিষ্ট থাকবে। গ্রহণযোগ্য বা নির্ভরযোগ্য বর্ণনা এই যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা মোঁছ কেটে ছোট করে রাখতেন (মু-ন করতেন না)। (গুনিয়াতুত তালেবীন লি শায়েখ আব্দুল কাদের জ্বীলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ৭৮ পৃষ্ঠা)
সুতরাং সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, মোঁছ বা গোঁফ ছোট ছোট করে ভুরুর ন্যায় রাখা সুন্নত। আর মোঁছ মু-ন করা মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ। এটাই অধিক গ্রহণযোগ্য বা “মোখতার” মত। এর বিপরীত কোন মতই গ্রহণযোগ্য নয়।
উপসংহার:
উপরোক্ত অকাট্য নির্ভরযোগ্য বিশ্ববিখ্যাত ও গ্রহণযোগ্য তাফসীর, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহের দলীলের ভিত্তিতে এটা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে-
১। একমুষ্ঠির কমে দাড়ি কাটা হারাম। কারণ দাড়ি কাটার কারণে আকৃতির বিকৃতি ঘটে, বিধর্মী বা বিজাতীয়দের অনুসরণ হয়। উপরন্তু সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ মুবারক অমান্য ও শয়তানের নির্দেশ মান্য করা হয়।
২। কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ি রাখা ফরয/ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। কারণ হারাম থেকে বেঁচে থাকা ফরয/ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। এ ব্যাপারে সকলেই একমত।
৩। এক মুষ্ঠির কমে দাড়ি কর্তন বা মু-নকারী ফাসিক, সাধারণতঃ ফাসিকের পিছনে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী।
৪। সীনাপোর দাড়ি রাখা সুন্নত, দাড়ি সীনা অতিক্রম করা আহমকীর লক্ষণ।
৫। নীম দাড়িও দাড়ির অন্তর্ভুক্ত, তা কাটাও বিদয়াত ও মাকরূহ তাহরীমী।
৬। মোঁছ বা গোঁফ ছোট ছোট করে ভ্রুর ন্যায় রাখতে হবে। মোঁছ অধিক লম্বা রাখা যেরূপ নাজায়িয, তদ্রুপ সম্পূর্ণ চেছে ফেলাও মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াত, কারো কারো মতে হারাম।
৭। মোঁছ ভিজা পানি পান করা সম্পূর্ণ জায়েজ।
৮। মেন্দী দ্বারা খেযাব ব্যবহার করা সুন্নতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম। তবে কালো রংয়ের খেযাব (যা ব্যবহার করলে প্রলেপ পড়ে না) ব্যবহার করা মাকরূহ তাহরীমী। আর যে কালো রংয়ের খেযাব ব্যবহার করলে নেইল পলিশের ন্যায় প্রলেপ পড়ে, উহা ব্যবহার করা হারাম। আমাদের দেশের কালো খেযাবগুলো এ ধরনের খেযাবের অন্তর্ভুক্ত।
৯। দাড়ি নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা কুফরীর নামান্তর।
১০। মোখতার বা গ্রহণযোগ্য মতে মোঁছ মু-ন করা মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ আর মোঁছ ছোট ছোট করে ভুরুর ন্যায় রাখা সুন্নত।
১১। নির্ভরযোগ্য বর্ণনা মতে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও ইমাম-মুজতাহিদ উনারা কেউ কেউ নিজ মোঁছ ছোট করে রাখতেন, আর কেউ কেউ অধিক ছোট করে রাখতেন। মূলকথা হলো- কেউ মোঁছ মু-ন করতেন না।
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে উক্ত ফতওয়া মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করার তৌফিক দান করুন। আমীন।
(মাসিক আল বাইয়্যিনাত উনার ফতওয়া বিভাগ থেকে সংকলিত। ) (সমাপ্ত)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৬)
২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৫)
০৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৪)
০১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৩)
২৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪২)
১৮ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৯)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৮)
১১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৭)
১০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৬)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫)
২৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৪)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৩)
১৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)